দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩১ আগস্ট: “কর্তৃপক্ষ কিসের ভয়, মুস্তাফিজুর তোমার কে হয়?” স্লোগান তুলে শনিবার দুপুর থেকে ফের প্রিন্সিপালের রুমের বাইরে বিক্ষোভ-অবস্থানে বসলেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র চিকিৎসক ও ডাক্তারি পড়ুয়ারা। উল্লেখ্য যে, জুনিয়র চিকিৎসকদের র্যাগিং ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এবং তাঁদের আন্দোলনের চাপে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের TMCP ইউনিটের হেড তথা ‘অভিযুক্ত’ হাউসস্টাফ মুস্তাফিজুর রহমান মল্লিকের মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল ক্যাম্পাসে প্রবেশের উপর অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ কাউন্সিল। তবে, ২৪ ঘন্টা যেতে না যেতেই আর জি কর মেডিক্যালের ‘বরখাস্ত’ অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ‘ঘনিষ্ঠ’ মুস্তাফিজুর রহমানের উপর থেকে লিখিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয় কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি লিখিত বিবৃতিতে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল মৌসুমী নন্দী জানান, মুস্তাফিজুর রহমান এখনও মেডিক্যাল কলেজের একজন হাউসস্টাফ। তাই হাসপাতালে প্রবেশের ক্ষেত্রে তাঁর কোনও বাধা নেই। আর তারপরই, শনিবার দুপুর থেকে ফের প্রিন্সিপালের রুমের বাইরে বিক্ষোভ-অবস্থানে বসেন পড়ুয়া তথা জুনিয়র চিকিৎসকেরা। স্লোগান তুললেন, ” কলেজ কর্তৃপক্ষ কিসের ভয়, মুস্তাফিজুর তোমার কে হয়?” শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, প্রিন্সিপালের অনুপস্থিতিতে MSVP ডক্টর জয়ন্ত রাউতের নেতৃত্বে জরুরি বৈঠকে বসেছে কলেজ কাউন্সিল। অপরদিকে, নিজেদের দাবিতে অনড় জুনিয়র চিকিৎসকেরা। সন্দীপ ঘোষ ঘনিষ্ঠ ‘প্রভাবশালী’ মুস্তাফিজুর-কে মেদিনীপুর মেডিক্যাল থেকে বহিষ্কারের দাবি তুলেছেন জুনিয়র চিকিৎসক ও ডাক্তার পড়ুয়ারা। শুধু র্যাগিং, হুমকি, মেয়েদের ‘অসম্মান’ (আইটেম সংয়ে নাচতে বলা) বা বিভিন্নভাবে প্রভাব খাটানোই নয়; সম্পূর্ণ অনৈতিকভাবে বছরের পর বছর ধরে হাউসস্টাফশিপ চালিয়ে যাওয়া বা হোস্টেলের রুম দখল করে রাখার অভিযোগও আছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের TMCP ইউনিটের হেড মুস্তাফিজুর রহমান মল্লিকের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার এ নিয়ে যদিও তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা জানিয়েছিলেন, “অত্যন্ত গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। কর্তৃপক্ষের ভালোভাবে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আমরা মেদিনীপুরবাসী তথা জেলাবাসী হিসেব সবসময়ই চাইব, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের পরিবেশ-পরিস্থিতি সুস্থ, স্বাভাবিক থাকুক। সব পক্ষকে নিয়ে কলেজ কাউন্সিল বৈঠকে বসে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুক।”
অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার আর জি কর মেডিক্যালের ‘গুণধর’ প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের সঙ্গে মুস্তাফিজুরের ছবি ‘ভাইরাল’ হওয়ার পর, শনিবার স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পাশে’ দাঁড়িয়ে থাকা মুস্তাফিজুরের একটি ছবিও প্রকাশ্যে এসেছে। দাবি, ২০২৩ সালের ৩ জুন বালেশ্বরের বাহনাগার ভয়াবহ করমন্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার ঠিক পরের দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ পরিদর্শনে এসেছিলেন; পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, হাসপাতালের অধ্যক্ষ, সুপারদের সঙ্গেই একজন সামান্য ‘হাউসস্টাফ’ হয়েও মুস্তাফিজুর রহমান মল্লিক মুখ্যমন্ত্রীর একেবারে কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন! জুনিয়র চিকিৎসকেরা এও জানাচ্ছেন, একজন সাধারণ হাউসস্টাফ (দু’বার সাপলি পেয়ে MBBS পাস করেছেন বলে দাবি) হওয়া সত্ত্বেও ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিলের (WBMC) একটি কমিটিতে থাকা থেকে শুরু করে ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অফ হেলথ সায়েন্সেস (WBUHS)-র হোম পেজের ফিচার ইমেজেও ‘জায়গা’ করে নিয়েছেন ‘প্রভাবশালী’ মুস্তাফিজুর! স্বাভাবিকভাবেই, তাঁদের প্রশ্ন, “কলেজ কাউন্সিল কিসের ভয়? মুস্তাফিজুর তোমার কে হয়?”