Kolkata High Court

Recruitment Scam: “বোমা বাঁধতে পারলে কি বাড়তি নম্বর পাওয়া যায়?” প্রাথমিকে ১৬,৫০০ নিয়োগ তদন্তেও এবার ED-CBI, চাকরি রক্ষা হলনা নবম-দশমের ৬১৮ ‘ভুয়ো’ শিক্ষকের

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, কলকাতা, ২ মার্চ: “যদি দেখা যায় একজন যোগ্য প্রার্থীও বঞ্চিত হয়েছেন…তবে, এই শিক্ষা জগতে আমার মুখ আর দেখা যাবে না!” বছরখানেক আগে ঠিক এমন মন্তব্যই শোনা গিয়েছিল ‘মেধাতত্ত্বের জনক’ (বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের দেওয়া উপাধি) মানিক ভট্টাচার্যের মুখে। সেই সময় তিনিই ছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা পরিষদের প্রেসিডেন্ট তথা ‘সর্বময় কর্তা’। এখন তিনি জেলে। আকন্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত পর্ষদের এই প্রাক্তন কর্তার ‘পাপের ভাগীদার’ হয়ে স্ত্রী-ছেলেও গেছেন জেলে! আর, তাঁর আমলে হওয়া প্রায় ৭০-৭৫ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের যে অর্ধেকের বেশি ‘বেআইনিভাবে’ (বা, দুর্নীতির মাধ্যমে) সম্পন্ন হয়েছে, তা আদালতে প্রায় প্রমাণের পথে। এমনটাই দাবি আইনজীবীদের। ইতিমধ্যে, ২০১৪ টেটের মাধ্যমে (প্রথম দফায়) নিযুক্ত ৪২,৫০০ শিক্ষক নিয়োগের তদন্ত শুরু করেছে ইডি-সিবিআই। আর, আজ, বৃহস্পতিবার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ২০১৪ টেট পাস (Primary TET 2014) দের মধ্য থেকে (দ্বিতীয় দফায়) ২০২০ সালে নিযুক্ত ১৬,৫০০ নিয়োগেও সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিলেন। আর্থিক কেলেঙ্কারির ক্ষেত্রে জুড়ে দিলেন ইডি’কেও। শুধু তাই নয়, এদিন তাঁর বিস্ফোরক মন্তব্য, “বোমা বাঁধতে পারলে কি বাড়তি নম্বর পাওয়া যায়?” কিংবা “বীরভূমে পেটো (হাত বোমা) বাঁধলে কত নম্বর পাওয়া যায়?”

প্রাথমিকে ফের সিবিআই তদন্তের নির্দেশ:

উল্লেখ্য, এই নিয়োগেও (২০১৪ টেট থেকে ২০২০ সালের ১৬,৫০০ নিয়োগ) বেনজির দুর্নীতি হয়েছে অভিযোগ করে মামলা দায়ের হয় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে। মেধাতালিকা থেকে ইন্টারভিউ- দুর্নীতির কোন ‘তল’ খুঁজে পাচ্ছেন না মামলাকারীদের আইনজীবীরা- এমনটাই অভিযোগ। টেট, অ্যাকাডেমিকের ‘মোট নম্বর’ এর থেকেও ভুয়ো-শিক্ষকদের ‘প্রাপ্ত নম্বর’ বেশি বলে অভিযোগ। উদাহরণ স্বরূপ, টেটের জন্য বরাদ্দ ছিল ৫ নম্বর আর প্রশিক্ষণের জন্য ১৫ নম্বর। তালিকায় দেখা গেছে, চাকরি পাওয়া শিক্ষকদের কেউ কেউ ৫’র মধ্যে ৭ কিংবা ১৫’র মধ্যে ১৭ পেয়ে বসে আছেন! আবার, বাঁকুড়ার রাজীব দীক্ষিতের মত কেউ কেউ আছেন, অ্যাকাডেমিকে নম্বর খুবই কম, অথচ ইন্টারভিউতে দেওয়া হয়েছে ১০ এর মধ্যে ৯! বাস্তবে তাঁর স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, তিনি যোগ-বিয়োগ কিছুই জানেন না! এসবেরই তদন্ত করবে ইডি-সিবিআই। বৃহস্পতিবার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তদন্তের স্বার্থে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অ্যাড হক (অস্থায়ী) কমিটির সদস্যদের নিজেদের হেফাজতে নিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবেন তদন্তকারীরা। তবে ওই কমিটির সদস্যা, ৮০ বছরের এক বৃদ্ধাকে নিজেদের হেফাজতে নিতে পারবে না সিবিআই কিংবা ইডি! আদালত এ-ও জানিয়েছে যে, এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানিকে কেন পর্ষদ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব দিয়েছিল, তা তদন্ত করে দেখবেন ইডি এবং সিবিআইয়ের আধিকারিকরা। ২০১৪ সালে টেটের উত্তরপত্র মূল্যায়ন থেকে তা নষ্ট করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল এই সংস্থাকে। যাবতীয় তদন্ত শেষ করে ২০ এপ্রিলের মধ্যে আদালতে রিপোর্ট পেশ করতে হবে সিবিআই এবং ইডিকে। ওই দিনই এই মামলার পরবর্তী শুনানির ধার্য আছে। উল্লেখ্য যে, আদালতের নজরদারিতেই চলবে এই তদন্ত।

অন্যদিকে, নবম-দশম মামলায় গতকালই রায়দান করে কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চ। সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশের ওপর হস্তক্ষেপ করেনি ডিভিশন বেঞ্চ। তারপরেই, গতকাল (বুধবার) রাতে ৬১৮ জনের সুপারিশ পত্র প্রত্যাহার করে কমিশন (SSC)। ওয়েবসাইটে জারি করা হয় বিজ্ঞপ্তি। এরপরই, আজ (বৃহস্পতিবার) নতুন করে মামলা দায়ের করার অনুমতি চান ৯৫২ জনের একাংশ। যদিও দ্রুত শুনানি সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু। “নবম দশমের ৬১৮ জনের সুপারিশ পত্র বাতিলের ওপর এখনই কোন স্থগিতাদেশ দেব না”, জানান বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু (Justice Biswajit Basu)। তিনি জানান, “এসএসসি ৬১৮ জনের সুপারিশ পত্র প্রত্যাহারের যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে তার ওপর এখনই কোন স্থগিতাদেশ নয়”! উল্লেখ্য যে, বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চ চাকরি পাতিলে কোনো স্থগিতাদেশ না দিলেও ১৩ জন মামলাকারীকে সিঙ্গেল বেঞ্চে নতুন করে আবেদনের অনুমতি দিয়েছিলেন। তার প্রেক্ষিতেই বিচারপতি বসু জানান, “তাড়াহুড়ো নেই। শুনানি হবে। তবে, স্কুল সার্ভিস কমিশনের সিদ্ধান্তে স্থগিতাদেশ দেওয়া হবে না।” এরপরই, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফে জানানো হয়, “নিয়োগপত্র প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু করেছি।”

কোনো স্থগিতাদেশ দিলেন না বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু:

News Desk

Recent Posts

Snake Lover: সাপ ধরে বাড়িতেই পরিচর্যা করতেন; পোষা কেউটের দংশনেই প্রাণ হারালেন পশ্চিম মেদিনীপুরের ‘সর্পবন্ধু’

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ নভেম্বর: সাপ ধরে বাড়িতেই পরিচর্যা করতেন। এলাকাবাসীদের কথায়,…

21 hours ago

Medinipur: খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসকদের গাফিলতিতে মাতৃগর্ভেই শিশু মৃত্যুর অভিযোগ

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ নভেম্বর: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসকদের…

24 hours ago

Midnapore: কথা দিয়ে কথা রাখেনি; পশ্চিম মেদিনীপুরের শিক্ষকের করা মামলায় বহুজাতিক সংস্থাকে জরিমানা করল জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: সংগ্রাম, আন্দোলন কিংবা প্রতিবাদ। বরাবরই পথ দেখিয়ে…

2 days ago

Medinipur: বাড়ির ভিত তৈরির জন্য চলছিল খোঁড়াখুঁড়ি; হঠাৎই বেরিয়ে এল প্রাচীন সুড়ঙ্গ! চাঞ্চল্য পশ্চিম মেদিনীপুরে

শশাঙ্ক প্রধান, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: বাড়ির ভিত তৈরির জন্য চলছিল খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। খোঁজ মিলল…

3 days ago

Midnapore: সিরিঞ্জ থেকে জীবনদায়ী ওষুধের সং*কট মেদিনীপুর মেডিক্যালে! চিঠি লিখলেন জুনিয়র ডাক্তাররা

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: ৫ এম.এল, ১০ এম.এল-র সিরিঞ্জ থেকে অ্যাড্রিনালিনের…

3 days ago

Midnapore: ‘দ্রোণাচার্য’ পুরস্কারে ভূষিত হলেন বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা স্বাতী বন্দ্যোপাধ্যায়

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৮ নভেম্বর: এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও নলেজ…

3 days ago