দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, কলকাতা, ১৪ আগস্ট: “কেষ্টকে গ্রেফতার করলেন কেন? কি করেছিল কেষ্ট” অবশেষে ‘ফোঁস’ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার থেকে চুপ ছিলেন, পথে নেমেছিলেন তৃণমূলের ছাত্র-যুবরা; ‘বদলা’র হুঙ্কার ছাড়ছিলেন কল্যাণ-মদন’রা! চাপে পড়েই এবার স্বয়ং নেত্রী মুখ খুললেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে রবিবার সন্ধ্যায় বেহালা’র সভা থেকে তাই মুখ্যমন্ত্রী নিজের চেনা মেজাজে বিজেপি সহ কেন্দ্রীয় সরকার এবং বাম-কংগ্রেস’কে আক্রমণ করলেন। ছাড়লেন না মিডিয়াকেও! মুখ্যমন্ত্রী তাঁর প্রিয় কেষ্ট সম্পর্কে বলেছেন, “ওকে তো তোমরা নির্বাচন হলেই বন্দী করে রাখ। আর, এবার জেলে বন্দী করে দিলে? কি করেছিল কেষ্ট?” এরপরই মুখ্যমন্ত্রী’র সংযোজন, “বেচারা! ওর স্ত্রী দু’বছর ক্যানসারে কষ্ট পেয়ে মারা গেছে। ও বোলপুর-কলকাতা যাতায়াত করত কত কষ্ট করে। ও তো কিছুই চায়না। বিধায়ক, সাংসদ কিছুই হতে চায়নি! ওকে বললাম, তুই তো কিছুই চাসনা। তোকে রাজ্যসভায় পাঠিয়ে দিই। ও বললো, না দিদি, আমি যেতে চাই না।” তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, বেহালায় সভা হলেও, পার্থ চট্টোপাধ্যায়-কে নিয়ে একটি শব্দও খরচ করেননি মুখ্যমন্ত্রী! বরং, তাঁর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, “কিছু কিছু ক্ষেত্রে তদন্ত করছ ঠিক আছে। আইন আইনের পথে চলবে। কিন্তু, কেষ্টকে গ্রেফতার করলে কেন?”
এরপরই, বিরোধী’রা কটাক্ষ ছুঁড়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রীর উদ্দেশ্যে। তাঁদের মতে, “পার্থ’র টাকার ভাগ পাননি মুখ্যমন্ত্রী, কিন্তু কেষ্ট’র গরু-কয়লার টাকা সরাসরি যেত হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে!” সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের মন্তব্য, “পিসি-ভাইপো’র দুর্নীতির কারখানায় কেষ্ট হল নাটবল্টু! কেষ্ট’র গরু পাচারের টাকাতেই পিসি-ভাইপো’র এতো ঠাঁটবাট।” উল্লেখ্য যে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এদিনের বক্তব্যে উঠে এসেছে ‘সেটিং তত্ত্ব!’ তাঁর হুঙ্কার, “আমি দিল্লি গেলেই সেটিং? আমি আমার প্রশাসনের টাকা চাইতে যাবনা?” বাম-কংগ্রেসের সূর্যকান্ত মিশ্র, সুজন চক্রবর্তী (‘কুজন’ বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী), অধীর চৌধুরী (মিঃ চৌধুরী বলেছেন মমতা)-দেরও এদিন আক্রমণ করেছেন মমতা। ‘ফাইল’ খোলার হুঙ্কার দিয়েছেন।

তবে, জনগণের উদ্দেশ্যে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এও জানতে চেয়েছেন, “কাল যদি আমার বাড়িতে যায়, কী করবেন? রাস্তায় নামবেন তো!” রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহল মন্তব্য করেছে, “তবে কি মুখ্যমন্ত্রী বুঝেই গেছেন, এবার আর তিনিও ছাড় পাবেন না?” মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এরপরই উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে বলেছেন, “গণতান্ত্রিক ভাবে আন্দোলন করবেন তো? আমারটা আমি একাই লড়ে নেব। কিন্তু, আপনাদেরটা আপনাদের লড়ে নিতে হবে তো!” মমতা আরও বলেন, “যদি আমার কোনও সহকর্মীকে ইচ্ছা করে জেলে ধরে রেখে দেয়, তা হলে গণতান্ত্রিক ভাবে প্রতিবাদ করতে হবে।” বিজেপি তথা কেন্দ্রীয় সরকার ইডি-সিবিআই’কে কাজে লাগিয়ে এরপর ফিরহাদ হাকিম, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও চক্রান্ত করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মমতা! বিরোধী’রা তাই বলছেন, “কেষ্ট’র হয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে মুখ খুলতেই হতো। মুখ না খুললেই সব ফাঁস করে দিত!”