দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, খড়্গপুর, ২৬ জুন:রেল শহরে রেলের টেন্ডার কিংবা ছাঁট লোহার কারবার ঘিরে শুট-আউটের ঘটনা নতুন নয়। অতীতে মানস চৌবে, গৌতম চৌবে থেকে কুখ্যাত ‘রেল মাফিয়া’ শ্রীনু নাইডু- সকলেই নিহত হয়েছেন প্রকাশ্য দিবালোকে শুট-আউটের ঘটনায়! এর আগে-পরেও ছোট-বড় একাধিক ছাঁট লোহার কারবারী কিংবা রেল মাফিয়ার গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় নাম জড়িয়েছে একদা রেল শহরের ত্রাস বাসব রামবাবু থেকে শ্রীনু নাইডু কিংবা ধর্মা রাও, শঙ্কর রাও, সঞ্জয় প্রসাদদের। মঙ্গলবারও (২৫ জুন) সাত বছর আগের শ্রীনু হত্যা (২০১৭ সালের ১১ জানুয়ারি)-র স্মৃতি উস্কে দিনেদুপুরে গুলি চলে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয়ের ঠিক পাশেই! রেল শহর খড়্গপুরের ১৫নং ওয়ার্ডের (জয় হিন্দ নগরে) সেই শুট আউটের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন রেলের ঠিকাদারি কারবারের সঙ্গে যুক্ত এক যুবক। বি. সন্তোষ কুমার নামে বছর ৩৮-র ওই যুবক আবার নিজেকে তৃণমূল কর্মী হিসেবে দাবি করেন। ঘটনার কিছু পরেই হাড় হিম করা CCTV ফুটেজ প্রকাশ্যে আসে। আর সেই ফুটেজ খতিয়ে দেখেই দুষ্কৃতীদের খোঁজে অভিযান চালায় খড়্গপুর টাউন থানার পুলিশ। মঙ্গলবার গভীর রাতেই রেল শহর থেকে গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্ত তিন দুষ্কৃতীর মধ্যে দু’জনকে। অপর জনের খোঁজেও চলছে তল্লাশি। দ্রুত তাকে গ্রেফতার করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

thebengalpost.net
ধৃত দুই দুষ্কৃতী:

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রেল শহর খড়্গপুরেরই বাসিন্দা ধৃত দুই দুষ্কৃতী, যথাক্রমে- ভিকি পিল্লাই এবং উত্তম কোনডালের কাছ থেকে দু’টি আগ্নেয়াস্ত্র সহ বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। শুট-আউটের সময় ব্যবহৃত স্কুটিটিও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। শুধু তাই নয় ধৃতদের কাছ থেকে বেশ কয়েক লক্ষ টাকাও উদ্ধার করেছে পুলিশ! বুধবার দুপুরেই ধৃতদের খড়্গপুর মহকুমা আদালতে পেশ করে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। অস্ত্র আইন সহ একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তদন্তে নেমে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, রেলের টেন্ডার ঘিরেই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ কিংবা টাকার বখরা (ভাগাভাগি) নিয়ে গন্ডগোল থেকেই শুট-আউটের ঘটনা! আর তাতেই গুলিবিদ্ধ হন জয় হিন্দ নগরের তৃণমূল কার্যালয়ের পাশে বাঁধানো গাছ তলায় বসে থাকা বি. সন্তোষ কুমার নামে ওই যুবক (বা, তৃণমূল কর্মী)। দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতাল এবং পরে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন আছেন সন্তোষ। এই ঘটনায় তিন দুষ্কৃতী ছাড়াও, আরও কোনও ‘বড় মাথা’ যুক্ত আছে কিনা খতিয়ে দেখছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ।

thebengalpost.net
তৃণমূলের সেই দলীয় কার্যালয়ে বাহিনী মোতায়েন:

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বেলা আড়াইটা নাগাদ খড়্গপুর শহরের ১৫-নং ওয়ার্ডের জয় হিন্দ নগরে অবস্থিত তৃণমূল কার্যালয়ের ঠিক পাশেই শান-বাঁধানো গাছের তলায় বসে থাকা বেশ কয়েকজন যুবককে লক্ষ্য করে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি চালায় তিন দুষ্কৃতী। দুষ্কৃতীরা একটি স্কুটিতে করে এসেই এলোপাথাড়ি গুলি চালানো শুরু করে। বাকিরা পালিয়ে গেলেও, পায়ে পুরানো আঘাত থাকার কারণে ছুটতে না পেরে গুলিবিদ্ধ হন বি. সন্তোষ কুমার। মঙ্গলবার হাসপাতালের বেডে শুয়ে নিজেকে তৃণমূল কর্মী বলে দাবি করেছিলেন সন্তোষ। যদিও, এই ঘটনায় রাজনৈতিক-যোগ উড়িয়ে দিয়েছিলেন জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি সুজয় হাজরা থেকে খড়্গপুর শহরের তৃণমূল নেতারা। জানা যায়, শ্রীনু হত্যা মামলায় সম্প্রতি রাম বাবুর সঙ্গেই জামিন পাওয়া সঞ্জয় প্রসাদই জয় হিন্দ নগরের ওই তৃণমূল কার্যালয়ের মূল নিয়ন্ত্রক। সন্তোষ সঞ্জয়ের অনুগামী বলেই সূত্রের খবর। ১৫নং ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর (কংগ্রেস থেকে যোগ দেওয়া) বান্তা মুরলিধর রাও-ও সংবাদমাধ্যমকে সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়াই জানিয়েছেন, ওই পার্টি অফিসটি সঞ্জয় পরিচালনা করে। তাঁদের (বান্তা মুরলিধরদের) পৃথক পার্টি অফিস আছে। এ প্রসঙ্গে এও উল্লেখ্য যে, লোকসভা নির্বাচনের মাস দুয়েক আগেই তৃণমূল কাউন্সিলর বান্তা মুরলি’র বাড়িতেও সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা হামলা চালিয়েছিল। তার দিন পনেরোর মধ্যেই তৃণমূলের প্রাক্তন কাউন্সিলর একদা রামবাবু-ঘনিষ্ঠ অঞ্জনা সাঁকরে-র স্বামী রঞ্জিত সাঁকরে-র উপরে হামলা হয়। ফের একবার সেই ১৫নং ওয়ার্ড-ই শিরোনামে! ঘটনাচক্রে ১৫নং ওয়ার্ডের ঠিক পাশেই আবার ১৮নং ওয়ার্ড। সেই ১৮নং ওয়ার্ডের দলীয় কার্যালয়েই গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছিলেন শ্রীনু। সন্তোষের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাতেও ঘুরেফিরে চলে এলো রেল-মাফিয়া যোগ! যদিও, জেলা পুলিশ সুপারের আশ্বাস, “শুধু ‘রেল শহর’ কেন, জেলার কোথাও কোনও দুষ্কৃতী-তাণ্ডব বরদাস্ত করা হবেনা!” শাসকদলের দাবি, “রেল শহর আগের তুলনায় অনেক শান্ত!” বাম-বিজেপি’র দাবি, “শান্তির নমুনা শহরবাসী দেখতেই পাচ্ছেন!”

thebengalpost.net
CCTV ফুটেজ: