দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৪ জানুয়ারি: রাতের অন্ধকারে বেনজির দুষ্কৃতী-তাণ্ডব দেখলো শহর মেদিনীপুর! ইলেকট্রিক লাইন কেটে দিয়ে, মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে গভীর রাতে দু-দুটি JCB লাগিয়ে মেদিনীপুর শহরের একাধিক সুপ্রাচীন দোকান (বা, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান) ভেঙে গুঁড়িয়ে দিল দুষ্কৃতীরা। তাও আবার মেদিনীপুর কোতোয়ালী থানার নাকের ডগায়! ঘটনা ঘিরে রবিবার ভোর রাত থেকেই তীব্র চাঞ্চল্য পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা শহর মেদিনীপুরের গোলাকুঁয়াচক এলাকায়। এদিকে, দুষ্কৃতী দিয়ে জায়গা জবরদখলের এই অপচেষ্টার বিরুদ্ধে শহরবাসী এককাট্টা হয়েছেন! এমনকি শহরের বহুতল নির্মাণকারী বা ব্যবসায়ীরাও (প্রোমোটাররাও) প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তরফে থানায় লিখিত অভিযোগের পর ইতিমধ্যে কোতোয়ালী থানার পুলিশ দু’জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছেন।

thebengalpost.net
ঘটনা ঘিরে উত্তেজনা এলাকায় :

আজ (১৪ জানুয়ারি), রবিবার গভীর রাতে (রাত্রি দেড়টা নাগাদ) ঘটনাটি ঘটেছে মেদিনীপুর শহরের গোলাকুঁয়াচক এলাকায়। এই এলাকায় রাস্তার পাশে থাকা (অরোরা সিনেমার কাছে) সুপ্রাচীন ওস্তাগার জনতা ড্রাই ক্লিনার্স, সুধাংশু টেলর এবং একটি মোবাইল দোকান রাতের অন্ধকারে দু’টি JCB নিয়ে এসে ৪০-৫০ জন দুষ্কৃতী ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ। অপর একটি দোকান (এভেল টেলর)-র মালিক ঘটনার প্রতিবাদ করতে গেলে তাঁকে বন্দুক নিয়ে দুষ্কৃতীরা তাড়া করে বলেও অভিযোগ! জনতা ড্রাই ক্লিনার্স, সুধাংশু টেলর এবং ওই মোবাইল দোকানের তরফে যথাক্রমে প্রদীপ সিট, হিমাংশু দাস ও সৌরভ সাউ বলেন, “গত ৫০-৬০ বছর ধরে আমরা এই খাস জায়গার উপর দোকান তৈরি করে ব্যবসা করছি। প্রমোটারদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বরুণ সেন রাতের অন্ধকারে, মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে দুষ্কৃতীদের দিয়ে আমাদের দোকান ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। সব মিলিয়ে আমাদের প্রায় এক কোটি টাকার উপর ক্ষতি হয়েছে!” এই ঘটনার বিরুদ্ধে রবিবার সকালেই কোতোয়ালী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। বরুণ সেন, নাজির আলী ও পারভেজ কিপরিয়া-র বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। এর মধ্যে, ওই তিনটি দোকানের পিছনের জায়গাটির মালিক বরুণ সেন। তার সঙ্গে ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিন ধরে জায়গা নিয়ে মামলা চলছিল বলে সূত্রের খবর। অপরদিকে, পারভেজ একজন প্রোমোটার বলে জানা গেছে। নাজিরও জায়গা-জমির ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বলেও জানা যায়। তিনজনই মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দা বলে জানা গেছে। ঘটনায় আতঙ্কিত শহরবাসীর অভিযোগ, জোর করে জায়গা দখল করে, বহুতল নির্মাণের জন্যই এই দুষ্কৃতী তাণ্ডব চালানো হয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদে এককাট্টা হয়েছেন মেদিনীপুর শহরবাসী। এমনকি শহরের বৈধ প্রোমোটাররা তথা প্রোমোটারদের জেলা অ্যাসোসিয়েশনের তরফেও ঘটনার নিন্দা করা হয়েছে।

পশ্চিম মেদিনীপুর প্রোমোটার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শান্তনু চক্রবর্ত্তী বলেন, “এই ঘটনায় যদি কোন প্রোমোটার জড়িত থাকে, তার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” মেদিনীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন খান বলেছেন, “রাতের অন্ধকারে এই ধরনের ঘটনা বরদাস্ত করা হবে না। দোষীদের কঠোর শাস্তির আবেদন করছি পুলিশ-প্রশাসনের কাছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকব।” ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের তরফে কোতোয়ালী থানায় বরুণ সেন, নাজির আলী ও পারভেজ কিপরিয়া-র বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে কোতোয়ালী থানার পুলিশ। জানা গেছে, হবিবপুরের বাসিন্দা বরুণ সেন, সিপাইবাজার বাসিন্দা পারভেজ কিপরিয়া এবং কুলদার বাসিন্দা নাজির আলী ঘটনার পর থেকেই পলাতক! তবে, পুলিশের তরফে পারভেজের এক আত্মীয় সহ দু’জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চালানো হচ্ছে বলে সূত্রের খবর। অন্যদিকে এই ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সোচ্চার হয়ে সিপিআইএমের মেদিনীপুর শহর পূর্ব এরিয়া কমিটির তরফে কোতোয়ালি থানায় ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে। সম্পাদক কুন্দন গোপ দোষীদের অবিলম্বে শাস্তির দাবি করেছেন। বিজেপির জেলা মুখপাত্র অরূপ দাস, এই ঘটনার সঙ্গে পুলিশ ও শাসকদল জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন। যদিও, স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর (১২নং ওয়ার্ডের) টোটন শাসপিল্লি অভিযোগ অস্বীকার করে দোষীদের চরম শাস্তির দাবি করেছেন। শাসকদলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, “তৃণমূলের জেলা সভাপতি হিসেবে নয়, মেদিনীপুর শহরের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। জেলা পুলিশের কাছে আবেদন, এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেককে খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের আইনি সাহায্যের বিষয়েও আমাদের লিগ্যাল সেল এগিয়ে এসেছে।”

thebengalpost.net
ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন পুলিশ ও পৌর-প্রশাসনের আধিকারিক এবং প্রোমোটার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা :