দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৪ আগস্ট: দু’বছর আগেই আনুষ্ঠানিক ভাবে পথ চলা শুরু করেছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের (Midnapore Medical College) আই ব্যাঙ্ক (Eye Bank)। তবে, পাওয়া যায়নি আই ডোনার বা কর্নিয়া দাতা। সেজন্যই পরিকাঠামো তৈরী থাকা সত্ত্বেও, এতদিন ধরে কর্নিয়া প্রতিস্থাপন বা কেরাটোপ্লাস্টি (Corneal transplantation/ Keratoplasty) করা সম্ভব হয়নি। অবশেষে তা সম্ভব হল! মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের আই ব্যাঙ্কে সফলভাবে প্রতিস্থাপিত হল চোখের মণি বা কর্নিয়া (Cornea)। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এই সাফল্য এলো এমন এক সন্ধিক্ষণে, যখন জুনিয়র চিকিৎসকরা তাঁদের নির্যাতিতা ও নিহত সহকর্মীর উপর নারকীয় অত্যাচারের বিচারের দাবিতে ধর্মঘট বা কর্মবিরতি পালন করছেন। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) অবশ্য কর্মবিরতির মাঝেই ‘ইতিহাস’ সৃষ্টি করেন ডঃ দেবার্ঘ্য সহ একদল জুনিয়র চিকিৎসক। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের আই ব্যাঙ্কে প্রথম বারের জন্য সফলভাবে কর্নিয়া প্রতিস্থাপনে সিনিয়রদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন তাঁরা।
প্রসঙ্গত, চলতি সপ্তাহেই (মঙ্গলবার) মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে মৃত্যু হয় চক্ষু দানে অঙ্গীকারবদ্ধ এক প্রৌঢ়ার। মৃত ওই প্রৌঢ়ার পরিবারের সদস্যদের সহৃদয়তায় এবং চক্ষু বিভাগের তৎপরতায় মৃত্যুর ৬ ঘন্টার মধ্যেই তাঁর কর্নিয়া বা মণি (Cornea) সংগ্রহ করে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের চক্ষু বিভাগ। তা সংরক্ষণ করে রাখা হয় আই ব্যাঙ্ক (Eye Bank)। বৃহস্পতিবার সেই কর্নিয়া দু’টি দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলা দুই ব্যক্তির চোখে সফলভাবে প্রতিস্থাপিত হয়। মৃতার চোখের মণিতে অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরেন দু’জন। অন্যদিকে, আন্দোলনের মাঝেও এক অনন্য ‘নজির’ গড়লেন ডঃ দেবার্ঘ্য সহ জুনিয়র চিকিৎসকদের ওই দলটিও। সফল কেরাটোপ্লাস্টি (Corneal transplantation) শেষে চক্ষু বিভাগের সিনিয়র দুই চিকিৎসক জানালেন, “আজ ওরাই হিরো। আন্দোলনের মাঝেই আই ব্যাঙ্কের প্রথম কর্নিয়া প্রতিস্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখল ওরা। আমরা আবারও বার্তা দিতে চাই, রোগীদের পরিষেবা আমরা বন্ধ রাখিনি। রোগীদের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলনও নয়। ন্যায়বিচারের দাবিতে আন্দোলন। জুনিয়রদের এই আন্দোলনে আমাদের সম্পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। তবে, রোগী পরিষেবা বন্ধ করে দিয়ে যে আন্দোলন চলছেনা, তা আজকের এই অস্ত্রোপচারেই আবার প্রমাণিত হল।” একইসঙ্গে, তাঁরা এও আবেদন জানিয়েছেন, “আপনারাও চক্ষু দানে (কর্নিয়া দানে) এগিয়ে আসুন। মৃত্যুর ৬ ঘন্টার মধ্যে যদি আমরা কর্নিয়া সংগ্রহ করতে পারি, তবে তা দৃষ্টি ফিরিয়ে দিতে পারে একজন দৃষ্টিহীন মানুষের। মৃত্যুর তিন ঘন্টা পর প্রাইমারি ডেথ সার্টিফিকেট পাওয়া যায়। তারপর আমাদের হাতে আর মাত্র ৩ ঘন্টা থাকে। কাজেই মৃত্যুর পরই আমাদের খবর দিলে, আমরা প্রস্তুত হয়ে যাব। খবর দেওয়ার জন্য মেদিনীপুর মেডিক্যালের আই ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে একটি ফোন নম্বর (চব্বিশ ঘন্টাই খোলা) দেওয়া হয়েছে। এটি হল- 7003554842।”