দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, মেদিনীপুর, ২ নভেম্বর: তিনি মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি। আর জি কর আবহে মেদিনীপুর বিধানসভা ধরে রাখতে তাঁর উপরেই ‘আস্থা’ রেখেছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড (বা, ‘সেনাপতি’) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মেদিনীপুরের জেলা সভাপতি তথা উপনির্বাচনের প্রার্থী সেই সুজয় হাজরার প্রচারে নামার জন্য উদগ্রীব ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের নেতানেত্রীরাও! খোদ ঘাটালের জেলা সভাপতি আশিস হুদাইত আগেই প্রচারে নেমে পড়েছেন। ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের অধীন বিভিন্ন ব্লকের সভাপতিরাও নাকি ‘দায়িত্ব’ নিয়ে মাঠে নামার জন্য উদগ্রীব হয়ে ছিলেন! কে নেই সেই তালিকায়! সবংয়ের ব্লক সভাপতি আবু কালাম বক্স, ডেবরার ব্লক সভাপতি প্রদীপ কর থেকে কেশপুরের ব্লক সভাপতি প্রদ্যোৎ পাঁজা, খড়্গপুর ২নং ব্লকের সভাপতি তৃষিত মাইতি কিংবা চন্দ্রকোনা-২নং ব্লকের সভাপতি হীরালাল ঘোষ প্রমুখ। সেই সঙ্গে দাঁতনের বিধায়ক বিক্রম চন্দ্র প্রধান, নারায়ণগড়ের বিধায়ক সূর্যকান্ত অট্ট, খড়্গপুরের পৌরপ্রধান কল্যাণী ঘোষ প্রমুখও দলের জেলা সভাপতি তথা মেদিনীপুর বিধানসভা উপনির্বাচনের প্রার্থী সুজয় হাজরা-র জন্য প্রচার করতে চাইছেন বলে খবর দলীয় সূত্রে। শুক্রবার সন্ধ্যায় তাই দলের জেলা কার্যালয়ে একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠকে সেই সমস্ত নেতাদেরই ‘দায়িত্ব’ বন্টন করে দেওয়া হয়েছে দলের নির্বাচনী কমিটির চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক দীনেন রায় এবং প্রার্থী তথা জেলা সভাপতি সুজয় হাজরার উপস্থিতিতে।

thebengalpost.net
মণিদহতে সুজয়-দীনেনকে অভ্যর্থনা:

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):

জানা গেছে, মেদিনীপুর পৌরসভার ২৫টি ওয়ার্ডের জন্য প্রায় ৩০ জন নেতা-নেত্রীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে অনেকেই আবার ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন কিংবা জনপ্রতিনিধি। তাঁদের সঙ্গে থাকছেন মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের বিভিন্ন ব্লকের সভাপতি, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কিংবা জেলা পরিষদের সদস্যরাও। দায়িত্ব পাওয়ার পর শনিবার থেকেই ‘মাঠে নেমে পড়েছেন’ তাঁদের মধ্যে অনেকেই। সূত্রের খবর অনুযায়ী, মেদিনীপুর পৌরসভার ১৮নং ওয়ার্ডের (কাউন্সিলর হলেন মেদিনীপুরের পৌরপ্রধান সৌমেন খান) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে খড়গপুর ২নং ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তৃষিত মাইতিকে। ২নং ওয়ার্ডের (জেলা যুব সভিপতি নির্মাল্য চক্রবর্তীর ওয়ার্ড) দায়িত্বে থাকছেন মেদিনীপুর সদর ব্লক (এ) তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি মুকুল সামন্ত। ৭ ও ১৯নং ওয়ার্ডের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে খড়্গপুরের পৌরপ্রধান কল্যাণী ঘোষকে। ৮নং ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকছেন চন্দ্রকোনা-২নং ব্লকের সভাপতি হীরালাল ঘোষ। ৯নং ওয়ার্ডের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কেশপুরের ব্লক সভাপতি প্রদ্যোৎ পাঁজাকে। এমনকি প্রার্থী সুজয় হাজরা-র নিজের ওয়ার্ডেও (কাউন্সিলর তাঁর স্ত্রী মৌসুমী হাজরা) দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে দু’জনের মধ্যে। তাঁদের মধ্যে একজন জেলা পরিষদের সভাধিপতি প্রতিভা মাইতি এবং অপরজন জেলা পরিষদের সদস্যা তথা মেদিনীপুর সদর পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভানেত্রী শ্রাবন্তী মাইতি। এছাড়াও, বিভিন্ন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকছেন জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ তথা সবং ব্লক তৃণমূলের সভাপতি আবু কালাম বক্স; ডেবরা পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তথা ব্লক তৃণমূলের সভাপতি প্রদীপ কর; দাঁতন ১নং, ২নং এবং মোহনপুর ব্লক তৃণমূলের সভাপতি যথাক্রমে- ইফতিকার আলি, প্রতুল দাস এবং মানিক মাইতি প্রমুখ। এছাড়াও, বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে গড়বেতার বিধায়ক উত্তরা সিংহ হাজরা, নারায়ণগড়ের বিধায়ক সূর্যকান্ত অট্ট, দাঁতনের বিধায়ক বিক্রম চন্দ্র প্রধান, ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি আশিস হুদাইতদেরও।

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):

এ নিয়ে বিরোধীরা অবশ্য নানা কটাক্ষ শুরু করে দিয়েছেন ইতিমধ্যেই। বিজেপি-র জেলা মুখপাত্র অরূপ দাসের কটাক্ষ, “লোকসভা নির্বাচনে শহরে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার ভোটে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। তার উপর আছে ওদের জুন-গোষ্ঠী আর সুজয়-গোষ্ঠীর কোন্দল! ফলে প্রার্থী হয়তো ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। তাই ঘাটাল, দাঁতন থেকেও নেতাদের উড়িয়ে আনা হচ্ছে! যদিও এ নিয়ে আমাদের বলার কিছু নেই। মেদিনীপুর শহরে আমরা বিপুল ব্যবধানে লিড করব। শহরের মানুষ আর জি কর কাণ্ড, নারী নির্যাতন আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছেন!” বিজেপি-র প্রার্থী শুভজিৎ রায় আবার বলেন, “এই সমস্ত ওদের দলীয় বিষয়। আমাদের কিছু বলার নেই। তবে, যতদূর মনে পড়ছে এই পর্যবেক্ষক নিয়োগ করার পরিকল্পনা ওঁদের শিখিয়েছিলেন শুভেন্দু দাই। ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে খড়্গপুর সদরের বিধানসভা উপনির্বাচনে শুভেন্দু অধিকারীই বিভিন্ন ওয়ার্ডে পর্যবেক্ষক নিয়োগ করে প্রদীপ সরকারকে জিতিয়ে এনেছিলেন! তৃণমূল হয়তো সেই পদ্ধতি অবলম্বন করেই ভোট বৈতরণী পার হতে চাইছে। যদিও, মেদিনীপুর বিধানসভার মানুষ আমাদের সঙ্গেই আছেন। শুধু শান্তিপূর্ণ ভোটটা করতে দিলেই মানুষ জবাব দিয়ে দেবে।” বিজেপি-র কটাক্ষকে অবশ্য ‘স্ট্রেট ড্রাইভ’ করে উড়িয়ে দিয়েছেন সুজয়। তিনি বলেন, “গোটা জেলার সমস্ত নেতা-নেত্রী এবং জনপ্রতিনিধিরাই উৎসবের মেজাজে এই উপনির্বাচনে কাজ করতে চাইছেন। এটা প্রার্থী হিসেবে আমার সৌভাগ্য! তাই, দলের তরফে সকলকেই দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। সে আমার নিজের ওয়ার্ড হোক কিংবা শহর-সভাপতি বিশ্বনাথ পাণ্ডবের ওয়ার্ড অথবা শহর মহিলা সভানেত্রী মৌ রায়ের ওয়ার্ড কিংবা পৌরপ্রধান সৌমেন খানের ওয়ার্ড।” বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে নাকি আপনারা বেশ চাপে আছেন? সুজয় বলেন, “কোথাও কোনও চাপ নেই। শহরের প্রতিটি ওয়ার্ড কিংবা গ্রামের প্রতিটি অঞ্চল- মানুষ উন্মুখ হয়ে আছেন উৎসবের মেজাজে ভোট দেবেন বলে! বাকিটা তো আপনারা প্রচারের ছবি দেখে বুঝতেই পারছেন।” লোকসভা নির্বাচনে আপনারা পিছিয়ে ছিলেন, উপনির্বাচনে তাহলে শহরের ‘খেলা’ ঘুরছে? সুজয়ের জবাব, “প্রতিটি ওয়ার্ডের বাসিন্দারাই ছক্কা হাঁকানোর জন্য প্রস্তুত! লড়াই শুধু, কোন ওয়ার্ডে কত ব্যবধান হয় তা নিয়েই!” ২২নং ওয়ার্ডে (সুজয়ের নিজের ওয়ার্ড) কি আবারও পৌরসভার মতো ৩ হাজারের লিড হবে? আত্মবিশ্বাসী সুজয়ের কভার-ড্রাইভ, “সেটা ওয়ার্ডবাসীই ঠিক করবেন!” অন্যদিকে, শনিবার সকাল থেকে মেদিনীপুর সদর ব্লকের ৩নং মণিদহ অঞ্চলে জোরকদমে প্রচার করেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী সুজয় হাজরা। সকালে স্থানীয় কালীমন্দিরে পুজো দিয়ে মণিদহ অঞ্চলের নদী তীরবর্তী এলাকাগুলিতে প্রচার করেন তিনি। তারপর পৌঁছে যান জঙ্গল অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে। সেখানে জাহের থানে পুজোয় দেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী। এরপর, বাঁদনা পরব উপলক্ষে এলাকাবাসীদের সঙ্গে নৃত্যেও মেতে ওঠেন তিনি। তৃণমূলের জেলা সভপতি তথা প্রার্থী সুজয় হাজরা ছাড়াও বাজনার তালে তালে নৃত্যে মেতে ওঠেন তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান ও বিধায়ক দীনেন রায় সহ অন্যান্য দলীয় নেতৃত্ব ও কর্মীরা। নির্বাচনী কমিটির চেয়ারম্যান দীনেন বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নে খুশি এই সমস্ত এলাকার মানুষজন। আর তাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমাদের প্রচারে এগিয়ে আসছেন তাঁরা। আমাদের প্রার্থী সুজয়ের প্রচার চলছে রীতিমত উৎসবের মেজাজে।”

thebengalpost.net
মেদিনীপুর গ্রামীণের প্রচারে: