দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, ২২ মে: কর্মজীবন শুরু করেছিলেন WBCS অফিসার হিসেবে। আর, দুর্নীতির কারণেই সেই WBCS অফিসারের পদ থেকে সরে দাঁড়ান! তার পর থেকেই নিজের পেশাক পাল্টে ফেলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। জানা গিয়েছে, মিত্র ইনস্টিটিউশনের মেন ব্রাঞ্চে পড়াশোনা করেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। যদিও, স্নাতক হওয়ার পর পাঁচ বছর আইন পড়েছিলেন তিনি। তবে, WBCS পরীক্ষায় বসে সফলতা লাভ করে “এ” গ্রেডের অফিসার হিসেবে নিযুক্ত হন। এই অবস্থায়, উত্তর দিনাজপুরে কর্মরত থাকাকালীন জমির পাট্টা বিলি নিয়ে চরম দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে এক পঞ্চায়েত সদস্যের বিরুদ্ধে। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে রুখে দাঁড়ান তিনি। যদিও, সেই গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য তাঁকে রীতিমতো চোখ রাঙিয়েছিল বলে জানা যায়! আর, তার পর থেকেই ‘দুর্নীতি’র বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নতুন অঙ্গীকার করেছিলেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।

একজন WBCS অফিসারের এহেন অপদস্থ হওয়ার ঘটনা মানতে পারেননি তিনি। ঠিক করেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ অন্য পথে রুখে দাঁড়াবেন! সময়ের সাথে সাথে, ২০০৯ সালে এসএসসির (School Service Commission) ‘ল’ অফিসার হিসেবে নিয়োজিত হন। এই সম্পর্কিত সারা রাজ্যের যত মামলা রয়েছে, সেই সমস্ত তথ্য তাঁর কাছে আসত। ২০১১ সালে পালাবদলের পরেও স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রধান আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। আর সেই কারণেই এই ধরনের মামলায় তাঁর বিস্তারিত অভিজ্ঞতা রয়েছে। এরপর, গত চার বছর আগে (২০১৮ এর মে মাসে) কলকাতা হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি (অ্যাডিশনাল জাজ) হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। ২০২০ এর জুলাই মাস থেকে তিনি স্থায়ী বিচারপতি’র স্বীকৃতি পান। তার পর থেকেই মূলত শিক্ষা সংক্রান্ত মামলাগুলি তিনি দেখতে শুরু করেন। এসএসসি নিয়োগে দুর্নীতি মামলাও এসে পৌঁছয় তাঁর এজলাসে। লড়াই শুরু হয় দুর্নীতি’র বিরুদ্ধে! রীতিমতো কালঘাম ছুটিয়ে দিচ্ছেন মন্ত্রী, আমলা থেকে আধিকারিকদের। এমনকি, অন্যায় করলে ছেড়ে কথা বলছেন না বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক- কেও!

কখনও আবার সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধাকে এরিয়ার সমেত চাকরিজীবনের বেতন পাইয়ে দিয়ে আবার কখনও ক্যান্সার আক্রান্ত শিক্ষিকার সহায় হয়ে মানবিক দৃষ্টান্তও স্থাপন করেছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। শুধু তাই নয়, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় হলেন সেই বিচারপতি, যিনি স্পষ্টভাবে জানিয়ে ছিলেন, মাথায় বন্দুক ঠেকানো হলেও, দুর্নীতিকে সমূলে উৎপাটিত করবেন তিনি! তাঁর নির্দেশেই চাকরি গেছে স্বয়ং শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর কন্যার। এমনকি, শাসকদলের মহাসচিব তথা রাজ্যের ‘হেভিওয়েট’ মন্ত্রী (প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী) পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে সিবিআই জেরার মুখে পড়তে হয়েছে। তদন্তে দুর্নীতি-যোগ উঠে এলে, তিনি যে এই দুই মন্ত্রীকে সরাসরি গ্রেফতার করার নির্দেশও দেবেন তা বলাই বাহুল্য! আর এভাবেই, রাজ্যের হাজার হাজার যোগ্য চাকরিপ্রার্থীর কাছে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় কার্যত হয়ে উঠেছেন “মসিহা”।

thebengalpost.net
অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়: