দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৪ অক্টোবর: “আমার নির্বাচনের সময় সুজয় অনেক করেছে। এবার ওকে ফিরিয়ে দেওয়ার পালা!” মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) মেদিনীপুর সদরের কঙ্কাবতীর বিজয়া সম্মিলনীতে ঘোষণা করেছিলেন মেদিনীপুরের ‘প্রাক্তন’ বিধায়ক তথা নব-নির্বাচিত সাংসদ জুন মালিয়া। আর, তারপরই মেদিনীপুরের পৌরপ্রধান সৌমেন খান সহ জুন-অনুগামী সমস্ত কাউন্সিলর ও নেতাকর্মীরা একে একে সুজয়ের প্রচারে নেমে পড়েন। বৃহস্পতিবারের মনোনয়ন-মিছিলেও দেখা গেল সেই মৈত্রীর সুর। জুন অনুগামীদের কন্ঠে শোনা গেল ‘সু-জয়’ স্লোগান! সবমিলিয়ে, বিপুল উচ্ছ্বাস আর উন্মাদনার মধ্য দিয়েই এদিন (২৪ অক্টোবর) বেলা ঠিক ২টো ১২ মিনিটে মনোনয়ন জমা দিলেন মেদিনীপুর বিধানসভা উপনির্বাচনের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী সুজয় হাজরা। পঞ্জিকা অনুযায়ী ‘শুভক্ষণ’ খুঁজে, বেলা ঠিক ২টো ১২ মিনিটে রিটার্নিং অফিসার তথা মহকুমাশাসক মধুমিতা মুখোপাধ্যায়ের হাতে মনোনয়নপত্র তুলে দেন মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভপতি তথা মেদিনীপুর বিধানসভা উপনির্বাচনের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী সুজয় হাজরা। নিয়ম মেনে সুজয়ের সঙ্গে আরও ৪ জন প্রবেশ করেছিলেন রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে। সুজয়ের নির্বাচনী এজেন্ট মৃণাল কান্তি চৌধুরী ছাড়া বাকিরা হলেন- মেদিনীপুরের পৌরপ্রধান সৌমেন খান, শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি বিশ্বনাথ পাণ্ডব এবং মেদিনীপুর জেলা আদালতের জিপি তথা দলের মুখপাত্র সুকুমার পড়িয়া।

thebengalpost.net
মনোনয়ন জমা দিলেন সুজয় হাজরা:

thebengalpost.net
বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু’র মূর্তির পাদদেশে সস্ত্রীক সুজয় হাজরা:

তার আগে আবহাওয়ার প্রতিকূলতা উপেক্ষা করেও বিপুল উন্মাদনা আর উচ্ছ্বাসের সঙ্গে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার কর্মী-সমর্থকেরা এদিনের বর্ণাঢ্য মনোনয়ন-মিছিলে যোগ দেন। ছিলেন মন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাত, জেলা চেয়ারম্যান ও বিধায়ক দীনেন রায়, কেশিয়াড়ির বিধায়ক পরেশ মুর্মু, জেলা পরিষদের সভাধিপতি প্রতিভা মাইতি, দুই রাজ্য সম্পাদক প্রদ্যোৎ ঘোষ ও আশিস চক্রবর্তী, জেলা যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি নির্মাল্য চক্রবর্তী সহ জেলা পরিষদের একাধিক কর্মাধ্যক্ষ, পঞ্চায়েত সমিতির সাভপতি থেকে শুরু করে ব্লক তৃণমূলের সভাপতি ও জেলা নেতৃত্বরা। মিছিলে আগাগোড়া তাঁর সঙ্গেই ছিলেন স্ত্রী তথা মেদিনীপুর পৌরসভার ২২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মৌসুমী হাজরাও। ঘাটাল থেকে ছুটে এসেছিলেন ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি আশিস হুদাইতও। মিছিল শুরুর আগে জেলা কার্যালয়ে মিষ্টি খাইয়ে, মালা পরিয়ে এবং মাথায় হাত রেখে ‘আশীর্বাদ’ করে যান দলের রাজ্য সহ-সভাপতি তথা জলসম্পদ উন্নয়ন ও সেচ দপ্তরের মন্ত্রী মানস রঞ্জন ভুঁইয়া। এরপরই মানস দীঘার উদ্দেশ্যে রওনা দেন বলে জানা গেছে। অন্যদিকে, সাত সকালেই সুজয়ের বাড়িতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করে গিয়েছেন নারায়ণগড়ের বিধায়ক সূর্যকান্ত অট্ট। তবে, দলের রাজ্য নেতৃত্বের তরফে পিংলার বিধায়ক তথা ‘অবিভক্ত’ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের ‘প্রাক্তন’ সভাপতি অজিত মাইতির হাত দিয়ে ‘প্রতীক’ পাঠানো হলেও, তিনি এদিন উপস্থিত ছিলেন না! দলের জেলা চেয়ারম্যান তথা খড়্গপুর গ্রামীণের বিধায়ক দীনেন রায়কে ডেকে তিনি আগেই রাজ্য নেতৃত্বের তরফে পাঠানো ‘প্রতীক’ পাঠিয়ে দিয়েছিলেন বলে জানা যায়।

thebengalpost.net
মনোনয়ন শেষে:

এদিন মনোনয়ন-মিছিলের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অবশ্য ‘বিভেদ’ ভুলে ‘সু-জয়’ স্লোগানে মাতেন জেলার রাজনীতিতে তাঁর বিপরীত-মেরুতে অবস্থান করা নেতানেত্রীরাও। ইতিমধ্যেই, জুন-বার্তার পর মাঠে নেমে পড়েছেন পৌরপ্রধান সৌমেন খান সহ তাঁর (জুনের) অনুগামী মেদিনীপুর পৌরসভার কাউন্সিলররা। এদিনের মিছিলেও দেখা যায় তাঁদের। ছিলেন জুন-ঘনিষ্ঠ দলের দুই রাজ্য সম্পাদক, খড়্গপুরের প্রাক্তন পৌরপ্রধান সহ অন্যান্যরাও। এছাড়াও, মেদিনীপুর বিধানসভা তথা জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সুসজ্জিত এই মিছিলে যোগ দেন কয়েক হাজার কর্মী-সমর্থকেরা। মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগে শহরের একাধিক মন্দির-মসজিদে গিয়ে ‘আশীর্বাদ’ নেওয়ার পাশাপশি, মেদিনীপুর শহরের ফেডারেশন হলের সামনে প্রয়াত বিধায়ক মৃগেন্দ্রনাথ মাইতির আবক্ষ মূর্তিতেও মাথা ঠেকিয়ে ‘প্রণাম’ করতে ভোলেননি তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা মেদিনীপুরের বিধায়ক পদ-প্রার্থী সুজয় হাজরা। মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে, ‘ঐক্যবদ্ধ মিছিল’ প্রসঙ্গে সুজয় বলেন, “আমরা সবাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক। এটাই আমাদের এক এবং একমাত্র পরিচয়। মতের পার্থক্য থাকতে পারে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সৈনিক’ আর মানুষের ‘সেবক’ হিসেবে আমরা সবাই এক।” ‘জয়’ নিয়ে সুজয় বলেন, “এই যে বিপুল জনস্রোত দেখছেন, এতেই আশাকরি বুঝতে পারছেন, ফলাফল কি হতে চলেছে!” বিরোধী প্রার্থীদের সম্পর্কে তাঁর অভিমত, “আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘উন্নয়ন’ নিয়ে মানুষের কাছে যাব। বিরোধী প্রার্থীদের সম্পর্কে কিছু বলার নেই!”

thebengalpost.net
সুজয়ের মনোনয়নের সামনের সারিতেই সৌমেন, সুসময়-রা:

thebengalpost.net
ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার সভাপতির সঙ্গে:

thebengalpost.net
মানসের আশীর্বাদ: