দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২০ অক্টোবর: ২০২১ সালের ১৬ আগস্ট। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের ‘খেলা দিবস’-র দিন বিকেল ঠিক ৪টা নাগাদ মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি হিসেবে সুজয় হাজরা-র নাম ঘোষিত হয়। অবাক হয়েছিলেন তৎকালীন জেলা তৃণমূলের অনেক তাবড় নেতাই। বলা ভালো, পোড়খাওয়া অনেক নেতার কার্যত ‘চক্ষু চড়কগাছ’ হয়ে গিয়েছিল AITC (All India Trinamool Congress)-র অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে মেদিনীপুরের জেলা সভাপতি হিসেবে সুজয়ের নাম দেখে! কিভাবে, কোন পথে সুজয়ের এই উত্থান? নিজেরাই তাঁরা সেদিন নিজেদেরকে প্রশ্ন করেছিলেন। ‘উত্তর’ অবশ্য পাননি! বা, পেলেও মন থেকে হয়তো মানতে চাননি! সুজয় ঘনিষ্ঠ জেলা ও শহরের নেতারা অবশ্য মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, অবিভক্ত পশ্চিম মেদিনীপুরের যে তৃণমূল নেতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সবথেকে কাছের ও ‘প্রিয়’ ছিলেন, মেদিনীপুরের প্রয়াত বিধায়ক সেই মৃগেন্দ্রনাথ মাইতির ‘সফল’ ইলেকশন এজেন্ট ছিলেন সুজয় হাজরা। সুজয় ঘনিষ্ঠরা এও বলেন, ছাত্র পরিষদের একনিষ্ঠ কর্মী থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের বিশ্বস্ত সৈনিক হওয়ার পথে সুজয় কখনও নিজের সাদা পোশাকে ‘কালি’ লাগতে দেননি! সর্বোপরি, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ‘শুভেন্দু-বিহীন’ তৃণমূল কংগ্রেস যখন ঘরে-বাইরে প্রবল চাপে, সেই সময়ও জেলা (অবিভক্ত পশ্চিম মেদিনীপুরের) তৃণমূলের যে ক’জন বিশ্বস্ত সৈনিক মাটি কামড়ে নিজেদের দায়িত্ব পালন করে দলের ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন ‘জয়’ করে নিয়েছিলেন সুজয় হাজরা তাঁদের মধ্যে অন্যতম বলেও মত সুজয় অনুগামী জেলার ছাত্র-যুবদের। সেই সুজয় হাজরাই এবার মেদিনীপুর বিধানসভা উপনির্বাচনের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী। বলা ভালো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সবথেকে ‘বিশ্বস্ত’ প্রার্থী! যাঁর নাম (উপ-নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে) নাকি লোকসভা নির্বাচনে জুন মালিয়া-র জয়ের পরের দিনই ঠিক করে নিয়েছিলেন মমতা-অভিষেক।

thebengalpost.net
রবিবারের বিজয়া সম্মিলনীতে মন্ত্রী মানস রঞ্জন ভুঁইয়ার আশীর্বাদের হাত সুজয়ের মাথায়:

বলাই বাহুল্য, সুজয়ের এই উত্তরণের পথ কোনোভাবেই কুসুমাস্তীর্ণ ছিলো না! বরং তা রীতিমত কন্টকাকীর্ণ ছিলো। জেলা সভাপতি হিসেবে গাড়ি-রক্ষী সহ প্রায় সমস্ত সুযোগ-সুবিধা উপেক্ষা করা থেকে ব্লকে ব্লকে দিনরাত দৌড়ে বেড়িয়ে সংগঠনকে মজবুত করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করা সত্ত্বেও; প্রায় বছর তিনেক ধরে দলনেত্রী’র ‘মন’ পাননি সুজয়। সুজয়-ঘনিষ্ঠেরা অবশ্য বলেন, “মন পেতে দেওয়া হয়নি!” যদিও, প্রথম থেকেই তৃণমূলের এই ‘তরুণ তুর্কী’ তথা স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতার ‘ঢাল’ হয়ে দাঁড়িয়েছেন দলের ‘সেনাপতি’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। একটা সময় সুজয়কে এও বলতে শোনা গিয়েছে, “এই একটা মানুষের জন্যই, এত অপমান-চক্রান্ত সহ্য করেও নীরবে কাজ করে যাওয়ার উৎসাহ পাই।” নীরবে নিজের কাজ করে যাওয়ার ফল অবশ্য সুজয় পেয়েছেন! টানা ৩ বছরের বেশি সময় ধরে জেলা সভাপতি থাকার পর এবার নিজের ‘ঘরের আসনের’ (মেদিনীপুরের) বিধায়ক পদ-প্রার্থী হলেন। ইঙ্গিতটা অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক আগে থেকেই দিয়ে রেখেছিলেন। তাঁর (মুখ্যমন্ত্রীর) ‘প্রিয়’ জুন-কে সংসদে পাঠানোর ইচ্ছে পূরণে যে সুজয়ের ‘অবদান’ কম নয়; ঘনিষ্ঠ বৃত্তে তা নাকি বারবার স্বীকার করেছেন নেত্রী। আর সেজন্যই গত ১৮ সেপ্টেম্বর মেদিনীপুর সফরে এসে বন্যাকবলিত ঘাটালের ‘পাশে’ থাকার পরামর্শ ও নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন ‘বিশ্বস্ত’সুজয়কেই। বলাই বাহুল্য, সুজয় সেই দায়িত্ব অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। তাই, গত ১৪ অক্টোবর বিজয়ার প্রণাম করতে গিয়ে নেত্রীর কাছ থেকে ট্রে-ভর্তি মিষ্টি আর ‘প্রশংসা’ নিয়ে ফিরেছিলেন সুজয়। ঘনিষ্ঠরা নাকি সেদিনই ‘নিশ্চিত’ হয়ে গিয়েছিলেন মেদিনীপুরের প্রার্থী হচ্ছেন সুজয়ই!

thebengalpost.net
তৃণমূলের প্রার্থীরা:

নাম ঘোষণা হওয়ার পর রবিবার (২০ অক্টোবর) বিকেলে সুজয় বলেন, “একজন জেলা সভাপতি হওয়া সত্ত্বেও, আমাকে বিধানসভার প্রার্থী করে দিদি তথা আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে যে সম্মান, সুযোগ করে দিয়েছেন; সেই বিশ্বাস, ভরসা এবং আস্থার মর্যাদা দিতে চাই। একটাই লক্ষ্য মেদিনীপুর বিধানসভা দিদির হাতে তুলে দেওয়া। বিরোধীদের নিয়ে ভাবছিনা! আমাদের নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন এবং ‘আমার নেতা‘ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াইকে সামনে রেখে মানুষের কাছে পৌঁছব। মানুষের উপর আমার বিশ্বাস আছে। তাঁরা দিদির উন্নয়ন, পরিষেবা এবং প্রকল্পের কথা মাথায় রেখেই ভোট দেবেন!” উল্লেখ্য যে, ২০২১ সালে প্রায় ২৪ হাজার ভোটে বিজেপি প্রার্থী শমিত দাসকে হারিয়ে মেদিনীপুর বিধানসভার বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন জুন মালিয়া। ২০২৪ সালে প্রায় ২৮ হাজার ভোটে বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পালকে পরাজিত করে মেদিনীপুর লোকসভার সাংসদ নির্বাচিত হন জুন। তবে, মেদিনীপুর বিধানসভার লিড কমে দাঁড়ায় মাত্র ২৭০০-তে! এবার, জুনের ছেড়ে যাওয়া সেই আসনেই লড়াই করবেন সুজয়। তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির ‘ভূমিপুত্র’ প্রার্থী শুভজিৎ রায় (বান্টি)। যদিও, বিরোধী প্রার্থী সম্পর্কে এদিন কোন মন্তব্য করতে চাননি তৃণমূল প্রার্থী সুজয় হাজরা। মুখ্যমন্ত্রীর গত ১৩ বছরের উন্নয়নকে সামনে রেখে এবং মেদিনীপুরের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সম্প্রীতির ধারা অক্ষুণ্ণ রাখার অঙ্গীকার নিয়েই তিনি লড়াই করবেন বলে জানিয়েছেন!

thebengalpost.net
সুজয়-বরণ: