দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৫ জানুয়ারি: দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষের মতামত এবং প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে খুব দ্রুত জেলা শহর মেদিনীপুরকে যানজট-মুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানালেন মেদিনীপুরের নবনির্বাচিত বিধায়ক সুজয় হাজরা। প্রয়োজনে একটি সর্বদলীয় বৈঠকের আয়োজনও করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি। বিধায়ক বা জনপ্রতিনিধি হিসেবে সেই বৈঠকে রাজনৈতিক মতপার্থক্য দূরে সরিয়ে সকলকেই এগিয়ে এসে নিজেদের মতামত বা পরামর্শ তুলে ধরার আহ্বানও জানাবেন বলে জানিয়েছেন সুজয়। ঐতিহাসিক মেদিনীপুর শহরকে যানজট-মুক্ত করতে রবিবার এমনই পরিকল্পনার কথা শুনিয়েছেন মেদিনীপুরের নবনির্বাচিত বিধায়ক।
রবিবার তিনি স্পষ্টভাবেই জানিয়েছেন, “এই শহর আমাদের সকলের। আমি নিজে বড় হয়েছি এবং বসবাস করছি এই শহরে। প্রতিমুহূর্তে আমি স্কুটি নিয়ে যাতায়াত করি শহরের বিভিন্ন রাস্তায়। আমি দেখেছি শহরবাসীকে প্রতিনিয়ত কিভাবে যানজটের মুখোমুখি হতে হয়। দিনদিন ফুটপাথ দখল হচ্ছে, রাস্তার ছোট হচ্ছে বা সংকীর্ণ হচ্ছে। এক্ষেত্রে শহরবাসীর যে অভিযোগ, তা একশো শতাংশ সঠিক। আমি তাঁদের দাবিকে সমর্থন জানাই। এই শহরকে যানজট-মুক্ত করতেই হবে। এজন্য দলমত নির্বিশেষে সকলকেই এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই। খুব দ্রুত সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, পৌর প্রতিনিধি, সচেতন শহরবাসী এবং প্রশাসনের আধিকারিকদের নিয়ে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করব। সেখানে সকলেই তাঁদের মূল্যবান মতামত তুলে ধরবেন।”
শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা এবং ফুটপাথ দখল করে দোকান, অবৈধ টোটোর দাপাদাপি- প্রভৃতি বিষয়ে প্রতিনিয়ত তাঁর কাছে অভিযোগ আসছে বলেও এদিন জানিয়েছেন মেদিনীপুরের নবনির্বাচিত বিধায়ক তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা। এ নিয়ে তিনি বলেন, “বিষয়টি যথেষ্ট উদ্বেগের। শহরবাসী এটা ভালোভাবে নিচ্ছেন না! ১০০ জন শহরবাসীর মধ্যে ৯৯ জনই এই যানজট নিয়ে অতিষ্ঠ!” যানজট সমস্যার সমাধান করতে খুব দ্রুত তিনি সমর্থক ভূমিকা গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন মেদিনীপুরের নবনির্বাচিত বিধায়ক সুজয় হাজরা। ফুটপাথ দখল থেকে অবৈধ টোটোর দাপাদাপি, এসবকিছু নিয়ে তৃণমূলকে কটাক্ষ করলেও, সর্বদলীয় বৈঠক হলে নিজেদের পরামর্শ তুলে ধরবেন বলে জানিয়েছেন সিপিআইএম, বিজেপি ও কংগ্রেসের নেতৃত্বরা। জেলা বিজেপি-র মুখপাত্র অরূপ দাস বলেন, “শহরের স্বার্থে যে কোন গঠনমূলক বা উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে বিজেপি সব সময় সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। কিন্তু, সেটা যেন লোক দেখানো না হয়! এর আগে মেদিনীপুর পৌরসভার দায়িত্ব নেওয়ার পরই পৌরপ্রধান সৌমেন খানও সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছিলেন শহরের সৌন্দর্যায়ন নিয়ে মতামত নেওয়ার জন্য। সেখানে আমরা মতামত তুলে ধরেছিলাম। কিচ্ছু লাভ হয়নি! উল্টে আমরা দেখেছি, প্রতিদিন মেদিনীপুর শহরের ফুটপাত কিভাবে দখল হয়ে যাচ্ছে। অবৈধ টোটোর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। টোটোর আঘাতে মানুষ জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটছে। হাসপাতাল রোডের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলিতে সবসময় যানজট। অ্যাম্বুলেন্সকেও দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। যেখানে-সেখানে টোটো দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। আর তৃণমূলের নেতারা কাটমানি খেতেই ব্যস্ত! সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হলে, আমরা নিশ্চয়ই আমাদের গঠনমূলক পরামর্শ দেব। কারণ, শিক্ষা-সংস্কৃতি- স্বাধীনতা সংগ্রামের পীঠস্থান এই মেদিনীপুর শহর আমাদের সকলের।” যুব কংগ্রেসের জেলা সভাপতি ও মেদিনীপুর পৌরসভার কাউন্সিলর মহম্মদ সাইফুল বলেন, “শহরের স্বার্থে সত্যিই যদি এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়, আমরা স্বাগত জানাব। আমাদের পরামর্শ বা মতামত তুলে ধরতেও আপত্তি নেই। তবে তা কার্যকর হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় আছে।” সিপিআইএমের মেদিনীপুর শহর পূর্ব এরিয়া কমিটির সদস্য সুব্রত চক্রবর্তী বলেন, “সত্যিই কি সর্বদলীয় বৈঠক হবে? হলে স্বাগত। আমরা সকলেই চাই শহর মেদিনীপুর যানজট-মুক্ত হোক। কিন্তু, মেদিনীপুর শহরে অবৈধ টোটোর দাপাদাপিই বলুন বা ফুটপাথ দখল হয়ে যাওয়া, এতো তৃণমূল নেতাদের মদতেই হয়েছে! কাজেই বিধায়ক কতটা কি করতে পারবেন, আমাদের সংশয় আছে।” যদিও, মেদিনীপুরের নবনির্বাচিত বিধায়ক সুজয় হাজরা যে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন, তা এদিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন।