thebengalpost.net
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়েরও বড় নির্দেশ:

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, কলকাতা, ২৮ এপ্রিল: প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতির ২-টি মামলা সরানো হল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চ থেকে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ধনঞ্জয় যশবন্ত চন্দ্রচূড় এবং পি.এস নরসিমা’র নির্দেশ এসে পৌঁছেছে ইতিমধ্যে। অন্য কোনও বিচারপতিকে এই মামলা হস্তান্তরের জন্য হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমকে নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি.ওয়াই চন্দ্রচূড়ের ডিভিশন বেঞ্চ। প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতিতে সৌমেন নন্দী এবং রমেশ মালিকের করা দু’টি মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে। প্রসঙ্গত, ১৩ এপ্রিল নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত সৌমেন নন্দী’র করা মামলার শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় মন্তব্য করেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কুন্তল ঘোষকে খুব দ্রুত জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত CBI, ED-র। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন, তাঁর আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি সহ কপিল সিব্বল, মুকুল রোহতগী-রা দাবি করেছিলেন, নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত সমস্ত মামলা থেকেই অব্যাহতি দেওয়া হোক বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়-কে।

thebengalpost.net
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ:

তবে, তাতে বাধা দেন কেন্দ্রের সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা এবং আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য। সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা এদিন সুপ্রিম কোর্টে বলেন, “রায় বা নির্দেশ বিরুদ্ধে গেলেই সংশ্লিষ্ট বিচারপতিকে টার্গেট করার একটা প্রবণতা চলছে। কলকাতায় বিচারপতির এজলাসে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসের বাইরেও বিক্ষোভ হয়েছে। একজন বিচারপতির বিরুদ্ধে কুরুচিকর পোস্টার দেওয়া হয়েছে। এই মামলার মামলাকারী (অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়) প্রকাশ্য জনসভায় বিচারপতির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। এই পরিস্থিতিতে এই নির্দেশে বিচারপতিদের মনোবল ধাক্কা খেতে পারে।” যাঁরা এইসব ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাঁরা এই নির্দেশের ফলে আরও সাহস পেয়ে যাবেন বলেও মন্তব্য করেন সলিসিটার জেনারেল। এ কথা শুনে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, “আমরা বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের কোনও নির্দেশকে স্পর্শ করছি না। তদন্তও যেমন চলছে, চলবে। তবে, সাক্ষাৎকারে তাঁর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত আমাদের নিতে হচ্ছে।” বিচারপতিদের হেনস্থার বিষয়টিও তাঁরা গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন।

অন্যদিকে, বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এদিন যেভাবে সুপ্রিম কোর্টের সেক্রেটারি জেনারেলের কাছ থেকে তাঁর সাক্ষাৎকারের তর্জমার কপি এবং সিডি শুক্রবার মধ্যরাতের (রাত্রি ১২ টা ১৫’র মধ্যে) মধ্যেই চেয়ে পাঠিয়েছিলেন, সেই নির্দেশে সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ বেঞ্চ রাত্রি ৮-টা ১৫ নাগাদ স্থগিতাদেশ জারি করেছেন। সেই নির্দেশ মেনে নিয়েছেন কেন্দ্রের সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা। তাঁর মতে, “কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি এভাবে অর্ডার দিতে পারেন না!” এই বিষয়ে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নতুন করে কোন মন্তব্য না করলেও, হাইকোর্ট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় একরাশ অভিমান ও হতাশা প্রকাশ করেছেন! উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি জানিয়েছেন, “সুপ্রিম কোর্ট সর্বোচ্চ আদালত। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ মেনে নিতে হবে। তবে, আমার কাছে এখনো দুর্নীতির অনেক মামলা আছে। যে গ্রাউন্ডে আজ দু’টি মামলা সরানো হয়েছে; সেই গ্রাউন্ডেই হয়তো বাকি মামলাগুলোও সরিয়ে দেওয়া হতে পারে। নতুন বিচারপতি সেগুলো শুনবেন। আমি ৬ মাসে যেটা করেছি, সেটার জন্য হয়তো ৬০ বছর লাগতে পারে! সুপ্রিম কোর্ট যুগ যুগ জিও!” বোঝাই যাচ্ছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে লড়াই তিনি শুরু করেছিলেন, তাতে সুপ্রিম কোর্টের আরো সাহায্য ও সমর্থন তিনি আশা করেছিলেন; বাস্তবে তা পাচ্ছেন না বলেই হয়তো এভাবে অভিমান উগরে দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।

thebengalpost.net
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়: