দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, খড়্গপুর, ৩০ জুন: “এখনও জেল থেকে বেরিয়ে আসেনি, তার আগেই হুমকি দেওয়া শুরু হয়ে গেছে। বলছে, এক এক কো ঘরমে ঘুঁসকার মারেঙ্গে! শুধু আমি নয়, আমার ওয়ার্ডের সমস্ত কর্মী থেকে সকল খড়্গপুরবাসী আতঙ্কে আছে। একসঙ্গে ১৩ জন কুখ্যাত দুষ্কৃতী খড়্গপুর শহরে পৌঁছলে কি হবে! গত ২ দিন ধরে খড়্গপুরের সমস্ত মানুষ এ নিয়েই চিন্তা করে যাচ্ছে।” খড়্গপুর পৌরসভার ১৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা ২০১৭ সালে (১১ জানুয়ারি) দুষ্কৃতীদের গুলিতে নিহত ‘রেল মাফিয়া’ শ্রীনু নাইডু’র স্ত্রী এ. পূজা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিজেদের নিউ সেটলমেন্টের বাড়িতে বসে ঠিক এভাবেই আতঙ্ক প্রকাশ করেছেন। প্রসঙ্গত, শ্রীনু হত্যার প্রধান আসামী বাসব রামবাবু সহ ১৩ জন কুখ্যাত মাফিয়া বা গ্যাংস্টারকেই মঙ্গলবার বেকসুর খালাস করেছে মেদিনীপুর আদালত। উপযুক্ত তথ্য প্রমাণের অভাবে শ্রীনু হত্যা মামলায় তাদের ‘বেকসুর খালাস’ করা হয়েছে বলে জানা যায়। যদিও, সরকারি আইনজীবী তথা স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর সমর কুমার নায়েক মঙ্গলবার জানিয়েছিলেন, “এই রায় মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। খুনের সমস্ত তথ্য প্রমাণ দেওয়া সত্বেও ১৩ জন কুখ্যাত দুষ্কৃতীকে মুক্ত করলো আদালত! আমরা উচ্চ আদালতে আবেদন জানাব।” তিনি বিচারকের এই রায়কে বায়াসড বা পক্ষপাতদুষ্ট (Biased) বলেও আখ্যা দিয়েছিলেন। এদিকে, খড়্গপুরের একসময়ের কুখ্যাত ‘রেল মাফিয়া’ তথা ‘ডন’ রামবাবু এবং তাঁর ১২ জন সাগরেদের মুক্তির নির্দেশ আসার পরই আতঙ্কে ভুগছেন শ্রীনু নাইডু’র স্ত্রী তথা বর্তমান খড়্গপুর পৌরসভার কাউন্সিলর (১৮নং ওয়ার্ড) এ. পূজা।

thebengalpost.net
এ. পূজা নাইডু :

মঙ্গলবার (২৭ জুন)-ও আদালত চত্বরে কাঁদতে কাঁদতে পূজা জানিয়েছিলেন, “সুবিচার পেলাম না। আমার স্বামীর মৃত্যুর সুবিচার হলো না!” বৃহস্পতিবারও সাংবাদিকদের তিনি জানালেন, “ন্যায় পেলামনা! এটা কি অর্ডার হল! মেদিনীপুর আদালতের আইনজীবীরা পর্যন্ত বলছেন, তাঁদের জীবনে কখনও এরকম হয়নি। একসঙ্গে, ১৩ জন দাগী আসামীকে এভাবে কখনো ছাড়া হয়নি।” এজন্য তিনি মামলার জাজমেন্ট কপি নিয়ে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করবেন বলেও জানিয়েছেন। পূজা জানান, “দিদির কাছেই ন্যায় (বিচার) চাইব। উনিই একমাত্র পারেন ন্যায় (সুবিচার) পাইয়ে দিতে।” কাঁদতে কাঁদতে বলেন পূজা। তাঁর মতে, এই সকল দুষ্কৃতীরা খড়গপুর শহরে এলে আবার অশান্ত হয়ে উঠবে ‘রেল শহর’। পুলিশ প্রশাসন তাদের কতটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে, তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন খোদ পৌরসভার কাউন্সিলর এ. পূজা। এমনকি, রায়ের পর প্রদীপ সরকার সহ দু’একজন ঘনিষ্ঠ কাউন্সিলর ছাড়া দলের তরফে কেউই যে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেননি তাও জানান পূজা। চেয়ারম্যান কল্যাণী ঘোষ সহ কেউ ফোন না করায় আক্ষেপ প্রকাশ করেন পূজা। বলেন, “দিদি (কল্যাণী ঘোষ) একবারও ফোন করেননি!” হতাশ পূজা এও জানান, “আমাকে খড়্গপুরবাসী একটাই প্রশ্ন করছেন, আপনারা শাসকদলের (তৃণমূল কংগ্রেসের) কর্মী হয়েও যদি সুবিচার না পান, তাহলে আমাদের কি হবে!” তাই, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ‘সুবিচার’ চাইবেন বলে জানান পূজা।

thebengalpost.net
মঙ্গলবার রায়ের পর মেদিনীপুর আদালতে রামবাবু: