দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৪ জানুয়ারি: বুধবার (৮ জানুয়ারি) রাতে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের মাতৃমা বিভাগে সিজারের পরই একে একে অসুস্থ হয়ে পড়েন ৫ জন প্রসূতি। তাঁদের মধ্যেই গড়বেতা থানা এলাকার বাসিন্দা মামনি রুইদাসের মৃত্যু হয় শুক্রবার ভোরে। মাম্পি সিং (খড়্গপুরে শ্বশুরবাড়ি এবং শালবনীতে বাপের বাড়ি); নাসরিন খাতুন (কেশপুর) এবং মীনায়ারা বিবি (কেশপুর) সঙ্কটজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন কলকাতার পিজি (SSKM) হাসপাতালে। মাম্পি ও নাসরিন ভেন্টিলেশনে কার্যত মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন বলে জানা গেছে। তুলনায় কিছুটা ভালো আছেন মীনায়ারা। তবে, তিনিও পুরোপুরি বিপদমুক্ত নন। তিনজনেরই কিডনির অবস্থা অত্যন্ত খারাপ বলে জানা গেছে। চলছে ডায়ালিসিস। ৫ জনের মধ্যে একমাত্র ভালো আছেন বেলদা সংলগ্ন খাকুড়দার বাসিন্দা, বছর ২৪-র রেখা সাউ। তিনি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজেই চিকিৎসাধীন। তাঁর স্বামী, পেশায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটারের শিক্ষক সন্তোষ সাউ মঙ্গলবার বিকেলে জানান, “ওই রাতে আমাকে স্যালাইন কিনে আনতে বলা হয়েছিল! এখন মনে হচ্ছে সেজন্যই আমার স্ত্রী এখনও সুস্থ আছে।” তবে, ভালো নেই রেখা-সন্তোষের সদ্যজাত পুত্রসন্তান! মেডিক্যাল কলেজের NICU-তে ভেন্টিলেশন সাপোর্টে রাখা হয়েছে তাকে।
এদিকে, মামনির ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, তাঁর গোটা শরীরে সংক্রমণ (Infection) ছড়িয়ে পড়ে বা সেপটিক শক হয়। আর তা থেকেই শরীরের রক্ত জমাট বেঁধে যায় এবং কিডনি সহ সমস্ত অঙ্গ বিকল হয়ে পড়ে। এরপর, মাল্টি অরগ্যান ফেলিওর হয়ে মৃত্যু হয় বছর ২২-র মামনি-র। এক্ষেত্রে, নিষিদ্ধ সংস্থার আরএল স্যালাইনকে যেমন দায়ী করা হচ্ছে; ঠিক তেমনই জুনিয়র চিকিৎসকদের কাঁচা হাতের অস্ত্রপচারকেও সন্দেহের বাইরে রাখা হচ্ছে না! সেই ঘটনারই তদন্ত করতে মঙ্গলবার দুপুরে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে পৌঁছয় সিআইডি-র একটি দল। ২ জন পিজিটি, ৪ জন নার্সকে জিজ্ঞাসাবাদ করে CID। সুপার জয়ন্ত কুমার রাউতের রুমে বেলা সাড়ে ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলে জিজ্ঞাসাবাদ। মনে করা হচ্ছে ওই রাতে এই দুই পিজিটি-ই অস্ত্রপচার করেছিলেন। সেই সঙ্গে ওই রাতে দায়িত্বপ্রাপ্ত RMO সৌমেন দাস এবং MSVP (সুপার) জয়ন্ত কুমার রাউত-কেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় স্ত্রী ও প্রসূতি বিভাগের প্রধান মহম্মদ আলাউদ্দিন সহ দায়িত্বপ্রাপ্ত দু’জন সিনিয়র চিকিৎসককেও। সিআইডি-র টিমে ছিলেন DSP পদমর্যাদার এক পুলিশ আধিকারিক সহ মোট ৫ জন। জিজ্ঞাসাবাদের পর বেশ কিছু তথ্য সংগ্রহ করে সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ তাঁরা বেরিয়ে যান। সুপার জয়ন্ত রাউত বলেন, “তদন্তকারী দল এসেছিলেন। যাঁদের যাঁদের প্রয়োজন হয়েছে তাঁদের ডেকে পাঠিয়েছিলেন। তাঁরা এসেছিলেন। এর থেকে বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়।”
যদিও, সূত্রের খবর অনুযায়ী এদিন তদন্তকারীদের কড়া প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের ওই রাতের দায়িত্বপ্রাপ্ত আরএমও-কে। তাঁকে প্রশ্ন করা হয় কেন তিনি ওই দিন অস্ত্রোপচার চলাকালীন অনুপস্থিত ছিলেন? প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়, প্রসূতি বিভাগের সিনিয়র চিকিৎসকদের এবং হাসপাতাল সুপারকেও। জানা যায়, আগামীকাল সিআইডি-র টিম কথা বলবে মৃত ও অসুস্থ প্রসূতিদের পরিবারের সাথে। তিনদিনের মধ্যেই সিআইডি (CID) টিম সরকারের হাতে রিপোর্ট তুলে দিতে পারে বলে সূত্রের খবর। “সিআইডি যেন সঠিক তদন্ত করে, মামনি-র আত্মা যেন শান্তি পায়”; এমনটাই চেয়েছেন মামনি-র স্বামী দেবাশিস রুইদাস।