তনুপ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১২ আগস্ট: বাবা-মা কে হারিয়ে মাত্র ৬ বছর বয়সে যে বালক দাসপুরের হাটগেছিয়া গ্রামে দিদি অপরূপা দেবীর বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে ছিলেন, তিনিই পরবর্তীকালে হয়ে ওঠেন বীর বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু। সেই দাসপুরের বড় শিমুলিয়া গ্রামে আজও এক বটগাছ ক্ষুদিরামের অমলিন স্মৃতি ধারণ করে দাঁড়িয়ে আছে দিঘির পাড়ে। বৃহস্পতিবার বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু’র ১১৫ তম আত্মবলিদান দিবসের দিন বটগাছ সহ ঐতিহাসিক এই স্থানটিকেই ‘হেরিটেজ’ মর্যাদা দেওয়ার দাবি করলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুর থানার হাটগেছিয়া গ্রামের বাসিন্দারা।
সালটা ১৯০৭ সালের অক্টোবর মাস। বিপ্লবী ক্ষুদিরামের শহীদ হওয়ার ১০ মাস আগে! তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের টাকা ও গুরুত্বপূর্ণ চিঠি এই ডাকের মাধ্যমে আদান প্রদান হতো বিভিন্ন আস্তানায়। ক্ষুদিরাম বিপ্লবের স্বার্থে সেই টাকা লুঠ করার পরিকল্পনা করেন। সেই মতোই তিনি লুকিয়ে ছিলেন দিঘির পাড়ে ওই বটগাছের একটি ডালে। এরপর অতর্কিত হামলায় সেই ডাক লুণ্ঠন করে গা ঢাকা দেন। পরে সেই টাকা মেদিনীপুরে গিয়ে তুলে দেন বিপ্লবী সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের হাতে। এই লুণ্ঠনের কথা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ডাক লুঠের পর স্বভাবতই ক্ষুদিরামের খোঁজে ব্রিটিশ সরকার পুরো দাসপুর জুড়ে তল্লাশি শুরু করলেও তাঁকে গ্রেপ্তার করতে করতে পারেনি। পরিবর্তে তাঁর এক সহপাঠীকে গ্রেপ্তার করে। তীব্র অত্যাচারের পরেও সেই সহপাঠী ক্ষুদিরামের নাম কিংবা অবস্থান জানায়নি।
এমন অসামান্য ঘটনার স্মৃতিচিহ্ন বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকেও শুধুমাত্র সরকারি উদাসীনতায় আজও কোনো স্বীকৃতি মেলেনি এই স্থানের। ভারতবর্ষের কনিষ্ঠতম ‘শহীদ’ ক্ষুদিরামের আত্মবলিদানের ১১৪ তম বর্ষেও জেলার অন্যতম ঐতিহাসিক এই স্থান পড়ে রয়েছে অবহেলায়। বহু খ্যাতনামা মানুষ এসেছেন এই এলাকা পরিদর্শন করতে। কিন্তু, কোনো পরিকাঠামো না থাকায় ক্ষোভ বাড়ছে গ্রামবাসীদের মধ্যে। যদিও, স্থানীয় মানুষেরা বটগাছের পাশে উদ্যোগ নিয়ে স্থাপন করেছেন ক্ষুদিরামের আবক্ষ মূর্তি। গাছের চারিদিকে যত্ন করে বাঁধিয়েছেন। একটি কমিটিও তৈরী করা হয়েছে। বিপ্লবী ক্ষুদিরামের ফাঁসির দিনটিকে (১১ আগস্ট) স্মরণে রেখে, প্রতিবছরের মতো এবারও এখানের বাসিন্দারা অত্যন্ত গর্বের সাথে পালন করলেন। সঙ্গে তাঁরা দাবি করলেন, দ্রুত সরকার এই স্থানটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিক। তাঁরা চান ‘হেরিটেজ’ মর্যাদা সহ রাজ্যের মানচিত্রে অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে উঠে আসুক এই স্থান।