thebengalpost.net
শিলদা কাণ্ডে যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণা :

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৭ ফেব্রুয়ারি: ঠিক ১৪ বছর আগে, ২০১০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার মুখে ঝাড়গ্রামের শিলদা ইএফআর ক্যাম্পে (EFR Camp) ভয়বাহ মাও হামলায় (Maoist Attack) প্রাণ হারিয়েছিলেন ২৪ জন জওয়ান। দীর্ঘ বিচার-প্রক্রিয়া শেষে মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সেই মামলাতেই ২৩ জনকে দোষী সাব্যস্ত করল মেদিনীপুর জেলা আদালত (Midnapore Judges Court)। এদিন দুপুরে অতিরিক্ত জেলা এবং দায়রা বিচারক সেলিম শাহী অভিযুক্ত ২৪ জনের মধ্যে ২৩ জনকে (বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন একজনের মৃত্যু হয়েছে) দোষী সাব্যস্ত করেন। দোষীদের মধ্যে জামিনে মুক্ত থাকা ১০ জন সহ মোট ২২ জনকে তোলা হয়েছিল মেদিনীপুর আদালতে। ১ জন অসুস্থ থাকায় তাকে আদালতের বাইরে অ্যাম্বুল্যান্সে শুইয়ে রাখা হয়েছিল! এই ২৩ জনের বক্তব্য শোনার পর বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) বিচারক সাজা ঘোষণা করতে পারেন বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।

thebengalpost.net
আদালতের পথে:

প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি রাত্রি ৯টা নাগাদ শিলদা প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চত্বরে থাকা EFR ক্যাম্পে মাওবাদীরা ভয়াবহ হামলা চালায়। গুলি করে, ক্যাম্পে আগুন লাগিয়ে ২৪ জন EFR জওয়ানকে নৃশংস ভাবে হত্যা করে মাওবাদীরা। জওয়ানদের পাল্টা প্রতিরোধে ৫ জন মাওবাদীরও মৃত্যু হয়েছিল। এই ঘটনার পরই EFR ক্যাম্প তুলে দেওয়া হয়েছিল। সেই EFR ক্যাম্পের অদূরে শিলদাতে করা হয় রাজ্য পুলিশের স্ট্রাকো ক্যাম্প। উল্লেখ্য যে, বাম আমলের একেবারে শেষদিকে এই ভয়াবহ মাওবাদী হামলাই ছিল, এ রাজ্যে মাওবাদীদের সবথেকে নৃশংস হত্যালীলা! ঠিক সন্ধ্যার মুখে জওয়ানরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই এই ক্যাম্পে হামলা চালায় সশস্ত্র মাওবাদীরা। একের পর এক জওয়ানকে নৃশংস ভাবে গুলি করে লাগিয়ে দেওয়া হয় আগুন। এই ঘটনায় মৃত্যু হয় ২৪ জন জওয়ানের, গুরুতর আহত হন দুই জওয়ান, উদ্ধার করা হয় মোট ৫ জনকে। লুট হয় পুলিশের অস্ত্র ভাণ্ডার। এর পরেই শুরু হয় পুলিশি তদন্ত। ২৬ জনের বেশি মাওবাদীর নামে অভিযোগ দায়ের হয়। এই মামলায় প্রথম গ্রেপ্তার হয় মাও নেতা রঞ্জন মুন্ডা। তারপর, একের পর এক মাও নেতা-নেত্রী গ্রেপ্তার হয়। অধরা ছিলো মাও নেত্রী সুচিত্রা মাহাত, জাগরী বাস্কে প্রমুখ। পরে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে সুচিত্রা, জাগরী-রা। এখন তারা সুখে ঘর-সংসার করছে। পেয়েছে পুলিশের চাকরি! সুদীপ চোংদার (কাঞ্চন) নামে পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতার এক মাওবাদী নেতার মৃত্যু হয় বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন। বাকি ২৩ জনকে এদিন দোষী সাব্যস্ত করা হয়। এদের মধ্যে জেল হেফাজতে ছিল ১৩ জন। বাকি ১০ জনকে জামিন দেওয়া হয়েছিল। এদিন ওই ১০ জনকেও (১০ জনের মধ্যে ইন্দ্রজিৎ কর্মকার অন্য মামলায় জেল হেফাজতেই ছিল) হেফাজতে নেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারক

এও উল্লেখ্য যে, প্রথমে এই মামলা শুরু হয় ঝাড়গ্রাম আদালতে। পরর্বতীতে সেই মামলার শুনানি শুরু হয় পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা আদালতে। সেই মামলায় ১৪ বছর পর দোষী সাব্যস্ত করা হল ২৩ জনকে। মঙ্গলবার জেলবন্দী ১৩ জন মাওবাদীকে তোলা হয় ষষ্ঠ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক সেলিম শাহীর এজলাসে। এছাড়াও, জামিনে থাকা বাকি ১০ জনকেও (১ জন অবশ্য অন্য মামলায় জেলবন্দী ছিল) আদালতে হাজির করানো হয়। ২৩ জনকেই দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারক। এরা হল যথাক্রমে- ১. মনসারাম হেমব্রম ২. ঠাকুরমনি হেমব্রম ৩. কল্পনা মাইতি ৪. মানস মাহাতো ৫. কাজল মাহাতো ৬. মঙ্গল সরেন ৭. সনাতন সরেন ৮. শুকলাল সরেন ৯. কানাই হাঁসদা ১০. রাজেশ হাঁসদা ১১. শ‌্যামচরন হাঁসদা ১২. রাজেশ মুণ্ডা ১৩. রঞ্জন মুণ্ডা। এই ১৩ জন জেলবন্দী ছিল। এছাড়াও, জামিনে মুক্ত ছিল যে ১০ জন- ১৪. ইন্দ্রজিৎ কর্মকার (অন্য মামলায় জেল হেফাজতে ছিল) ১৫. লোচন সিং সর্দার ১৬. চুনারাম বাস্কে ১৭. আশিষ মাহাতো ১৮. ধৃতিরঞ্জন মাহাতো ১৯. বিষ্ণু সরেন ২০. অর্ণব দাম ২১. রামসাই হাঁসদা ২২. প্রশান্ত পাত্র এবং ২৩. বুদ্ধেশ্বর মাহাতো। সরকারি আইনজীবী দেবাশিস মাইতি বলেন, ‘‘ওই ঘটনায় ২৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা পড়েছিল। তার মধ্যে একজন মারা যান। ১০ জন জামিনে মুক্ত ছিলেন। আজ (মঙ্গলবার) ২৩ জনকেই আদালতে হাজির করানো হলে, বিচারক তাঁদের সকলকেই দোষী সাব্যস্ত করেন। জামিনে থাকা ১০ জনকেও হেফাজতে নেওয়ার নির্দেশ দেন। বুধবার ও বৃহস্পতিবার ২৩ জনের বক্তব্য শুনবেন বিচারক। তারপরই সাজা ঘোষণা হবে।”

thebengalpost.net
মেদিনীপুর আদালতে:

thebengalpost.net
দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর মেদিনীপুর আদালতে: