দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১ ডিসেম্বর: প্রায় ৬ বছর পর জাঁকজমক সহকারে নবীন বরণ অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর কলেজে। আসার কথা ছিল মুম্বই ও কলকাতার নামিদামী শিল্পীদের। নামকরা একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থাকে অনুষ্ঠানের জন্য অগ্রিম বা অ্যাডভান্সও দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। শনিবার সকাল ১১টা থেকে রাত্রি ১০টা অবধি কলেজ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। শেষ মুহূর্তে ভেস্তে যায় সব কিছু! ওই সংস্থাকে শনিবার সকালে জানানো হয়, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে’ অনুষ্ঠান আয়োজন করা সম্ভব নয়। এই বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। যদিও আসল কারণ যে ‘দুর্যোগ’ নয়, বরং শাসকদলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ‘দূর-যোগ’ (বা, কোন্দল); তা মানছেন কলেজের ছাত্র-ছাত্রী থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং স্থানীয় বাসিন্দারাও। তবে, তাঁরা কেউই এই বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে রাজি নন!
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কেশপুরের রাজনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কলেজেও দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ চরমে উঠেছে গত কয়েক বছর ধরে। আর ঠিক সেই কারণেই প্রায় ৬ বছর ধরে নবীন বরণের অনুষ্ঠান লাটে উঠেছে! বর্তমানে কলেজে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে চরম বিবাদ। দুই গোষ্ঠীই চেয়েছিল অনুষ্ঠানের রাশ তাঁদের হাতে থাকুক। এক পক্ষের অভিযোগ, বিস্তারিত আলোচনা না করেই অনুষ্ঠান ঠিক করা হয়। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তার দায় কে নেবে? অপরপক্ষের অভিযোগ , কলেজে নানা বেআইনি কাজ করা হচ্ছে। এছাড়াও, নতুন ভবন (বিল্ডিং) তৈরি নিয়েও নানা অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ তাঁদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পড়ুয়া বলেন, কাজের বরাত পাওয়া নিয়ে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ঝামেলা! তবে, কলেজের উন্নয়ন বা পড়ুয়াদের ভালো -মন্দ নিয়ে নেতাদের কোনও মাথা ব্যথা নেই। আসলে কলেজের পড়ুয়াদের সামনে রেখে ক্ষমতা দখলের লড়াই চলছে। তবে, এদিন প্রায় চার হাজার পড়ুয়াকে নিয়ে নবীন বরণ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয় বলে জানিয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষ ডঃ দীপক কুমার ভূঁইয়া।
জেলা তৃণমূলের এক নেতা বলেন, “দুই গোষ্ঠীর ঝামেলার জন্য মুখ পুড়ছে দলের। মূলত ব্লক নেতৃত্বের একাংশের সঙ্গে বিধায়ক গোষ্ঠীর মধ্যে কোন্দল। সাধারণ মানুষ যা ভালো চোখে দেখছে না! দলের তরফে কড়া ব্যবস্থার প্রয়োজন রয়েছে। শুনেছি, দুই গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে পুলিশ ও প্রশাসনের তরফে অনুষ্ঠান বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়।” কেশপুর ব্লক তৃণমূলের সভাপতি প্রদ্যৎ পাঁজা বলেন, “গোষ্ঠী কোন্দলের ব্যপার নেই। সকলের সঙ্গে আলোচনা করে অনুষ্ঠানের দিনক্ষণ ঠিক হবে।” কেশপুরের বিধায়ক শিউলি সাহা বলেন, “কি কারণে অনুষ্ঠান বন্ধ হল। তা জানা নেই। তবে কলেজ নিয়ে নানা তথ্য সামনে এসেছে। শিক্ষা দপ্তরে জানিয়েছি।” কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, “ছাত্রছাত্রীদের উদ্যোগে অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। বিশেষ কারণে সেই অনুষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে। এমনটা না হলেই ভালো হত! তবে, বিভাগীয় অধ্যাপক-অধ্যাপিকা ও প্রায় চার হাজার ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতিতে ও পরিচালন সমিতির সহযোগিতায় জাঁকজমক ও আড়ম্বরপূর্ণ ভাবে নবীন বরণ উৎসব পালিত হয়েছে।”