দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ সেপ্টেম্বর: “বিরোধীরা যে যাই সমালোচনা করুন না কেন, আমি সে প্রসঙ্গে যাব না! তবে, আমি অত্যন্ত খুশি যে দাদা (সৌরভ গাঙ্গুলী) স্টিল প্ল্যান্টের জন্য আমার বিধানসভা ক্ষেত্রের একটি এলাকা (শালবনী)-কেই বেছে নিয়েছেন। এখনও দাদার সঙ্গে দেখা হয়নি। দেখা হলেই ধন্যবাদ জানাব। কথাও হবে।” জুনের সংযোজন, “জিন্দলদের ছেড়ে দেওয়া ওই জমিতে কারখানা তো আজ না হয় কাল হতোই। এটা খুব ভালো যে আমাদের সকলের ‘দাদা’, সৌরভ ওখানে ৬০০ একর জমি নিয়ে কারখানা গড়বেন।” সোমবার দুপুরে মেদিনীপুর শহরের বাসস্ট্যান্ডের বিশ্বকর্মা পূজা উদ্বোধনের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শালবনীতে সৌরভের ইস্পাত কারখানা গড়ার সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে ঠিক এমনই প্রতিক্রিয়া দিলেন মেদিনীপুরের বিধায়ক জুন মালিয়া।
অন্যদিকে, সৌরভের ইস্পাত কারখানার খবর আসার পরই শালবনীর জামবেদিয়া, আসনাসুলি, কুলফেনী, বরাগদা, ঢেঙ্গাশোল, সীতানাথপুর- প্রভৃতি গ্রামের কাজ হারানো ৪০-৫০ জন যুবক পুনরায় কাজের আশায় বুক বেঁধেছেন! চিরঞ্জিত চালক, সোমনাথ মাহাতো সহ সেই সমস্ত যুবকরা রবিবার জানান, “স্বাস্থ্য দপ্তরের অধীনে প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজে যোগ দিয়েছিলাম। এক-দেড় বছর যেতে না যেতেই কোভিড আসে। তারপরই আমাদের কাজ হারাতে হয়। সৌরভ গাঙ্গুলী কারখানা করবেন খবর পাওয়ার পরই, আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। যদি কিছু একটা কাজ দেওয়া হয়!” সোমনাথ, চিরঞ্জিত-দের পরিবার কারখানা গড়ার জন্য জমি দিয়েছিলেন। এখন কোনমতে দিনমজুরি করে অথবা গ্রামের ভেতরেই ছোটখাটো দোকান করে তীব্র আর্থিক কষ্টের মধ্যে কাটছে! অসহায় ওই পরিবারগুলির অভিভাবকরাও সৌরভের ইস্পাত কারখানার খবর শুনে যেন নতুন করে আশার আলো দেখতে পেয়েছেন। কাঁদতে কাঁদতে শ্রীমতি চালক, বাসন্তী মাহাতোরা জানান, “কি কষ্টে যে দিন কাটছে! ছেলেটা যদি একটা কাজ পায় ভালোভাবে একটু বাঁচতে পারব।” প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ইস্পাত কারখানা গড়ার কথা থাকলেও, ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে জিন্দলদের সিমেন্ট কারখানার উদ্বোধন হয়েছিল শালবনীতে। একইসঙ্গে শালবনী সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালটি পরিচালনার দায়িত্বও ওই বছরই রাজ্য সরকারের তরফে তুলে দেওয়া হয়েছিল জিন্দল কর্তৃপক্ষের হাতে। এদিকে, শিল্পের জন্য এলাকার যে সমস্ত কৃষকরা জমি দিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে মাত্র ১৫০ জনের সিমেন্ট কারখানায় কাজ হলেও, বাকি প্রায় ১৫০-২০০টি পরিবার বঞ্চিত হয়। সেই সমস্ত পরিবারের একজন করে সদস্য-কে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চাকরি দেওয়ার জন্য জিন্দল কর্তৃপক্ষের তরফে তাঁদের পাঁশকুড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে প্রশিক্ষণও করানো হয়েছিল। শালবনীর জামবেদিয়া, আসনাসুলি, গাইঘাটা, কুলফেনী, বরাগদা, ঢেঙ্গাশোল, সীতানাথপুর- প্রভৃতি এলাকার শতাধিক যুবক-যুবতী প্রশিক্ষণ শেষে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে কাজও পেয়েছিলেন। এক-দেড় বছর কাজ করতে না করতেই কোভিড আসে।
২০২০ সালের জুন মাসে গোটা রাজ্যের সাথে সাথে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাতেও যখন একটু একটু করে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে, সেই সময়ই জিন্দলদের হাত থেকে পুনরায় ওই হাসপাতাল রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর নিজেদের অধীনে নিয়ে আসেন। লেভেল ফোর করোনা হাসপাতাল হিসেবে সেটিকে গড়ে তুলে দায়িত্ব দেওয়া হয় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর-কে। কাজ হারান ওই হাসপাতালে চুক্তিভিত্তিক বিভিন্ন কাজে নিযুক্ত ৬০-৭০ জন যুবক-যুবতী। কিছুজন অবশ্য করোনা-র ভয়েও কাজ ছেড়ে দেন! এদিকে, জিন্দলরা তাদেঁর অধিগৃহীত ৪৩৩৪ একর জমির মধ্যে প্রায় ২৮০০ একর জমি ইতিমধ্যে রাজ্য সরকারকে ফিরিয়ে দিয়েছে। সেখান থেকেই ৬০০ একর জমিতে ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেট অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী নিজের ইস্পাত কারখানা গড়বেন বলে গত শুক্রবার স্পেনের মাদ্রিদ শহর থেকে ঘোষণা করেছেন। তারপরই, ফের আশায় বুক বাঁধছেন শালবনীর ওই যুবক-যুবতীরা!