মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৪ মে:“আজ যা চারাগাছ, আগামীকাল তা মহীরুহে পরিণত হবে। ঠিক তেমনই, লিটল ম্যাগাজিনের হাত ধরে বড় সাহিত্যের সৃষ্টি হতে পারে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে প্রমথ চৌধুরী, বুদ্ধদেব বসু কিংবা অচিন্ত্য সেনগুপ্ত-রাও একদিন প্রাতিষ্ঠানিক সাহিত্যের বাইরে ছোট ছোট বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আর, বর্তমান সময়ে লিটল ম্যাগাজিন বা বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকার মধ্য দিয়ে গ্রামবাংলা কিংবা শহরতলীর কবি, সাহিত্যিক বা লেখকরা নিজেদের মনের ভাব কিংবা অন্তরের উপলব্ধি তুলে ধরতে পারেন। বড় সাহিত্যে তা হয়তো সম্ভব হয়না। আমরা মনে করি, ছোটো হোক, বড় হোক, সাহিত্য-ই হল সমাজের আত্মা! তাই, লিটল ম্যাগাজিনের লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিকদের উৎসাহিত করতে এবং তাঁদের সৃষ্টি অনেকের কাছে তুলে ধরতেই, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ব্যতিক্রমী ভাবনা। এই প্রথমবার আমরা আয়োজন করলাম লিটল ম্যাগাজিন মেলা ও সাহিত্য সম্মেলন।” হ্যাঁ, জঙ্গলমহল পশ্চিম মেদিনীপুরে অবস্থিত বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এই প্রথমবার আয়োজিত হল, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্য সম্মেলন ও লিটল ম্যাগাজিন মেলা। ভারতবর্ষের স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষ (বা, আজাদি কি অমৃত মহোৎসব) উদযাপন উপলক্ষে এই প্রথম এই ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হলো বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য যে, এই ধরনের উদ্যোগ শুধু বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন, সারা ভারতবর্ষের ক্ষেত্রেও নজির। শুধু উদ্যোক্তারা নন, উপস্থিত লিটল ম্যাগাজিনের স্রষ্টা বা সাহিত্যকদের মতেও, লিটল ম্যাগাজিন হল বড় সাহিত্যের ‘বীজতলী স্বরূপ’! আর, সেই ‘বীজতলী’ (বীজতলা) থেকেই কচি চারাগাছ আর তা থেকেই একদিন সাহিত্যের সুবৃহৎ মহীরুহ তৈরি হবে, এমনটাই আশা সংশ্লিষ্ট সকলের। ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’ (৭৫ বছর) উপলক্ষে জঙ্গলমহলের বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় আসলে সেই কচি চারাগাছেই জল সিঞ্চন করতে চেয়েছে! মনে করছেন উপস্থিত অতিথিরা। শুধু অবিভক্ত মেদিনীপুর নয়, কলকাতা থেকেও এসেছেন লিটল ম্যাগাজিনের লেখক ও সাহিত্যিকেরা। নিজেদের সৃষ্টি ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন প্রত্যন্ত জঙ্গলমহলের শালবনী থেকে সীমান্ত অঞ্চল দাঁতনের কবি-সাহিত্যিকেরাও। দু’দিন ব্যাপী আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হল, মঙ্গলবার। উদ্বোধন করলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শিবাজী প্রতিম বসু। ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধক (রেজিস্ট্রার) ড. জয়ন্ত কিশোর নন্দী, দুই বিভাগের অধ্যক্ষ (ডিন) অধ্যাপক সত্যজিৎ সাহা ও তপন কুমার দে সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিক ও অধ্যাপক বৃন্দ। এছাড়াও, এই লিটল ম্যাগাজিন মেলা ও সাহিত্য সম্মেলনকে সমৃদ্ধ করেছে, সাহিত্যিক অমর মিত্র, স্বপ্নময় চক্রবর্তী, নলিনী বেরা, জয়ন্ত দে, কাবেরী রায় চৌধুরী, ‘অনুষ্টুপ’ পত্রিকার সম্পাদক অনিল আচার্য, সাহিত্যিক ও অধ্যাপক সুস্নাত জানা, মেদিনীপুরের ইয়াসিন পাঠান, সিদ্ধার্থ সাঁতরা, দাঁতনের সন্তু জানা, শালবনীর মধুমিতা বেতাল- প্রমুখদের উপস্থিতি।