দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৯ আগস্ট: তিন বছর আগে পাস করে গেলেও হোস্টেলের রুম দখল করে ‘দাদাগিরি’ চালানোর অভিযোগ! শুধু তাই নয়, র্যাগিং, হুমকি থেকে মেয়েদের ‘অসম্মান’ করার মতো মারাত্মক অভিযোগও উঠেছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের TMCP ইউনিটের হেড মুস্তাফিজুর রহমান মল্লিক ও তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে। কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁদের বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগ করার পরেও, কোনও পদক্ষেপ না নেওয়ায় বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা অবধি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষা (Principal) ড. মৌসুমী নন্দী-কে ঘেরাও করে বিক্ষোভ-অবস্থানে বসেন ডাক্তারি পড়ুয়া ও জুনিয়র চিকিৎসকরা। আন্দোলনের চাপে কলেজ কাউন্সিল (বা, কলেজ কর্তৃপক্ষ) এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক শেষে পড়ুয়াদের কিছু দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়। তার মধ্যে অন্যতম হল, অভিযুক্ত TMCP নেতা ডঃ মুস্তাফিজুর রহমান মল্লিককে অনির্দিষ্টকালের জন্য কলেজ ক্যাম্পাসে (হোস্টেল সহ) ঢুকতে ‘নিষেধ’ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদ চালিয়ে যাওয়ায় চিকিৎসকদের একাংশের কাছ থেকে হুমকি পেয়ে এবং দ্বিতীয় আরজি কর (RG Kar Medical College) হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করে, বৃহস্পতিবার দুপুরে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপালকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন মেডিক্যাল পড়ুয়া তথা জুনিয়র চিকিৎসকরা। সেখানেই জুনিয়র চিকিৎসকরা অভিযোগ করেন, “যদি এখন থেকেই আমরা প্রতিবাদ না করি, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজও হয়ে উঠতে পারে আর একটা আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ! এখানেও মেয়েদের কোনও সম্মান করা হয়না। অডিটোরিয়ামের ডায়াসে উঠে ‘আইটেম সং’-এ নাচতে বলা হয়! নানাভাবে র্যাগিং করা হয় মুস্তাফিজুর রহমান আর তাঁর দলবলদের নেতৃত্বে।” অভিযুক্ত মুস্তাফিজুর রহমান মল্লিক আরজি কর মেডিক্যালের বরখাস্ত অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের অত্যন্ত ‘ঘনিষ্ঠ’ বলেও বৃহস্পতিবার বিকেলে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তারি পড়ুয়া ও জুনিয়র চিকিৎসকেরা দাবি করেন। একইসঙ্গে, সন্দীপ ঘোষের সঙ্গে মুস্তাফিজুরের ছবি প্রকাশ করে বিস্ফোরক সব অভিযোগ করেন আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকরা। মুস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গেই অভিযোগ ওঠে তৌসিফ আলি, স্বপন দাস, মাক্রাম নায়েক, দেবতোষ মন্ডল, অর্পন বিশ্বাস, অশোক সরকার, সৈয়দ আনোয়ার আলি সহ অন্যান্য ডাক্তারি পড়ুয়া ও জুনিয়র চিকিৎসকদের বিরুদ্ধেও।
অনেকেই মনে করিয়ে দিচ্ছেন, সাম্প্রতিককালে দু’একবার মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের হোস্টেলে র্যাগিং এর অভিযোগ উঠলেও, এমন বিস্ফোরক সব অভিযোগ কখনও প্রকাশ্যে আসেনি। আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে আন্দোলন ও কর্মবিরতির মধ্যেই এদিন সঙ্গবদ্ধ হয়ে জুনিয়র চিকিৎসকরা ‘বিস্ফোরক’ সব অভিযোগ আনেন শাসকদলের ছাত্রসংগঠনের (TMCP) ওই চিকিৎসক-নেতা ও তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে! একাধিক জুনিয়র মহিলা চিকিৎসক সহ ইউজি ও পিজি’র ছাত্র-ছাত্রীরা বলেন, “হ্যাঁ, এটা ঠিক আমাদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে বলেই আজ এভাবে একত্রিত হয়ে প্রতিবাদ করতে বাধ্য হয়েছি। তবে, এর আগেও বিচ্ছিন্নভাবে অভিযোগ করা হয়েছে। তাতে কর্তৃপক্ষ ভ্রুক্ষেপ করেননি!” সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ প্রিন্সিপাল ডঃ মৌসুমী নন্দী বলেন, “কিছু অভিযোগ ছিল আমাদের হাউসস্টাফ, ইন্টার্ন, জুনিয়র চিকিৎসক সহ পড়ুয়াদের। কলেজের পরিবেশ-পরিস্থিতি যাতে আগের মতোই সুস্থ-সুন্দর থাকে, সেজন্য আজই কলেজ কাউন্সিলের বৈঠকে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পড়ুয়া তথা জুনিয়র চিকিৎসকদের নিরাপত্তার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বাকি সমস্ত অভিযোগের ক্ষেত্রে আমরা তদন্ত কমিটি গড়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করব।” ‘অভিযুক্ত’ মুস্তাফিজুর রহমান মল্লিক-কে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফোন করা হলেও, ফোন ধরেননি!