দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৪ নভেম্বর: একদিকে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সদ্য গ্রেফতারি; অন্যদিকে শনিবার (৪ নভেম্বর) সকাল থেকে রাজ্যে জুড়ে ইডি-র তল্লাশি অভিযানের মধ্যেই জেলা শহর মেদিনীপুরে বিজেপির অভিনব প্রতিবাদ-মিছিল ঘিরে চাঞ্চল্য! ‘প্রতীকী’ এই প্রতিবাদ মিছিলে খোদ সাংসদ দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বে এক বিজেপি কর্মীকে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক সাজিয়ে (মুখোশ পরিয়ে), তাঁর কোমরে দড়ি পরিয়ে, তাঁকে চাবুক মারতে মারতে নিয়ে যাওয়া হয়। শুধু তাই নয় মিছিলে হাঁটানো হয় তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাজে সজ্জিত (মুখোশ পরিহিত) এক মহিলা বিজেপি কর্মীকেও। পাশে ছিলেন গ্রেফতার হওয়া প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং বীরভূমের ‘বেতাজ বাদশা’ অনুব্রত মণ্ডলের সাজে সজ্জিত আরও দুই বিজেপি কর্মীও। উল্লেখ্য যে, তৃণমূল নেত্রীর সাজে সজ্জিত ওই মহিলা কর্মীর গলায় ঝোলানো ছিল ‘ডাকাতরানী’ পোস্টার এবং প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রীর সাজে সজ্জিত বিজেপি কর্মীর গলায় ছিল ‘আমি খাদ্যচোর’ পোস্টার। আর, এই মিছিলের ঘন্টাখানেকের মধ্যেই ওই দুই বিজেপি কর্মীকে আটক করার অভিযোগ উঠল মেদিনীপুর কোতোয়ালি থানার বিরুদ্ধে। ঘটনায় তৃণমূল নেত্রী (মমতা ব্যানার্জি) সেজে মিছিলে হাঁটা মহিলা কর্মী গীতিকা দাস এবং প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী (জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক) সাজা বিজেপি কর্মী বুদ্ধদেব পলমল-কে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আসার অভিযোগ করেছেন জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। এই আটকের প্রতিবাদে বেলা দু’টো নাগাদ মেদিনীপুর শহরের কোতোয়ালি থানায় রীতিমতো উত্তেজক পরিস্থিতি তৈরি হয়। মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সভাপতি সুদাম পণ্ডিত সহ একঝাঁক শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে রাজ্য স্তরের নেতারাও পৌঁছে যান কোতোয়ালি থানায়। বিশাল পুলিশবাহিনী এবং র‌্যাফ এসে পৌঁছয় থানাতে।

thebengalpost.net
মেদিনীপুর শহরে মিছিল:

এই বিষয়ে যদিও পুলিশের তরফে কোন মন্তব্য করা হয়নি। তবে, তাঁদের দুই কর্মীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আসার বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় তীব্র প্রতিবাদ শুরু করেছেন জেলা বিজেপি-র নেতা-কর্মীরা। একইসঙ্গে পুলিশের উদ্দেশ্যে ছুঁড়ে দিয়েছেন তীব্র কটাক্ষ। এমনকি, বিজেপির তরফে এই ঘটনায় কোতোয়ালি থানার আই.সি-র প্রতি ‘ব্যাঙ্গাত্মক’ মন্তব্য করে স্লোগানও দেওয়া হয়- “কোতোয়ালি থানার আইসি-কে ধন্যবাদ! উনি (নকল) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে জেলে ঢোকানোর সাহস দেখিয়েছেন।” তাঁদের এও কটাক্ষ, “রাজ্য সরকার ডিএ দেয়নি বলেই, ‘নকল’ মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশও ‘প্রতীকী প্রতিবাদ’ জানিয়েছেন!” এই বিষয়ে রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি শমিত দাস কোতোয়ালি থানায় দাঁড়িয়ে জানিয়েছেন, “আজকে মেদিনীপুর শহরে আমাদের ঐতিহাসিক মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমাদের একজন কর্মী মমতা ব্যানার্জির মুখোশ পরে মিছিলে হাঁটছিলেন এবং অপর এক বিজেপি কর্মী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের মুখোশ পরে হাঁটছিলেন। এটা আসলে জনতার ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ ছিল। আশ্চর্যজনকভাবে ওই মিছিলের পরই পুলিশ আমাদের এই দুই কর্মীকে আটক করে নিয়ে এসেছে কোতোয়ালি থানায়। তৃণমূলের নির্দেশে পুলিশের এই অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ-কে আমরা ধিক্কার জানাই। আমাদের দুই কর্মীকে যদি অবিলম্বে ছাড়া না হয়, আমরা বৃহত্তর আন্দোলনের পথে যাব।” অন্যদিকে, জেলা তৃণমূলের সভাপতি সুজয় হাজরা বিকেল ৩-টে নাগাদ এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া দিয়ে জানিয়েছেন, “দিলীপ ঘোষের কথা শোনার জন্য আর তাঁর মিছিলে হাঁটার জন্য বিজেপির দেড়শো লোকও ছিলোনা! আর সেটাই নাকি ঐতিহাসিক মিছিল। তবে, বিজেপির কর্মসূচি বা পুলিশ-প্রশাসনের বিষয় নিয়ে আমি কোন মন্তব্য করব না। যদিও, গুজরাটে ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মুর্দাবাদ’ স্লোগান দিলে জেলে ঢোকানো হয়। বরং আমাদের বাংলা থেকে বিজেপির সহনশীলতা শেখা উচিত।”

thebengalpost.net
কোতয়ালি থানায়: