দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৬ মে: গত শুক্রবার (৩ মে) মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের ‘মাতৃমা’ বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন মেদিনীপুর সদর ব্লকের বেনাডিহি (কোতোয়ালি থানার অধীন) গ্রামের বাসিন্দা, আসন্ন প্রসবা রিনা খাতুন। ওই দিন সন্ধ্যাতেই তিনি কন্যা সন্তান প্রসব করেন। তবে, সন্তান জন্ম দেওয়ার পরই রক্তক্ষরণ জনিত কারণে মাত্র ১৬-১৭ বছরের ওই প্রসূতির শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে! এরপরই তাঁকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের সিসিইউ-তে স্থানান্তরিত করা হয়। তবে, চিকিৎসকদের চেষ্টা ব্যর্থ করে রবিবার (৫ মে) সন্ধ্যা নাগাদ তাঁর মৃত্যু হয়!

thebengalpost.net
ইঁট বৃষ্টির নমুনা (মাতৃমা বিভাগের সামনে):

আর এরপরই, চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে মৃত প্রসূতির পরিবারের সদস্যরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। বাড়তে থাকে উত্তেজনা! পুলিশ কিছু বুঝে ওঠার আগেই রাত্রি ১০টা-সাড়ে ১০টা নাগাদ বাঁশ, লাঠিসোটা, ইঁট প্রভৃতি নিয়ে প্রায় ১৫-২০ জন যুবক হাসপাতালের মাতৃমা বিভাগের সামনে জড়ো হয়ে হামলা চালানো শুরু করে বলে অভিযোগ অন্যান্য রোগীর পরিজনদের। ভাঙা হয় মাতৃমা’র কাঁচের গেট, কয়েকটি ফ্যান প্রভৃতি। এর মধ্যেই কোতোয়ালি থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে শুরু হয় ইঁট-বৃষ্টি! পাল্টা ‘রণংদেহী’ মূর্তি ধারণ করে পুলিশও। লাঠি নিয়ে তেড়ে যায় বিশাল বাহিনী! পৌঁছন জেলা পুলিশের উচ্চ পদস্থ কর্তারাও। কয়েক মিনিটের জন্য মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের ‘মাতৃমা’ বিভাগের সামনের পরিস্থিতি রীতিমতো রণক্ষেত্রের আকার ধারণ করে! পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৭ জনকে আটক করে পুলিশ। এই ঘটনায় দু’জন পুলিশকর্মী জখম হন। একজনের আঘাত বেশ গুরুতর বলে জানা গেছে!

thebengalpost.net
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর মাতৃমা বিভাগের সামনে:

শেষ পর্যন্ত রবিবার রাত্রি ১১টা নাগাদ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। ৭ জনকে আটক করার পর বাকি বিক্ষোভকারীরা পালিয়ে যায়। ভাঙচুর, হামলা চালানোর অভিযোগে পরে ওই ৭ জনকেই গ্রেফতার করা হয় বলে পুলিশ একটি সূত্রে জানা গেছে। এদিকে, আজ, সোমবার মৃত প্রসূতির দেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হবে বলে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গেছে। ময়নাতদন্তের ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থাও নেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। ঘটনা ঘিরে এখনও থমথমে পরিবেশ রয়েছে মাতৃমা বিভাগের সামনে। রবিবার রাতের ওই ঘটনার সময়ে অন্যান্য রোগীর পরিজনেরাও ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন বলে জানিয়েছেন। চিকিৎসা-ব্যবস্থা নিয়ে তাঁদের সেরকম কোন অভিযোগ না থাকলেও নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যবহার নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে! ভবানী দণ্ডপাঠ, রেবতী হাজরা প্রমুখ পরিজনেরা বলেন, “ওনারা চিকিৎসা ভালো করছেন ঠিক আছে, কিন্তু সিস্টার দিদিরা (নার্সরা) আমাদের সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করেন। কোনো কিছু বুঝতে না পারলে বা আরেকবার জিজ্ঞেস করলেই উল্টাপাল্টা কথা বলেন। আর, আমাদের জুতো পরে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয় না, সেটা খুব ভালো কথা। তাহলে ডাক্তারবাবু, নার্সরা কেন জুতো পড়ে ভেতরে ঢুকবে? নিয়ম তো সবার জন্যই এক হবে। ওনাদের জুতোয় কি সোনা লাগানো আছে?” এই বিষয়ে অবশ্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে কোনো প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

thebengalpost.net
পুলিশ বাহিনী: