দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ জানুয়ারি: প্রসূতি মৃত্যু তথা চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগের তদন্তে সোমবার দুপুরে ফের মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পৌঁছন সিআইডি-র ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল। এদিন প্রথমে মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ (প্রিন্সিপাল) মৌসুমী নন্দীর সাথে দেখা করে, গোয়েন্দারা যান নবনিযুক্ত সুপার তথা উপাধ্যক্ষ (MSVP) ইন্দ্রনীল সেনের কার্যালয়ে। প্রিন্সিপাল এবং সুপারের কাছ থেকে এদিন আরও নথি সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সুপারের রুম থেকে বেরিয়ে ছয় সদস্যের সিআইডি প্রতিনিধি দল প্রবেশ করেন মেদিনীপুর মেডিক্যালের নার্সিং হোস্টেলে। জানা যায়, প্রায় ঘন্টাখানেক নার্সিং হোস্টেলে থাকার পর, সেখান থেকি বেরিয়ে সিআইডি-র প্রতিনিধিদল পুনরায় মাতৃমা বিভাগে যান। সেখানে ১৫-২০মি: ধরে তদন্ত চালানোর পর বিকেল ৩টা নাগাদ মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ মৌসুমী নন্দীর চেম্বারে প্রবেশ করেন গোয়েন্দারা। সোমবার সকালেও অধ্যক্ষের রুমে গিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছিলেন সিআইডি-র তদন্তকারী দল।
মনে করা হচ্ছে, দ্রুত তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ করার জন্যই সিআইডি-র এই তৎপরতা। এ নিয়ে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী জানান, “সিআইডি নিজের কাজ করছে।” অপরদিকে, সাসপেন্ডেড ৭ জন জুনিয়র চিকিৎসকদের তরফে শাস্তি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ও মুখ্যসচিবের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে জুনিয়র চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, “ওঁরা ব্যক্তিগতভাবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন। আমরা মিলিতভবে DME, DHS, NMC-র কাছে আবেদন জানিয়েছি সাসপেনশন প্রত্যাহারের জন্য। কারণ, জুনিয়র চিকিৎসক বা পিজিটি-রা নিজেদের দায়িত্ব পালন করেছেন মাত্র। সেখানে কোনরকম শোকজ ছাড়া এই সাসপেনশন একেবারেই অপ্রত্যাশিত। আশা করছি মানবিক সরকার বিষয়টি বিবেচনা করবেন।”
অন্যদিকে, এদিনই মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে পৌঁছে জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে দাঁড়িয়েছেন আইএমএ-র রাজ্য শাখার প্রতিনিধিরা। মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপালের সাথে কথা বলার পর জুনিয়র ডাক্তারদের সাথেও কথা বলেন তাঁরা। প্রতিনিধি দলে রয়েছেন আইএমএ-র রাজ্য শাখার সভাপতি চন্দন ঘোষাল, সহ সভাপতি চিরঞ্জীব মুখার্জি, রতন চক্রবর্তী, জয়েন্ট সেক্রেটারি ফাইন্যান্স শুভদীপ বোস এবং মেদিনীপুর শাখার সভাপতি কৃপাসিন্ধু গাঁতাইত। তাঁরা জুনিয়র ডাক্তারদের সাথে কথা বলার পর হাসপাতাল সুপার ইন্দ্রনীল সেন এবং মুখ্য আধিকারিকের সাথেও কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন। চন্দন ঘোষাল বলেন, “তথ্য সংগ্রহ করে ডিএমই-র কাছে যাওয়া হবে। প্রয়োজনে মুখ্যমন্ত্রীর সাথেও দেখা করে জুনিয়র ডাক্তারদের সমস্যার কথা জানাবো।” তিনি প্রশ্ন তোলেন, সাসপেন্ড করার আগে শোকজ করা হয়নি কেন জুনিয়র বা সিনিয়ার ডাক্তারদের? শোকজ করলে নিশ্চয়ই তার জবাব দিতেন তাঁরা। ইতিমধ্যেই, মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল ডিএমই (স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা)-কে চিঠি দিয়েছেন পিজিটি পড়ুয়া বা জুনিয়র চিকিৎসকদের শাস্তির বিষয়টি সহানুভূতির সাথে বিবেচনা করা তথা প্রত্যাহার করার জন্য। এদিকে, পড়ুয়াদের তরফে জানানো হয়েছে, যতক্ষণ না অবধি সাসপেনশন প্রত্যাহারের বিষয়টি সুনিশ্চিত হচ্ছে, ততক্ষণ তাঁরা অবস্থান-বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন। তবে, রোগী পরিষেবা সচল রেখেই তাঁরা এই আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলেও জানিয়েছেন।