মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৬ জুলাই: দফায় দফায় বৃষ্টি মাথায় নিয়েই দীর্ঘক্ষণ রাস্তার উপর বসে থাকলেন ‘ঐতিহাসিক’ মেদিনীপুর শহরের ইতিহাস বিজড়িত মেদিনীপুর কলেজ (স্বশাসিত)-র অধ্যাপক-অধ্যাপিকারা! একই ‘পথে’, তাঁদের পাশেই ‘অবস্থানে’ বসেছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামের ‘আঁতুড়ঘর’ তথা অত্যাচারী ব্রিটিশ শাসক পেডি হত্যার ঐতিহাসিক-স্থল মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুল (হেরিটেজ)-র শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। এ লড়াই ‘মান’ বাঁচানোর, ঐতিহাসিক দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্মুখস্থল ‘সুন্দর’ রাখার! তাই, বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষকদের দাবি, কলেজ-কলেজিয়েটের সামনের রাস্তা আর ‘দখল’ করতে দেওয়া হবেনা হকার তথা ফুটপাথ ব্যবসায়ীদের। উল্টোদিকে, ‘পুনর্বাসন’ নিয়ে মেদিনীপুর শহরের ডি.আই অফিসের গলিতে চলে যাওয়া হকাররা শুক্রবার সকাল থেকে পুনরায় ফিরতে শুরু করেন কলেজ রোডে। তাঁদের ‘আবদার’, ওখানে ব্যবসা চলছে না, ক্ষতি হচ্ছে প্রতিদিনই! তাই, আগের মতোই মেদিনীপুর কলেজ রোডের ফুটপাথেই তাঁদের বসতে দিতে হবে। এরপর, কলেজ-কলেজিয়েট কর্তৃপক্ষের প্রতিবাদে এবং পৌরসভা ও প্রশাসনের ‘বাধা’ পেয়ে তাঁরাও (হকাররাও) শুক্রবার দুপুর থেকে পাল্টা পথ অবরোধ শুরু করেন। সন্ধ্যা নাগাদ পৌরপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকের পর শিক্ষকরা ‘অবরোধ’ তুলে নিলেও, ‘আমরণ অনশন’ চালিয়ে যান হকাররা!

thebengalpost.net
শিক্ষকদের অবরোধে ফিরে যেতে হল ছাত্র-ছাত্রীদেরও:

প্রসঙ্গত, শুক্রবার দুপুরে মেদিনীপুর কলেজ রোডের এক প্রান্তে শিক্ষকরা, অন্য প্রান্তে হকাররা- ‘অবরোধ’ শুরু করেন দু’পক্ষই। অ্যাম্বুলেন্স বাদে সমস্ত গাড়িকেই ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে পৌঁছন পৌরপ্রধান সৌমেন খান সহ মেদিনীপুর পৌরসভার কাউন্সিলররা। কিন্তু, হকারদের ‘অনড়’ মনোভাবে রফাসূত্র বেরোনো দূরের কথা, বিকেল থেকে নিজেদের দাবিতে ‘আমরণ অনশন’ শুরু করেন তাঁরা। সন্ধ্যা নাগাদ পৌরপ্রধান সৌমেন খানের সঙ্গে বৈঠক করার পর অবশ্য নিজেদের ‘অবস্থান-বিক্ষোভ’ তুলে নেন শিক্ষকরা। তবে, আমরণ অনশন চালিয়ে যান হকাররা। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সপ্তাহ তিনেক আগেই মেদিনীপুর কলেজ এবং মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলের সামনের রাস্তা থেকে হকার বা ফুটপাথ ব্যবসায়ীদের সরিয়ে ‘পুনর্বাসন’ দেওয়া হয়েছিল মেদিনীপুর কলেজের ঠিক উল্টোদিকের ডি.আই অফিসের গলিতে। কিন্তু, সেখানে তাঁদের ব্যবসা চলছে না, ক্ষতি হচ্ছে- এমনই দাবি করে শুক্রবার সকাল থেকে ফের মেদিনীপুর কলেজ ও কলেজিয়েট স্কুলের সামনের রাস্তা দখল করা শুরু করেন ওই হকার বা দোকানদাররা। এরই প্রতিবাদে শুক্রবার বেলা ১২-টা থেকে মেদিনীপুর কলেজ রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন মেদিনীপুর কলেজ এবং মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মীরা। উপস্থিত ছিলেন স্বয়ং মেদিনীপুর কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ড. সত্যরঞ্জন ঘোষ, মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা হিমানী পড়িয়া সহ সকল অধ্যাপক-অধ্যাপিকা ও শিক্ষক-শিক্ষিকারা। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই প্রায় সন্ধ্যা পর্যন্ত ‘অবরোধ’ বা ‘অবস্থান-বিক্ষোভ’ চালিয়ে যান দু’পক্ষই। ঐতিহাসিক মেদিনীপুর শহরে ‘বেনজির’ এই ঘটনা ঘিরে শুক্রবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা অবধি মেদিনীপুর কলেজ-কলেজিয়েট সংলগ্ন রাস্তায় ব্যাপক উত্তেজনাও তৈরী হয় সাময়িক সময়ের জন্য।

thebengalpost.net
দুর্যোগ মাথায় নিয়েই অবরোধ:

এই বিষয়ে মহকুমাশাসক মধুমিতা মুখার্জি শুক্রবার বিকেলে জানান, “ঐতিহাসিক এই দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনের রাস্তায় এভাবে জবরদখল করতে আর দেওয়া হবে না। ওঁদের মতামত নিয়েই পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, কিছু হকার এদিন দুষ্কৃতীর মত আচরণ করেছেন। পুলিশকে বলা হয়েছে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে।” অপরদিকে, জেলা তৃণমূলের সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, “অবিলম্বে এই বিষয়ে সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করা উচিত পৌরসভা ও প্রশাসনের।” সর্বদলীয় বৈঠকের দাবি করেছেন জেলা বিজেপির মুখপাত্র অরূপ দাস থেকে সিপিআইএমের এরিয়া কমিটির সম্পাদক কুন্দন গোপও। সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক হলে আপত্তি নেই মেদিনীপুর কলেজ এবং মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুল কর্তৃপক্ষেরও। হকাররাও নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরার জন্য বৈঠক চেয়েছেন। তবে, একইসঙ্গে তাঁদের এও দাবি, মেদিনীপুর পৌরসভা এবং মহকুমাপ্রশাসনের বিমাতৃসুলভ আচরণ বা পক্ষপাতিত্ব মেনে নেওয়া হবেনা! মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলের সামনের ফুটপাথ দখল করে এখনও যে সমস্ত ব্যবসায়ীরা বসে রয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। শহরের অন্য কোনও ফুটপাথেও ‘হাত’ দেওয়ার সাহস নেই পৌরসভা বা প্রশাসনের! শুধুমাত্র তাঁদের ক্ষেত্রেই কেন ‘অনড়’ মনোভাব দেখানো হচ্ছে? যদিও, পৌরপ্রধান জানিয়েছেন, “সব ক্ষেত্রেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

thebengalpost.net
আমরণ অনশন হকারদেরও: