দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, কলকাতা, ৩ মে: প্রাথমিকে নিয়োগ নিয়ে বুধবার জোড়া ফলায় বিদ্ধ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। এদিন, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু এবং বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া’র ডিভিশন বেঞ্চে ছিল ২৭৩ চাকরিহারা-শিক্ষকের ‘বেআইনি-নিয়োগ’ (বাড়তি নম্বর দিয়ে) সংক্রান্ত বড় শুনানি। অন্যদিকে, কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চে ছিল অ্যাপটিটিউড টেস্ট (না হওয়া) ছাড়াই ৪২ হাজার শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত মামলা। মূলত তৎকালীন পর্ষদ সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ২০১৪ সালের প্রাইমারি টেটের ভিত্তিতে ২০১৬-‘১৭ সালে যে ৪২ হাজার ৫০০ শিক্ষক নিয়োগ হয়েছিল, তারই নানা দুর্নীতি বা বেআইনি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এদিন যথাক্রমে- সুপ্রিম কোর্টে ও কলকাতা হাইকোর্টে ঝড় ওঠে। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে চাকরি হারানো ২৭৩ জন প্রাথমিক শিক্ষক হাইকোর্টের রায় চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন। সেই মামলাতেই এদিন সব পক্ষকে হলফনামা জমা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু ও বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া। আর তাতেই সুপ্রিম কোর্ট যে রিপোর্ট হলফনামা আকারে জমা দিয়েছেন, তাতে রীতিমতো চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেছে দুই বিচারপতির!
শীর্ষ আদালতে সিবিআইয়ের দেওয়া রিপোর্টে জানানো হয়েছে, মানিক ভট্টাচার্যই এই নিয়োগ কেলেঙ্কারির ‘নাটের গুরু’! আর, মানিককে পর্ষদ সভাপতি রাখতে রাজ্য সরকার যেভাবে বার বার নিয়ম পরিবর্তন করেছে, রিপোর্টে সেই দিকটিও উল্লেখ করা হয়েছে। রাজ্য সরকারের পরোক্ষ মদত আর মানিকের প্রত্যক্ষ প্রভাবে হাজার হাজার বেআইনি নিয়োগ হয়েছে বলে জানিয়েছে CBI। অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীদেরও টেট উত্তীর্ণ হিসাবে দেখানো হয়েছে। রিপোর্টে সিবিআই টেট উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের জেলাভিত্তিক একটি দীর্ঘ তালিকা প্রকাশ করেছে। টেট পাশের জন্য সংরক্ষিত প্রার্থীদের দরকার ৮২ নম্বর। অসংরক্ষিত প্রার্থীরা ৯০ পেলে পাশ করেন। সেখানে দেখা গিয়েছে, প্রার্থীদের কারও নামের পাশে রয়েছে ৫, কারও প্রাপ্ত নম্বর ৩। ১২, ১৩, ৩৩, ৪৫ নম্বরও পেয়েও পাশ করেছেন প্রার্থীরা। মুর্শিদাবাদের ২৬ জন, উত্তর চব্বিশ পরগনার ১১ জন, বীরভূমের ১৩ জন সিবিআইয়ের তালিকায় রয়েছেন। এছাড়াও, কলকাতা, পুরুলিয়া এবং কোচবিহারের আরও ৩৬ জন প্রার্থীর নামের তালিকাও রিপোর্টে দেখিয়েছে সিবিআই। তাঁদেরও বেআইনি ভাবে পাশ করিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। তালিকায় ছিলেন দু’জন উর্দু মাধ্যমের চাকরিপ্রার্থীও। অভিযোগ, তাঁরা টেট উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য প্রাপ্ত নম্বরের চেয়ে অনেক কম নম্বর পেয়েছেন! শুধু তাই নয়, অ্যাড হক কমিটিকে দিয়ে ২৭৩ জন অকৃতকার্য প্রার্থীকে পাস করিয়ে নিয়োগ করার বেআইনি সিদ্ধান্তও মানিক ভট্টাচার্য-ই নিয়েছিলেন বলে সিবিআই জানিয়েছে। অ্যাড হক কমিটির ১ জন ছাড়া বাকিরা সিবিআই জেরায় তা স্বীকার করেছেন বলেও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও, চাকরিহারাদের আইনজীবী পি.এস পাটওয়ালিয়া জানান, বোর্ডের তরফে রেজুলেশন করে ১ নম্বর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। শিক্ষা দফতর তাতে সম্মতি দেওয়ার পর নিয়োগ করা হয়েছিল তাঁর মক্কেলদের। যদিও, সিবিআই এর রিপোর্ট এবং যোগ্য প্রার্থীদের আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, কোনো রেজুলেশন সেই সময় করা হয়নি। এদিন, টানটান সওয়াল-জবাব পর্বে দুই বিচারপতি কার্যত দুর্নীতির বহর উপলব্ধি করে স্তম্ভিত হয়ে যান! আগামী বুধবার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন তাঁরা। ততদিন, স্থগিতাদেশ বজায় থাকবে বলেও জানিয়েছেন দুই বিচারপতি।
অন্যদিকে, কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চে এদিন অ্যাপটিটিউড সংক্রান্ত মামলায় প্রাথমিকের ৪২ হাজার ৫০০ শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দু’সপ্তাহের মধ্যে প্যানেলের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বুধবার প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন- প্রতিটি জেলার কাস্ট ও ক্যাটাগরি অনুযায়ী সর্বশেষ কাট-অফ মার্কস আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। এই মামলার অন্যতম আইনজীবী তরুণজ্যোতি তেওয়ারি জানিয়েছেন, “রুপালি সাহা, রাজর্ষি মুখার্জি, সুদীপ্তা ঘোষ, সায়ক হালদার, আমিরুল ইসলাম সহ আরো প্রায় ৪০০ জনের করা পাঁচটি মামলার শুনানি হয়েছে আজকে। ২০১৬-‘১৭ প্রাথমিক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বোর্ডকে District Wise, Caste Wise, Category Wise, Medium last empanelled candidates দের Cut Off জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন মাননীয় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এটা জানাতে হবে।”