দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, মণিরাজ ঘোষ, ১১ জুন: করোনা ধ্বংসকারী অত্যাধুনিক “সাইকোক্যান” (SHYCOCAN) যন্ত্র এবার বাজারে চলে এলো। ইউরকা ফোর্বস (Eureka Forbes) কোম্পানী তাদের তৈরি এই যন্ত্রের দাম রেখেছে ২৪,৯৯৯ টাকা। যদিও, যন্ত্রটি আবিষ্কার করেছেন, বেঙ্গালুরুর অর্গানাইজেশন ডে স্কালিনের (De Scalene) বিজ্ঞানী ডা. রাজা বিজয় কুমার (Dr. Rajah Vijay Kumar)। ২০২০’র আগস্ট মাস থেকেই পরীক্ষামূলক ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে করোনা নিধনকারী এই অত্যাধুনিক যন্ত্র। আগস্ট মাস থেকেই সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে এই যন্ত্র বসানো হয়েছে। তালিকায় আছে, পশ্চিমবঙ্গের শিশুমঙ্গল হাসপাতাল (রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠান) সহ আরও বেশ কয়েকটি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ছাড়পত্র পাওয়ার পর এই যন্ত্রের চাহিদা এখন বিশ্বব্যাপী। US-FDA অনুমোদিত এই যন্ত্রটির গুনগত মান পরীক্ষা করে দেখেছে গুয়াহাটি আইআইটি এবং মাদ্রাজ ইউনিভার্সিটি। প্রতিটি ক্ষেত্রেই অত্যাধুনিক এই “সাইকোক্যান” যন্ত্র ৯৯ শতাংশ বা তার থেকেও বেশি কার্যকরী বলে বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদরা জানিয়েছেন। সারা দেশ তথা কলকাতার নামকরা বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ব্যবহৃত হওয়ার পর, এবার এই করোনা-জীবাণু ধ্বংসকারী যন্ত্র রাজ্যের প্রতিটি সরকারি হাসপাতলেও লাগানোর ভাবনা চিন্তা করছে সরকার।
“সাইকোক্যান” যন্ত্রের পুরো নাম হল- স্কালিন হাইপার চার্জ করোনা ক্যানন (Scalene Hypercharge Corona Canon )। করোনা (Covid 19) সংক্রমিত ব্যক্তির থেকে বাতাসের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের জীবাণু নিমেষের মধ্যে ধ্বংস করবে এই করোনা কিলার বা করোনা গার্ড। কলকাতার বিখ্যাত প্রযুক্তিবিদ তুলসী রতন পোদ্দার জানিয়েছেন, “মাত্র দেড় কিলোগ্রাম ওজনের এবং ২৩০ ভোল্টের এই যন্ত্রটি ৫ অ্যাম্পিয়ার বিশিষ্ট প্লাগে দিলে তৈরি হবে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ বা ইলেকট্রনের মেঘ। যা ১ ট্রিলিয়ন প্রতি সেকেন্ডে নিঃসৃত হবে ধাতব যন্ত্রের ভেতর থেকে। ওই নেগেটিভ ইলেকট্রন করোনা ভাইরাসের (Sars Cov-2) মধ্যে থাকা এস প্রোটিন (S-Protein) কে পুরোপুরি ধ্বংস করবে। অর্থাৎ ফোটন মিডিয়েটেড ইলেকট্রন এমিটারস (PMEE) সিস্টেমে কাজ করবে এই যন্ত্র।” যন্ত্র নির্মাতা সংস্থার পক্ষ থেকে বিজ্ঞনী জানিয়েছেন, “ভাইরাসের এস প্রোটিন (S-Protein) অংশটাকে নষ্ট করে দিলে, এক কোভিড রোগীর থেকে অন্যের দেহে হাঁচি-কাশির মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়ানো আটকানো যাবে।” এই যন্ত্রের বিদ্যুৎ খরচ অত্যন্ত স্বল্প। ১০০০ স্কোয়ার ফিট এলাকার মধ্যে থাকা সমস্ত করোনা ভাইরাসের জীবাণু’কে ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে এই সাইকোক্যান যন্ত্র। তবে, ওই এলাকার মধ্যে যে “ইলেকট্রন মেঘ” তৈরি হয়, তা সাধারণ মানুষের কোনো ক্ষতি করেনা বা এই ইলেকট্রন কণার কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই বলে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন। বরং তা শরীরের নানা উপকার করতে পারে বলেও জানানো হয়েছে।
রামকৃষ্ণ মিশনের বিভিন্ন হাসপাতাল সহ কলকাতার নামকরা বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে এই যন্ত্র ব্যবহৃত হওয়ার পর, এবার রাজ্য সরকার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালেও এই যন্ত্র বসানোর উদ্যোগ নিচ্ছে বলে সূত্রের খবর। এই যন্ত্রের বিষয়ে জানতে চেয়ে রাজ্যের সহকারী স্বাস্থ্য অধিকর্তা তথা ও.এস.ডি ডাঃ সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী’কে ফোন করা হলে, তিনি জানিয়েছেন, “ভারতীয় বিজ্ঞানীর তৈরি এই যন্ত্র আতিমারী পরিস্থিতিতে নিঃসন্দেহে এক আশীর্বাদ স্বরূপ উপস্থিত হয়েছে। ইতিমধ্যে, রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠান সহ বিভিন্ন হাসপাতালে এই যন্ত্র বসানো হয়েছে। সরকারি হাসপাতালেও আগামী দিনে এই যন্ত্র ব্যবহৃত হতে পারে! সেক্ষেত্রে ওপিডি, এমার্জেন্সি সহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে বসানো হলে, তা করোনা ভাইরাসের জীবাণুকে ধ্বংস করবে। ফলে, সংক্রমণের আশঙ্কা অনেক কমে যেতে পারে।” শুধু হাসপাতাল নয়, যেকোনো অফিস-আদালত থেকে শুরু করে বাড়িতেও এই যন্ত্র ব্যবহৃত হতে পারে। অনলাইনে এই যন্ত্রের দাম এই মুহূর্তে প্রায় ২৫ হাজার টাকা হলেও, কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হলে, এর দাম আরো কমে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।