দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, কলকাতা, ৯ ডিসেম্বর: প্রাথমিকের নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সম্প্রতি পর্ষদ (প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ) আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বিচারপতি অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করেছিলেন, “মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি বলেই ওদের চাকরি হয়নি!” এরপরই, ক্ষুব্ধ বিচারপতি মন্তব্য করেন, “একেবারে ঢাকি সমেত বিসর্জন দিয়ে দেব! যেদিন পুরো প্যানেল বাতিল করব সেদিন এর অর্থ বুঝিয়ে বলব।” প্রসঙ্গত, ২০১৪ টেট থেকে ২০১৬-‘১৭ সালে যে ৪২,৫০০ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ হয়েছিল, সেখানেই ৩২,০০০ পদে দুর্নীতি হয়েছিল অভিযোগ এনে একদল পিটিশনার মামলা করেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চে। তাঁদের অভিযোগ ছিল, মেধা তালিকা প্রকাশের পর তাঁরা দেখতে পেয়েছেন, তাঁদের থেকে কম নম্বর পেয়েও হাজার হাজার অযোগ্য প্রার্থীরা শিক্ষকতা করছেন। আর, বেশি নম্বর থেকেও, তাঁরা বাতিলের তালিকায় পড়েছেন। ৪২ হাজারের মধ্যে ৩২ হাজার শিক্ষক নিয়োগ-ই হয়েছে দুর্নীতির মাধ্যমে! এই অভিযোগ আসার পরই ক্ষুব্ধ বিচারপতি ‘সরাসরি’ এই দুর্নীতির জন্য তৎকালীন পর্ষদ সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য’র প্রতি ইঙ্গিত করেন! বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টে শুনানি শেষে কিছুটা হালকা মেজাজে থাকা বিচারপতি তাঁর এই মন্তব্যের ব্যাখ্যাও দেন। কারণ, মঙ্গলবার তাঁর মন্তব্যের পরই শোরগোল পড়ে যায়। তৈরি হয় নানা বিতর্ক! বৃহস্পতিবার বিচারপতি বলেন, “আমি তো বলেছি ঢাকি সমেত বিসর্জন দিয়ে দেব।” এরপরেই পর্ষদের আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে তিনি যোগ করেন, “ওঁরা আমাকে বলতে বাধ্য করে।”

thebengalpost.net
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্যের পরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ছবি হু হু করে ভাইরাল হতে শুরু করে:

তবে, তাঁর বক্তব্যের উদ্দেশ্য যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন, তাও স্পষ্ট করে দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বরং মুখ্যমন্ত্রীর কাজের প্রশংসা করে তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী ভাল কাজ করছেন। আমি কেন খারাপ কথা বলব?” সরকারি আইনজীবী ভাস্কর প্রসাদ বৈশ্যকে উদ্দেশ্য করে এও বলেন, “চন্দ্রিমাদিকে (মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে) বলে দেবেন, আর কোনও মন্তব্য করব না। আমি কেন খারাপ কথা বলব?” উল্লেখ্য যে, মঙ্গলবার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের “ঢাকি সমেত বিসর্জন দিয়ে দেব” মন্তব্যের পরই ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া, ডিজিটাল মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়া ‘বিতর্কে’ উত্তাল হয়। মিমের বন্যা বয়ে যায়! এমনকি, স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঢাক বাজানোর (চলতি বছরে দুর্গা পুজোর উদ্বোধনে) একটি ছবিও হু হু করে ভাইরাল হতে শুরু করে! এরপরই, রাজ্যের শাসক দলের তরফে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করা হয়। আর, সেই ‘বিতর্ক’ আর বাড়াতে না চেয়ে বৃহস্পতিবার নিজের এজলাসে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ‘মুখ্যমন্ত্রী’র দরাজ প্রশংসা করলেন। একইসঙ্গে, ঢাকি সমেত বিসর্জনেও অনড় থাকলেন! তবে, সেই ‘ঢাকি’ যে মুখ্যমন্ত্রী নন; বরং জেলবন্দী প্রাক্তন পর্ষদ সভাপতি বা অন্য কেউ হতে পারেন, তাও স্পষ্ট করে দেন তিনি। অন্যদিকে, ওইদিনই স্কুল সার্ভিস কমিশনের একটি মামলা শেষে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় কমিশনের আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, “আপনারা নির্ভয়ে কাজ করুন, অনেক ধেড়ে ইঁদুর বেরোবে!” বিচারপতি বৃহস্পতিবার এই মন্তব্যের ব্যাখ্য দিতে গিয়ে বলেন, “সেদিন ধেড়ে ইঁদুর বলেছি সুব্রত দা (অর্থাৎ আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায়)’র সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে।” বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “উনি বুঝেছিলেন কেন বলেছি। এই পরিবেশে অবশ্য সেটায় অন্য মাত্রা যোগ হয়েছে।” তবে, এজন্য সংবাদমাধ্যমকে দায়ী না করে বিচারপতি মন্তব্য করেছেন, “এক্ষেত্রে বিশ্লেষণে একটু ভুল হয়ে গেলেও, সংবাদমাধ্যম আমাকে খুব ভালোবাসে।”