দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৪ জুন: গত ২৯ শে জানুয়ারি (২০২১) বাড়ির লোকেরা প্রথম দেখতে পান মলদ্বার দিয়ে রক্ত পড়ছে সুদীপের! জিজ্ঞেস করলেও বিশেষ কিছু বলতে পরেনা সামান্য মানসিক ভারসাম্যহীন, নবম শ্রেণীর ছাত্র সুদীপ মঠ। এরপর, প্রথমে সবং গ্রামীণ হাসপাতাল, তারপর মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ থেকে এস এস কে এম! কারণ খুঁজে পেতে ব্যর্থ হন চিকিৎসকরা। গত ২-৩ মাস ধরে অসহ্য যন্ত্রণা আর রক্তপাত সহ্য করে কলকাতা থেকে সুদূর ভুবনেশ্বর এইমসে (AIIMS) এ গিয়েও সুরাহা হয়না! ততদিনে সুদীপের বাবা, পেশায় খেলনা বিক্রেতা মুকুন্দ মঠের দেড় থেকে দু’ লক্ষ টাকা শেষ। অন্যদিকে, ১৮ বছর বয়সী মেজো ছেলে সুদীপ তখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে! শেষমেশ “স্বাস্থ্যসাথী” কার্ডের ভরসায় ভর্তি করা হয় মেদিনীপুর শহরের উপকণ্ঠে ধর্মার (মোহনপুর ব্রিজের) কাছে গ্লোকাল হাসপাতালে। সেখানেই যেন ঈশ্বর রূপে অবতীর্ণ হন, শল্য চিকিৎসক (তিনি, স্ত্রী ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞও) ডাঃ আশিস মণ্ডল। ইউ এস জি সহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর দেখা যায়, মলাশয়ে আটকে আছে একটি ইউস অ্যান্ড থ্রো পেন (কলম)! কখন মলদ্বার বা পায়ুপথে ঢুকিয়ে দিয়েছিল সুদীপ নিজেই জানেনা। এরপর, গত ৪ ঠা জুন স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে জটিল অপারেশন (Critical Operation) করা হয়। ডাঃ মণ্ডলের সঙ্গে থাকেন ডাঃ দীপক দাস (অ্যানাস্থেশিস্ট) ও ডাঃ সুনন্দিতা বেরা। অপারেশন সফল হয়, তবে মলাশয় ও মলদ্বারে ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়ায় সেই চিকিৎসা করা হচ্ছে এখন। আপাতত অনেকটাই স্থিতিশীল সুদীপ।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সবং ব্লকের কাপাসদা গ্রামের মুকুন্দ মঠ খেলনা বিক্রি করে সংসার চালান। স্ত্রী শেফালী ও তিন ছেলেকে নিয়ে সংসার। মেজ ছেলে সুদীপ ছোটো থেকেই সামান্য মানসিক ভারসাম্যহীন। তা সত্ত্বেও স্থানীয় বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে পড়ে সে। জানুয়ারি মাসের যেকোনো দিন (হয়তো পড়াশোনা করতে করতেই), সকলের অগোচরে আস্ত পেন বা কলম পায়ুপথ দিয়ে প্রবেশ করিয়ে দেয় সে! ২৯ জানুয়ারি প্রথম বাড়ির লোকেরা দেখতে পান যে, মলদ্বার দিয়ে রক্ত পড়ছে। এরপরই গত ৪-৫ ধরে ছেলেকে নিয়ে কঠিন লড়াই শুরু হয়। অবশেষে, স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের বিনিময়ে মেদিনীপুর শহরের হাসপাতালেই নতুন জীবন পায় সুদীপ! এই মুহূর্তে সে অনেকটাই ভালো আছে বলে জানিয়েছেন গ্লোকাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং চিকিৎসক আশিস মণ্ডল’কে অন্তরের অন্তর্স্থল থেকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন সুদীপের বাবা মুকুন্দ মঠ ও মা শেফালী মঠ।