মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৪ অক্টোবর: “ওরে নবমী নিশি না হইও রে অবসান….!” মাতা মেনকার এই বেদনাবিধুর আর্তনাদ যেন নবমীর দিন আপামর বাঙালিরই হৃদয়োৎসারিত করুন প্রার্থনা রূপে প্রস্ফুটিত হয়। রাত পোহালেই বিজয়া দশমী। মা’কে বিদায় জানাতে মন চায়না বাঙালির, তবুও হৃদয়ে পাষাণ চেপে রেখে, অশ্রুসজল নয়নে বিদায় জানাতে হয় হৈমবতীকে! জেলা শহর মেদিনীপুরেও মহাসাড়ম্বরে চলছে দুর্গা পূজা। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই মণ্ডপে মণ্ডপে মায়ের আরাধনায় ব্রতী হয়েছেন সাধারণ মানুষ। ঠিক উল্টোদিকে, রুক্ষ-শুষ্ক কঠিন পৃথিবীর কোনো এক মেনকা আজ, নবমীর দিনই নিজের সদ্যজাত ‘কন্যা সন্তান’-কে ফেলে দিয়ে গেলেন শহরের উপকণ্ঠে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এক নির্জন স্থানে! মঙ্গলবার দুপুর দুটো-আড়াইটা নাগাদ ফুটফুটে সেই শিশুকন্যার কান্নার আওয়াজ শুনতে পান পথচলতি স্থানীয় কয়েকজন মহিলা। সামনে গিয়ে তাঁরা দেখেন, একটি বন্ধ থাকা দোকান ও বালির স্তূপের মাঝামাঝি স্থানে এক সদ্যজাত শিশুকন্যা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে! কান্নার আওয়াজ থেকেই তাঁরা বুঝতে পারেন, শিশুটি সম্পূর্ণ সুস্থ আছে। এরপর, আরও অনেকেই ছুটে আসেন। তাঁরাই খবর দেন, স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনকে। পৌঁছন কঙ্কাবতী গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বিশ্বজিৎ কর্মকার (ছোটকা)। তাঁর উদ্যোগেই খবর দেওয়া হয় গুড়গুড়িপাল থানায়। পুলিশ আধিকারিকরা পৌঁছে শিশুটিকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যান।

thebengalpost.net
উদ্ধার হওয়া সেই শিশুকন্যা :

গুড়গুড়িপাল থানা সূত্রে জানা গেছে, চাইল্ড লাইনের সঙ্গে আলোচনা করেই আপাতত সদ্যজাত ওই শিশু কন্যা-টিকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে, শিশুটির শারীরিক অবস্থা সম্পূর্ণ স্থিতিশীল বলে জানা গেছে। চাইল্ড লাইনের পরামর্শেই পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। একই কথা জানিয়েছেন স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ প্রধান বিশ্বজিৎ কর্মকারও। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মঙ্গলবার, মহানবমীর দুপুরে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ওই রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার পথে, স্থানীয় এক মহিলা ওই শিশুর কান্না শুনতে পান। তিনিই আরও কয়েকজনকে ডেকে আনেন। তারপরই, সকলের প্রচেষ্টায় ওই সদ্যজাত শিশুকন্যাকে উদ্ধার করা হয়! তাঁরাই বলছেন, জন্মদাত্রী মা কোনো এক অজানা কারণে তাঁকে নবমীর দিনই পরিত্যাগ করলেও, অচেনা এক মা’এর সৌজন্যেই প্রাণরক্ষা হলো ছোট্ট দুর্গার! আপাতত বাস্তবের রুক্ষ মাটিতে জন্ম নেওয়া ‘পরিত্যক্ত উমা’র সুস্থতা কামনায় আপামর মেদিনীপুর বাসী।

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):