দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৩ জুন: পরোয়া নেই ট্রাফিক সিগন্যাল বা ট্রাফিক পুলিশকে! রেড সিগন্যাল ভেঙে বাইক আরোহীকে ধাক্কা মেরে এগিয়ে যাচ্ছিল বালি বোঝাই ডাম্পার। ট্রাফিক পুলিশ সহ স্থানীয়রা আটকাতেই দায়িত্ব-জ্ঞানহীন চালক গাড়ি পিছনো শুরু করে। ডাম্পারের ধাক্কায় রাস্তায় লুটিয়ে পড়া মেদিনীপুর শহরের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক পিষ্ট হয়ে যান ডাম্পারের চাকায়! রবিবার সকাল ৮টা নাগাদ ভয়াবহ এই পথ-দুর্ঘটনাটি ঘটে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর গ্রামীণ থানার অধীন মোহনপুর চকে (মোহনপুর ব্রিজ থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে)। বালি বোঝাই বেপরোয়া ডাম্পারের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হল বাইক আরোহী তথা পেশায় চিকিৎসক, মেদিনীপুর শহরের অরবিন্দনগরের বাসিন্দা হরিপদ রাউতের (৬৭)! মৃত্যুর পরই ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা পথ অবরোধ শুরু করেন। সকাল ৮টা থেকে মোহনপুর ব্রিজ বা দেশপ্রাণ বীরেন্দ্র সেতুর দুই প্রান্তে কয়েক কিলোমিটার জুড়ে দাঁড়িয়ে পড়ে ছোট-বড় কয়েকশ গাড়ি। শেষ পর্যন্ত পুলিশের হস্তক্ষেপে প্রায় দু’ঘন্টা পর, সকাল ১০টা নাগাদ অবরোধ ওঠে মেদিনীপুর-খড়্গপুরের সংযোগস্থলে মোহনপুর ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায়। সচল হয় যান চলাচল। দুর্ঘটনায় মৃত ব্যক্তির দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয় পুলিশের তরফে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, রবিবার সকাল ৮টা নাগাদ খড়্গপুর গ্রামীণ থানার অধীন মোহনপুর এলাকায় একটি বালি বোঝাই ডাম্পারের ধাক্কায় মৃত্যু হয় মেদিনীপুর শহরের অরবিন্দনগর এলাকার বাসিন্দা বছর ৬৭-র হরিপদ রাউতের। পেশায় মেদিনীপুর হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন চিকিৎসক হরিপদ বাবু নিজের বাইকে করে মেদিনীপুর শহর থেকে পিংলার কড়কাইয়ের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন। প্রতি রবিবার নিজের গ্রামের বাড়িতে (কড়কাই-তে) চেম্বার করেন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ডঃ রাউত। যাওয়ার পথেই ঘটে যায় ভয়াবহ এই দুর্ঘটনা! ব্রিজ পেরিয়ে মোহনপুরের চকে ট্রাফিক সিগন্যালের ‘লাল বাতি’ (রেড সিগন্যাল) দেখে থমকে যান তিনি। কিন্তু, একটি বালি বোঝাই ডাম্পার সিগন্যাল না মেনে তাঁকে ধাক্কা মেরে বেশ খানিকটা এগিয়ে যায়। রাস্তার উপরই লুটিয়ে পড়েন তিনি! তৎক্ষণাৎ স্থানীয় বাসিন্দা অর্থাৎ প্রত্যক্ষদর্শীরা এবং কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ কর্মীরা ওই ডাম্পারটিকে আটকানোর চেষ্টা করেন। দায়িত্ব-জ্ঞানহীন চালক ওই অবস্থাতেই ডাম্পার পিছোতে থাকেন। এমনকি স্থানীয়দের চিৎকারও শুনতে পান না চালক। ফলে, রাস্তার উপর লুটিয়ে পড়া বাইক চালক হরিপদ রাউত পিষ্ট হয়ে যান ডাম্পারের চাকায়!
এরপরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা ওই ডাম্পারটি ভাঙচুর করেন এবং পথ-অবরোধ শুরু করেন। এর ফলে ৬০নং জাতীয় সড়কের উপর অবস্থিত দেশপ্রাণ বীরেন্দ্র সেতু বা মোহনপুর ব্রিজের দুই পাশে কয়েক কিলোমিটার জুড়ে কয়েকশ ছোট-বড় গাড়ি দাঁড়িয়ে যায়। তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। শেষ পর্যন্ত পুলিশের হস্তক্ষেপে প্রায় দু’ঘণ্টা পর অবরোধ ওঠে। মৃতদেহ উদ্ধার করে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয় ময়নাতদন্তের জন্য। স্থানীয়দের তৎপরতায় ডাম্পারের চালককে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। আটক করা হয়েছে বালি বোঝাই ডাম্পারটিও। দুর্ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে মৃত চিকিৎসকের ভাইপো সঞ্জয় রাউত বলেন, “আমি ফোনে খবর পেয়েই ছুটে আসি। ততক্ষণে সব শেষ! কোনও ভুল না করেও বেঘোরে প্রাণ হারালেন আমার সেজ কাকু! পুলিশ প্রশাসনের আরও কড়া হওয়া উচিত ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ে। ট্রাফিক সিগন্যাল ভাঙলে বড়সড়ো ফাইন করা উচিত! এর বেশি কি আর বলব! ওই চালকের বেপরোয়া মনোভাবের জন্যই আমরা কাকুকে হারালাম। আর কোন পরিবারের সঙ্গে যাতে এমন না হয়, সেটা নিশ্চিত করা উচিত পুলিশ প্রশাসনের।”