দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৫ মে: প্রথম থেকেই দুই ‘বন্ধু’র লড়াই ছিল সেয়ানে-সেয়ানে! দিলীপের ছেড়ে যাওয়া মেদিনীপুরের ‘মাটি’ আসানসোলের অগ্নিমিত্রার কাছে ছিল নতুন। অন্যদিকে, গোষ্ঠী-কোন্দল আর ৮৬ হাজারের ‘ব্যবধান’ মিটিয়ে জুনের পক্ষেও ‘জয়ী’ হওয়া যে সহজ কথা নয়; তা বুঝেছিলেন তৃণমূলের জেলা থেকে রাজ্য নেতৃত্বও। তাই, গত দু’মাস মাটি কামড়ে পড়েছিলেন দু’জনই। অবশেষ, শনিবার (২৫ মে) অগ্নি-পরীক্ষায় বসলেন দুই ‘বন্ধু’ তথা বিজেপি-র অগ্নিমিত্রা পাল এবং তৃণমূলের জুন মালিয়া। দিনের শেষে নারায়ণগড়ের বিধায়ক সূর্য অট্টের হাত থেকে মিষ্টি খেয়ে জুন বললেন, “ভোট ভাল হয়েছে। মানুষ উৎসবের মেজাজে ভোট দিয়েছে। খুব ভাল লাগছে, বিরোধীদের প্ররোচনায় আমাদের কর্মী-সমর্থকেরা বা সাধারণ মানুষ পা দেয়নি! আমি তো জয়ের ব্যাপারে ২০০ শতাংশ আশাবাদী।” সকালে অবশ্য এই জুন মালিয়া-ই মেদিনীপুর শহরের চার্চ স্কুল এবং তলকুই জুনিয়র হাই স্কুলে মেজাজ হারিয়েছিলেন! কখনো ইভিএমে বিরোধী দুই প্রার্থীর বোতামে কালি থাকার অভিযোগ নিয়ে, আবার কখনও কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে বচসা কিংবা বিজেপি এজেন্টের সঙ্গে তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে ‘বুথ’ থেকে রাগে গজ গজ করতে করতে বেরিয়েছিলেন জুন। সেই জুন-ই আবার দুপুরে ফুরফুরে মেজাজে মেদনীপুর শহরের একটি দোকানে দাঁড়িয়ে আইসক্রিম খেয়েছেন। বলেছেন, “মানুষের উপর আমার আস্থা আছে।” সেই ‘আস্থা’-র উপর ‘ভরসা’ করেই হয়তো দিনের শেষে নারায়ণগড়ের অফিসে বসে মিষ্টিমুখ করলেন জুন! অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ যে, এই ‘নারায়ণগড়’ নিয়েই সব থেকে বেশি চিন্তায় ছিল তৃণমূল। নারায়ণগড়ের মানুষ ‘নিঃশব্দে’ কোথায় ভোট দিলেন তা অবশ্য বোঝা যাবে ৪ জুন!
অন্যদিকে, হিরণের মতোই অগ্নিমিত্রাও ‘টার্গেট’ করেছিলেন তৃণমূলের ‘শক্ত’ ঘাঁটিগুলিকেই! শুরু করেছিলেন, খড়্গপুর গ্রামীণের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বনপুরা গ্রাম দিয়ে। বলাই বাহুল্য, তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের প্রবল বিক্ষোভে বুথ অবধি পৌঁছতে পারেননি তিনি! যেতে দেওয়া হয়নি তাঁর সঙ্গে থাকা সাংবাদিকদেরও। শেষমেশ সেখান থেকে ফিরে যান অগ্নিমিত্রা। এরপর, খড়্গপুর শহরের তালবাগিচা হয়ে রওনা দেন কেশিয়াড়ির চাকলাতে। চাকলা আংশিক বুনিয়াদি বিদ্যালয়ের বুথে কলকাতা পুলিশের এক কর্মীকে ভোটারদের প্রভাবিত করার সময় হাতেনাতে পাকড়াও করেন অগ্নিমিত্রা! তিনি বুথে কি করছেন? সদুত্তর দিতে পারেননি সাদা পোশাকের ওই পুলিশ কর্মী। এরপর, সংখ্যালঘু্ অধ্যুষিত এই চাকলার তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরাও গো-ব্যাক স্লোগান দেন অগ্নিমিত্রাকে। মাঝখানে প্রায় একশো শতাংশ সংখ্যালঘু অধ্যুষিত দাঁতনের সাবড়াতে তৃণমূল বিজেপির সংঘর্ষে দুপক্ষের একাধিক কর্মী-সমর্থকেরা আহত হন। কর্মীদের পাশে দাঁড়াতে ছুটে যান অগ্নিমিত্রা। বিক্ষোভ হয় সেখানেও! দিনের শেষে খড়্গপুর শহরের ২৭নং ওয়ার্ডের সিস্টেম টেকনিক্যাল স্কুলের বুথেও তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন অগ্নিমিত্রা। ঘটনাচক্রে ওই ওয়ার্ডটিও তৃণমূলের দখলে এবং তাদের শক্ত ঘাঁটি হিসেবেই পরিচিত। তবে কি বেছে বেছে তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটিগুলিকেই টার্গেট করেছিলেন অগ্নিমিত্রা? ‘না’ বলেননি অগ্নি। নিজেদের শক্ত জায়গাগুলিতে না গিয়ে, তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটিগুলিতে যাওয়া যে তাঁর ‘যুদ্ধ-জয়ের’ অন্যতম পরিকল্পনা ছিল তা বলাই বাহুল্য! দিনের শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে আত্মবিশ্বাসী অগ্নিমিত্রা জানিয়েছেন, “এটুকুই বুঝলাম হারের ভয়ে আতঙ্কিত তৃণমূল দিনভর অশান্তি করে গেল! তবে, মানুষ মোদীজির পক্ষেই ভোট দিয়েছেন। জেতার বিষয়ে এক হাজার শতাংশ নিশ্চিত।”
এর মধ্যেই, শনিবার বেলা ১টা নাগাদ খড়্গপুর শহরের শেরশা স্টেডিয়ামের ২৬৩নং বুথে ভোট দিতে এসেছিলেন বিদায়ী সাংসদ দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, ” ক্যান্ডিডেটদের আটকে, ভোটারদের ভোট দেওয়া থেকে আটকানো যায়না। বর্ধমানে আমাকেও আটকানোর চেষ্টা করেছিল। তাতে ভোটারদের ভোটদান থেকে আটকানো সম্ভব হয়নি!” আর, তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, “সংখ্যালঘু অধ্যুষিত কিছু এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী অতি সক্রিয়তা দেখিয়েছে। এলাকার মহিলা ভোটারদের সঙ্গে অশ্লীল ব্যবহার করেছে। আর, বিজেপি-র প্রার্থী তো দলবল নিয়ে বুথে ঢোকার চেষ্টা করেছেন। ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে! মানুষ প্রতিরোধ করেছেন। মেদিনীপুর লোকসভা আসনে আমরা কমপক্ষে এক লক্ষ ভোটে জিতব!” সব শুনে বাম প্রার্থী বিপ্লব ভট্ট বলেন, “কেন্দ্রীয় বাহিনী আর নির্বাচন কমিশন ছিল নিষ্ক্রিয়। তা সত্ত্বেও মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছেন। মানুষের উপর আমাদের আস্থা আছে!”