দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৮ আগস্ট: চাকরির বাজার বড্ড খারাপ! এম-বিএ, বিএড-ডিএলএড থেকে আইটিআই-পলিটেকনিক করেও সহজে মিলছেনা সরকারি চাকরি। এদিকে, “মাওবাদী” তকমা থাকলেই রাজ্য সরকার হোম গার্ডের চাকরি দিচ্ছে! অতি সম্প্রতি, রাজ্য জুড়ে ২২০ জন আর পশ্চিম মেদিনীপুরে ১১০ জন পেয়েওছে সেই চাকরি। তার আগেও অবশ্য অনেকেই এই চাকরি পেয়েছেন। কিন্তু, এই অতিমারী আবহে সম্প্রতি একসাথে ১১০ জন‌ প্রাক্তন মাওবাদী বা মাওবাদী মামলায় ভুক্তভোগীরা পশ্চিম মেদিনীপুরে চাকরি পাওয়ার পরই, জেলা জুড়ে “মাওবাদী তালিকা”য় নাম তোলার হিড়িক পড়ে গিয়েছে! আর এর ফলেই, মেদিনীপুর জেলা আদালত সহ বিভিন্ন আদালতের আইনজীবীরা জেরবার হচ্ছেন। তাঁদের কাছেই কাতর অনুরোধ করছেন জঙ্গলমহল বাসী, “দয়া করে মাওবাদী মামলায় নামটা ঢুকিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিন!” এমনকি, যাদের জামিন হয়ে গিয়েছে, তাদেরও অনুরোধ, “স্যার, দয়া করে একবার জেলে ঢুকিয়ে দিন”।

thebengalpost.in
সম্প্রতি হোমগার্ড পদে চাকরি পাওয়া প্রাক্তন মাওবাদীরা :

প্রসঙ্গত, অতি সম্প্রতি পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে ১১০ জন আত্মসমর্পণকারী বা মূল স্রোতে ফিরে আসা মাওবাদী চাকরি পেয়েছেন হোমগার্ড পদে। তারপর থেকেই জেলা জুড়ে যেন উলট পুরাণ! একটা সময় যে মাওবাদীদের ভয়ে ত্রস্ত থাকত জঙ্গলমহল, এখন সেই জঙ্গলমহলের বাসিন্দারাই “মাওবাদী” সাজতে চাইছে। আবার, যারা একসময় জেলে যাওয়ার ভয়ে মাওবাদী-তকমা মুছে ফেলতে চাইত, তারাই এখন মাওবাদী-মামলায় জেলে যাইতে চাইছে। এখন আর মাওবাদী তকমায় ভয় বা লজ্জা নেই তাদের! জঙ্গলমহলের যুবক-যুবতীদের বক্তব্য, “কোভিড পরিস্থিতিতে জঙ্গলে না খেতে পেয়ে মরার চেয়ে, মাওবাদী হিসাবে আত্মসমর্পণ করলে সরকারি চাকরি নিয়ে ভালোভাবে বাঁচাতো যাবে !” তাই, কোর্ট চত্বরে আইনজীবীদের কাছে মাওবাদী হওয়ার লাইন পড়ছে প্রতিদিন! মেদিনীপুর জেলা আদালতের আইনজীবী অপূর্ব চক্রবর্তী বলেন, “আগে বহু এমন কেস দেখেছি, যেখানে জঙ্গলমহলের মানুষ আসতেন মাওবাদী তকমা হটানোর জন্য; পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর তা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য৷ কিন্তু, বর্তমানে সম্পূর্ণ উলট পুরাণ! এখন মানুষ আসছেন মাওবাদী লিস্টে নাম নথিভুক্ত করার জন্য।” একই বক্তব্য আইনজীবী গৌতম মাহিষেরও। তিনি বলেন, “এক সময় ছিল যখন জঙ্গলমহলের মানুষের লাইন পড়ে যেত জামিন করানোর জন্য। বেশিরভাগের ছিল মাওবাদী তকমা । কিন্তু, এখন তাঁরাই এসে লাইন দিচ্ছেন শুধুমাত্র জেলে ঢোকানোর আর্জি নিয়ে। কিন্তু, বেআইনিভাবে কীভাবে জেলে ঢোকাব লোককে? বিশেষ করে যাঁদের জামিন হয়ে গিয়েছে আগেই। কেবলমাত্র সরকারি চাকরি ও প্যাকেজের জন্য লাইন দিচ্ছেন তাঁরা!”