দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৯ জানুয়ারি: প্রতিষ্ঠানের নাম স্বর আবৃত্তি, মেদিনীপুর। শহর মেদিনীপুরের স্বনামধন্য এক বাচিক শিক্ষা কেন্দ্র। প্রতিবারই নিজেদের বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে নানা অভিনব ভাবনা আর পরিবেশনার প্রচেষ্টাই যাদের পাথেয়। ব্যতিক্রম হয়নি এবারও। গত ৫ জানুয়ারি, রবিবসরীয় সন্ধ্যায় জেলা শহর মেদিনীপুরের শহিদ প্রদ্যোৎ স্মৃতি সদনে আবৃত্তিকে ভালোবেসে, ‘আবেগে মননে মাতৃভাষা’-র জয়গান গেয়ে, স্বর আবৃত্তি মেদিনীপুর পরিবেশন করে তাদের বার্ষিক অনুষ্ঠান ‘উৎসারিত আলো’। বিকেল ৩.০৫ থেকে প্রায় সাত ঘন্টা ধরে চলা আবৃত্তির একটি অনুষ্ঠান মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে মেদিনীপুরবাসীকে। যদিও, অনুষ্ঠানের কয়েকদিন আগে, অতিথিদের আমন্ত্রণেও ছিল অভিনবত্ব। স্বর আবৃত্তির ছেলেমেয়েরা পোস্টকার্ডে, নিজেদের হাতে লিখে আত্মীয়-স্বজনদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। যে ‘চিঠি লেখা’ আজ প্রায় বিস্মৃত শিল্পে পরিণত হয়েছে এই হোয়াটসঅ্যাপ-টুইটারের যুগে; সেই চিঠি লেখা শিল্পকেই এখনকার কচিকাঁচাদের সামনে তুলে ধরতে এই অভিনব ভাবনা বলে জানান ‘স্বর আবৃত্তি’র কর্ণধার শুভদীপ বসু।
রবিবার ‘স্বর আবৃত্তি’-র অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মেদিনীপুরের বিধায়ক সুজয় হাজরা। তিনি ‘স্বর আবৃত্তি’র এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে তাঁদের আরও সাফল্য কামনা করেন। উদ্বোধনের সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ে পরিদর্শক সৌমেন ঘোষ, কবি চন্দন নাথ, বাচিক শিল্পী অমিয় পাল, মালবিকা পাল প্রমুখ। স্বর আবৃত্তির অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে এসেছিলেন কলকাতা দূরদর্শনের বিশিষ্ট আবৃত্তি শিল্পী বিশাখা মুখোপাধ্যায়, কবি চন্দন নাথ ও গৌতম মন্ডল। নানা ধরনের বিষয়কেন্দ্রিক আবৃত্তির অনুষ্ঠান উপহার দেয় স্বর আবৃত্তির শিল্পীরা। মা তুঝে সালাম থেকে বিদ্যাসাগর, গাছ, পাখি, নদী, ভূত প্রভৃতি আবৃত্তির কোলাজগুলি অভিভূত করে দর্শকদের। স্বয়ং বিশাখা মুখোপাধ্যায় বলেন, “আবৃত্তির এরকম পরীক্ষামূলক ভাবনা আমায় মোহিত করেছে। এমন পরিশ্রম করে আবৃত্তি শেখানো কতটা কঠিন সেটা আমি বুঝি।”
অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে ‘আবৃত্তির ডায়রি’র দ্বিতীয় সংস্করণের উদ্বোধন করলেন কবি চন্দন নাথ। বিষ্ণুপদ কুইলার কবিতার আবৃত্তির অ্যালবাম ‘শ্রুতি মধুর’ উদ্বোধন করেন ডাঃ সুহাস রঞ্জন মন্ডল। উপস্থিত ছিলেন স্বয়ং কবি বিষ্ণুপদ কুইলা । এই জেলার বিখ্যাত কিছু সাংস্কৃতিক দল ছন্দম মিউজিক কলেজ, জাগরী সঙ্গীত নিকেতন, নৃত্যাঞ্জলি, নটরাজ মিউজিক কলেজ, নটরাজ ডান্স একাডেমী, সৃজনভূমি, শেষাদ্রি ডান্স একাডেমি, রূপকম ডান্স একাডেমি নানা আবৃত্তির আলেখ্যে, সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করে। অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের পুরস্কার দেওয়া হয়। যন্ত্রানুষঙ্গে ছিলেন প্রদীপ দাস ও পরেশ দাস। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন শতাব্দী গোস্বামী চক্রবর্তী ও ঈশিতা চট্টোপাধ্যায়। প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ শুভদীপ বসুর কথায়, “শহর তথা জেলার প্রায় দুই শতাধিক শিল্পীদের নিয়ে এই অনুষ্ঠান হয়েছে। প্রায় ২৫টি ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ের উপর ছেলেমেয়েরা অনুষ্ঠান পরিবেশন করে। আবৃত্তি নিয়ে নানা পরীক্ষামূলক কাজ আমরা করছি।”