দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, ২ নভেম্বর: অখণ্ড মেদিনীপুর জেলার দক্ষিণ-পশ্চিম সীমানার ইতিহাস সুপ্রাচীন। স্বাধীনতা লাভের পর, ১৯৫২ সালে ‘সাহিত্যবিনোদ’ ললিতমোহন সামন্ত সুবর্ণরেখা নদী তীরবর্তী দাঁতনের প্রথম আঞ্চলিক ইতিহাস রচনা করলেও, তা গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় প্রায় ৬৫ বছর পরে। দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত এই ঐতিহাসিক ক্ষেত্রটির বহু অনালোকিত ইতিহাস অবশেষে স্তরে স্তরে উন্মোচিত হচ্ছে। দাঁতনের ভূমিপুত্র, আঞ্চলিক ইতিহাসের গবেষক ও ক্ষেত্রসমীক্ষক তথা ‘দণ্ডভুক্তি’ পত্রিকার সম্পাদক সন্তু জানার হাত ধরে লিখিত ও সংকলিত হচ্ছে সেই ইতিহাস। শ্রী জানা প্রতিষ্ঠিত “দণ্ডভুক্তি একাডেমী রিজিওনাল হিস্টরি অ্যান্ড ফোক কালচারাল রিসার্চ ফাউন্ডেশন” এবং “দণ্ডভুক্তি” পত্রিকা যৌথভাবে সুপ্রাচীন এই অঞ্চলটিকে বিশ্বের সামনে নতুন করে মেলে ধরেছে। সম্প্রতি গবেষণাধর্মী পত্রিকা “দণ্ডভুক্তি”-র বিশেষ ‘উজ্জ্বল উদ্ধার সংখ্যা’ প্রকাশিত হয়েছে। যা ইতিমধ্যেই গবেষকমহলে প্রবল সাড়া ফেলেছে। শারদ সংকলনটির ‘প্রথম আলো’ বিভাগে বেশ কিছু প্রাচীন অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি প্রকাশিত হয়েছে যা বিস্ময়ের উদ্রেক করে। সম্পাদক সন্তু জানা বলছেন, “গ্রামে-গঞ্জে, চালে-কোটরে, বাক্স-প্যাটরা হাতড়ে হাতড়ে যেসব দুষ্প্রাপ্য ও অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি উদ্ধার করেছি, অখণ্ড মেদিনীপুর তথা সমগ্র বঙ্গ সংস্কৃতিতে এর মূল্য অপরিসীম।”

thebengalpost.net
‘দণ্ডভুক্তি’র বিশেষ সংকলন প্রকাশিত :

‘ফিরে দেখা’ বিভাগে জেলার বিভিন্ন প্রান্তের বিশেষত দক্ষিণ-পশ্চিম সীমানা অঞ্চলের অসংখ্য দুষ্প্রাপ্য ও দুর্লভ সাহিত্য সম্পদের গুরুত্বপূর্ন পুনর্মুদ্রণ করা হয়েছে। সফেন সমুদ্ররাশির মতোই বিস্তৃত বিষয় বৈচিত্র্য- ইতিহাস থেকে বংশকোষ, যাত্রাগীত থেকে প্রতিবাদ পত্র অথবা হাতে-লেখা কবিতা থেকে মঙ্গলকাব্য ধারার দীর্ঘ কবিতা, অতীত ও ঐতিহ্যের স্বাদে-গন্ধে ভরপুর। এছাড়াও, দুষ্প্রাপ্য পাণ্ডুলিপির চিত্রসহ ‘বাতিঘর’ বিভাগে বর্তমান কালের প্রখ্যাত গবেষক তরুণ সিংহ মহাপাত্র, ড. মধুপ দে, সচিন মান্না প্রমুখের নিজস্ব সংগ্রহকথা, বিষয়ভিত্তিক অনুসন্ধান ও সাক্ষাৎকার ভিত্তিক আলোচনাও সন্নিবেশিত হয়েছে পত্রিকার পাতায়। কালের নিয়মে জ্বরাগ্রস্ত বহু লেখা ছাপার অক্ষরে জেলার ইতিহাসে এই প্রথমবার আত্মপ্রকাশ করছে। বহু লেখা একেবারে শেষ কপিটি থেকে পুনর্মুদ্রিত হয়েছে। এমনও খ্যাতনামা মানুষ আছেন লেখকসূচিতে যাঁর মৃত্যুর ঠিক ১০০ বছর পরে স্বহস্তে লিখিত প্রথম ও একমাত্র কোন লেখা প্রকাশিত হচ্ছে লিটল ম্যাগাজিনের পাতায়। ষাটের দশকে লিখিত লোকগান ‘জেলা মেদিনীপুর’ এই প্রথম ছাপার অক্ষরে। সূচিপত্র জুড়ে কে নেই! মেদিনীপুরের ইতিহাসবিদ যোগেশ চন্দ্র বসু, ললিত মোহন সামন্ত থেকে শুরু করে রাজা রামচন্দ্র রায় বীরবর, লোকসঙ্গীত শিল্পী সত্যেন মহান্তি, বিপ্লবী বিপিন চন্দ্র পাল, রাজা সুরেশ চন্দ্র রায় বীরবর, মেদিনীমঙ্গল রচয়িতা গোরাচাঁদ গিরি, গীতিকার সুরেন্দ্র মোহন দে, কবি নরেন্দ্র দেব, স্বপনবুড়ো, দাদাঠাকুর হৃষিকেশ পানিগ্রাহি প্রমুখ। এমনকী স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দেশপ্রাণ বীরেন্দ্রনাথ শাসমল, খেজুরির মহেন্দ্রনাথ করণের সঙ্গে হাজির হয়েছেন মেদিনীপুরের ভূতপূর্ব জেলাশাসক বার্নার্ড বার্জও! আছে ‘নীহার’ থেকে ‘মেদিনীবাণী’, ‘গ্রামের ডাক’ থেকে ‘মেদিনীপুর পত্রিকা’ অথবা ‘দাঁতনিক’ থেকে ‘বঙ্গবাণী’-র মতো দুষ্প্রাপ্য কাগজে প্রকাশিত সোনার অক্ষরমালা।

thebengalpost.net
বিভিন্ন শতবর্ষ প্রাচীন পান্ডুলিপি’র সংকলন :

পত্রিকা জুড়ে শুধুই পুরনো দিনের পটাশপুর থেকে মেদিনীপুর, খেজুরি থেকে দাঁতন অথবা কাঁথি থেকে তমলুক পর্যন্ত দিনযাপন! সব মিলিয়ে সত্যিই একটি সংরক্ষণযোগ্য বিশেষ সংখ্যা। অন্তত গবেষক-সংগ্রাহকদের আলমারিতে বেশ কিছুকাল তো নিঃসন্দেহে কাটিয়ে দিতেই পারে! সম্প্রতি, পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা শহরে নিজের বাড়িতে বিশিষ্ট গবেষক শান্তিপদ নন্দ মহাশয়ের করস্পর্শে গুণীজন সান্নিধ্যে এই বিশেষ সংখ্যাটির মোড়ক উন্মোচন হয়েছে। উপস্থিত ছিলেন অবন্তী জানা, অতুল কৃষ্ণ রায়, শান্তিপদ দাস, কুন্তল দাস, তীর্থঙ্কর রায় বীরবর, পবিত্র পাত্র, ঝনটু দাস প্রমুখ ব্যক্তিত্ব। উদ্বোধক শান্তিপদ নন্দ পরে পত্রিকা পাঠ করে লিখিতভাবে জানিয়েছেন, “এবারের সংখ্যাটি একটি উচ্চস্তরের প্রকাশনা। মন দিয়ে আগাগোড়া পাঠ করেছি। এই দিনদলিলটি ভবিষ্যৎ গবেষকদের নিঃসন্দেহে দিশা দেখাবে।”