দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৮ আগস্ট: বিশ্ব আদিবাসী দিবস উপলক্ষে আগামীকাল অর্থাৎ শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঝাড়গ্রামের সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকেই জেলার উন্নয়নে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার প্রকল্প উদ্বোধন ও শিলান্যাস করার কথা তাঁর। আবহাওয়া অনুকূল না থাকায়, হেলিকপ্টারের পরিবর্তে বৃহস্পতিবার বিকেলে সড়ক পথেই ঝাড়গ্রাম রওনা হয়েছেন তিনি। বিকেল সাড়ে ৩টা-৪টা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী পশ্চিম মেদিনীপুরের রূপনারায়ণপুর, চৌরঙ্গী হয়ে ঝাড়গ্রাম রওনা দেন। রূপনারায়ণপুর এলাকায় মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর জন্য উপস্থিত ছিলেন মেদনীপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি সুজয় হাজরা। তাঁর সঙ্গে ছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পরিষদের সভাধিপতি প্রতিভা মাইতি, খড়্গপুরের পৌরপ্রধান কল্যাণী ঘোষ, তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের জেলা সভাপতি গোপাল খাটুয়া, হেমা চৌবে সহ অসংখ্য দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা। বৃষ্টিস্নাত ৬নং (বা, ১৬নং) জাতীয় সড়ক ধরে এগিয়ে যাচ্ছিল মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়। সেই সময়ই রাস্তার পাশে জেলা সভাপতি সুজয়-কে দেখে নিজের গাড়ি থামানোর নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপরই, ডেকে নেন সুজয়কে। বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন তাঁর সাথে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সকলকে একসাথে নিয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো। সুজয় ছাড়াও কল্যাণী ও প্রতিভার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। দু’জনকেই ‘ভালোভাবে’ কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। অতীত স্মৃতি (পড়ুন, উত্তরা-স্মৃতি) মনে রেখেই, প্রতিভাকে নাকি মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “ভালোভাবে জেলা পরিষদের কাজ কর। কোনো অভিযোগ যেন না আসে।” কল্যাণীকেও খড়্গপুরে ভালোভাবে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
এই বিষয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে মেদিনীপুরে সুজয় জানান, “বিশেষ কোন উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা যাইনি। আমাদের জেলার উপর দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যাচ্ছেন, স্বাভাবিক ভাবেই তাঁকে স্বাগত জানানোর জন্য জেলা সভাপতি হিসেবে আমি উপস্থিত ছিলাম। আমার সঙ্গে ছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি, খড়্গপুরের পৌরপ্রধান সহ অন্যান্য দলীয় নেতৃত্ব ও কর্মীরা। তবে, উনি যে আমাদের দেখতে পেয়েই দাঁড়িয়ে গিয়েছেন এবং কাছে ডেকে কথা বলেছেন এতেই আমরা ধন্য! মুখ্যমন্ত্রী আমাদের সকলের উদ্দেশ্যেই আরও ভালোভাবে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন।” রূপনারায়ণপুর পেরিয়ে, চৌরঙ্গীর কাছাকাছি ফের একবার মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় থমকায়। সেখানে দাঁড়িয়েছিলেন মেদিনীপুরের পৌরপ্রধান সৌমেন খান, জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক গোপাল সাহা, রাজ্য সম্পাদক আশিস চক্রবর্তী প্রমুখ। গোপাল সাহাকে উদ্দেশ্য করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “গোপাল, তোদের (মেদিনীপুরের) চেয়ারম্যানকে ডাক।” মেদিনীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন খান কাছে আসতেই, মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, “সব ঠিকঠাক চলছে তো? কোথাও কোনও অসুবিধা হচ্ছেনা তো?” সৌমেন জানান, “হ্যাঁ দিদি সব ঠিকঠাক চলছে।” জেলা তৃণমূলের এক নেতা বলেন, মেদিনীপুরে যে দলের দু’টি গোষ্ঠী (সুজয় গোষ্ঠী ও জুন গোষ্ঠী) তা বেশ ভালোভাবেই জানেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন তাই জেলা সভাপতি সুজয়ের সাথে কথা বলার সাথে সাথেই, জুন-গোষ্ঠীর সৌমেনের কাছ থেকেও ‘ভালোমন্দ’ খোঁজ নিতে ভোলেননি মমতা!
এরই মধ্যে আবার চৌরঙ্গীর মোড়ে মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় একটু স্লো হওয়ার সাথে সাথেই খড়্গপুরের প্রাক্তন পৌরপ্রধান তথা MKDA-র অন্যতম ভাইস-চেয়ারম্যান প্রদীপ সরকার মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা কর্মীর হাতে বেশ কিছু কাগজপত্র ভর্তি খাম দিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন খড়্গপুরের আরেক নেতা তথা জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি দেবাশিস চৌধুরীও। উল্লেখ্য যে, রেল শহরের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে প্রদীপ, দেবাশিস (মুনমুন)-রা জুন গোষ্ঠীতে ভিড়েছেন বলে জানা যায়। সুজয়ের সঙ্গে আছেন পৌরপ্রধান কল্যাণী ঘোষ, উপ-পৌরপ্রধান তৈমুর আলি খান, হিন্দি সেলের নেতা রবিশঙ্কর পাণ্ডে, শ্রমিক নেতা গোপাল খাটুয়ারা। স্বাভাবিকভাবেই রহস্য দানা বাঁধছে প্রদীপ-দেবাশিসদের এই চিঠি ঘিরে! এই বিষয়ে প্রদীপ সরকারের অবশ্য কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ কল্যাণী, তৈমুররাও। পৌরপ্রধান কল্যাণী ঘোষ বলেন, “উনি (প্রদীপ সরকার) কি দিয়েছেন, আমি কি করে বলব? ওঁকেই জিজ্ঞেস করুন। তবে, মুখ্যমন্ত্রী ভালো করেই জানেন খড়্গপুর আগে কেমন চলছিল, এখন কেমন চলছে। আরও ভালোভাবে চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আজ আমাকে উৎসাহিত করেছেন।”