দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১০ সেপ্টেম্বর:পাখির চোখ পঞ্চায়েত নির্বাচন-ই! তাই, একসময়ের ‘শুভেন্দু গড়’ (দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম)- এ বাড়তি নজর দিতে চাইছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। গত ১৭-মে’র পর ফের তাই মেদিনীপুর সফরে আসছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চাকরির নিয়োগপত্র (স্কিল ট্রেনিং নেওয়া ১০ হাজার যুবক-যুবতির হাতে) তুলে দেওয়া থেকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি মনোনীত করা এবং প্রশাসনিক সভা- এমনই একগুচ্ছ কর্মসূচি নিয়ে তিনদিনের সফরে পশ্চিম মেদিনীপুরে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী। যাওয়ার কথা পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকেও। ইতিমধ্যে তাই দুই মেদিনীপুর জুড়ে দলীয় ও প্রশাসনিক স্তরে চরম তৎপরতা শুরু হয়েছে! সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার খড়গপুরের বিদ্যাসাগর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক বা বিদ্যাসাগর শিল্পতালুকের ভেতরে অবস্থিত একটি কনফারেন্স হলে তিনি পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সভাধিপতি মনোনয়ন করা নিয়ে বৈঠক করবেন এবং সকলের মতামত নিয়ে সভাধিপতি বেছে নেবেন। ১৪ সেপ্টেম্বর প্রশাসনিক সভা করতে তমলুকের নিমতৌড়িতে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৫ সেপ্টেম্বর ফের খড়্গপুর শিল্পতালুকের ভেতরে অবস্থিত স্টেডিয়ামের সভা থেকে জঙ্গলমহলের ১০ হাজার চাকরিপ্রার্থীর হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেবেন। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি তুঙ্গে জেলা প্রশাসনের।
জেলা প্রশাসন সুত্রে খবর, ১৫ সেপ্টেম্বর খড়্গপুরের বিদ্যাসাগর শিল্পতালুকের ভেতরে অবস্থিত স্টেডিয়ামের সভা থেকে ‘স্কিল ট্রেনিং’ নেওয়া ১০-হাজার চাকরি প্রার্থীদের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি প্রায় একহাজার জন কৃষকের হাতে বিভিন্ন চাষের যন্ত্রাংশও প্রদান করা হবে। তবে, খড়গপুরের কর্মসূচী শুধুমাত্র পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাকে নিয়েই নয়, পূর্ব মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়াকে নিয়েই হবে। শুক্রবার জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, খড়্গপুরে আগামী বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) প্রশাসনিক কর্মসূচী করলেও, সোমবার রাতে (১২ সেপ্টেম্বর) বা মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকালে জেলায় পা রাখছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে খড়গপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের কনফারেন্স হলে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি নির্বাচন করবেন মমতা। উপস্থিত থাকবেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের ৫৬ জন সদস্য ও ৯জন বিধায়ক। শুক্রবার বিকেলে ওই কনফারেন্স হল পরিদর্শন করেন তমলুক সংগঠিনিক জেলার সভাপতি সৌমেন মহাপাত্র, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতি, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার জেলা শাসক আয়েশা রানী, জেলা পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার প্রমুখ। বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকালে পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে পূর্বের উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন মমতা। তমলুকের নিমতৌড়িতে প্রশাসনিক বৈঠক সেরে ফের তিনি ফিরে আসবেন খড়্গপুরেই। তবে তিনি কোথায় থাকবেন, তা চূড়ান্ত না হলেও ষ্টেডিয়াম সংলগ্ন কটেজে তিনি থাকতে পারেন বলে খবর। তবে, সার্কিট হাউসেও চলে আসতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী, তাই সার্কিট হাউসকেও সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। কারণ, এর আগেও তাঁর জন্য খড়্গপুরের একটি বেসরকারি হোটেলে থাকার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল প্রশাসনের তরফে। কিন্তু, সেখানে না থেকে হঠাৎ করেই তিনি সার্কিট হাউসে চলে আসেন। তখন চরম অস্বস্তিতে পড়তে হয় প্রশাসনের কর্তাদের। সেকথা মাথায় রাখছেন প্রশাসনের আধিকারিকরা। অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রী যেখানে সভা করবেন, শুক্রবার সেই এলাকা পরিদর্শন করেন জেলার পুলিস সুপার দীনেশ কুমার, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি ও বিধায়ক অজিত মাইতি সহ অন্যান্য আধিকারিকরা। শুক্রবার সিএম সিকিউরিটির টিম এসেও হাজির হয় খড়গপুরের সভাস্থলে। নিরাপত্তার বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন তাঁরা। জেলা পুলিসের তরফে রেল শহরের নিরাপত্তা আঁটোসাঁটো করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের তরফে জানা গিয়েছে, গত জুলাই ও আগস্ট মাস ধরে পশ্চিম মেদিনীপুর, পশ্চিম বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ সহ বিভিন্ন জেলা জুড়ে কারিগরি শিক্ষার ছেলেমেয়েদের নিয়ে জব ফেয়াররের আয়োজন করেছিল রাজ্য। তাদের মধ্যে যাঁরা চাকরি পেয়েছেন, তেমন ১০-হাজার জনকে নিয়োগপত্র তুলে দেওয়া হবে খড়গপুরের সভা থেকে। এছাড়াও, কৃষকদের চাষের সুবিধার্থে বিভিন্ন যন্ত্রাংশও দেওয়া হবে। শুক্রবার নানান বিষয় নিয়ে রাজ্যের মুখ্য সচিবের সঙ্গে দফায় দফায় ভার্চুয়ালি বৈঠক হয় জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের। জেলা তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী আসছেন। দুই মেদিনীপুর জুড়ে তাই পুজোর আগমনী সুর। মানবকল্যাণে তাঁর এই সফর। পঞ্চায়েত আর লোকসভায় বিরোধীরা এবার অল-আউট হয়ে যাবে! ইতিমধ্যে, স্টেডিয়ামে মঞ্চ তৈরির কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। পরিদর্শন করেছেন জেলা পুলিশ সুপার সহ মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আধিকারিকরাও। আমরাও ছিলাম। পূর্ব মেদিনীপুর থেকে সৌমেনদাও এসেছিলেন।”