দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ ডিসেম্বর:”আমি বিদ্রোহী রণক্লান্ত…আমি সেই দিন হব শান্ত…”। প্রেক্ষাপটের সঙ্গে যদিও তেমন মিল নেই, তবে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বিদ্রোহী কবি’র এই ‘গান’কেই যেন মনেপ্রাণে আঁকড়ে ধরে গেয়ে চলেছিলেন খড়্গপুরের ২০ জন ‘বিদ্রোহী’ কাউন্সিলর! অবশেষে, তাঁদের ‘শান্ত’ হওয়ার সময় হয়েছে। চেয়ারম্যান প্রদীপ সরকারের বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহ’ সফল হয়েছে। দলীয় নেতৃত্বের তরফে প্রদীপ সরকার-কে পদত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর অনুযায়ী, আজ, সোমবার অথবা আগামীকাল মঙ্গলবার-ই চেয়ারম্যান বা পৌরপ্রধান- এর পদ থেকে ‘ইস্তফা’ দিতে চলেছেন প্রদীপ সরকার। সোমবার সকালে মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি সুজয় হাজরা জানিয়েছেন, “আমাদের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জেলা নেতৃত্বকে নির্দেশ দিয়েছেন, প্রদীপ সরকারকে খড়্গপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার বিষয়টি জানিয়ে দিতে। ওঁকে শনিবার বৈঠক শেষেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। প্রদীপ জানিয়েছেন, পৌরসভার কিছু টেকনিক্যাল কাজ আছে। সেগুলি শেষ করে আজ সোমবার অথবা মঙ্গলবার ইস্তফা দেবেন।” একই কথা জানিয়েছেন দলের দুই সাংগঠনিক জেলার কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতি-ও। তিনি জানিয়েছেন, “প্রদীপকে দলের বৃহত্তর স্বার্থে কাজে লাগানো হবে। শীর্ষ নেতৃত্বের তেমনই নির্দেশ।”

thebengalpost.net
প্রদীপ নিভছে আজ অথবা কাল-ই :

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, খড়্গপুর পৌরসভার ২৫ জন দলীয় কাউন্সিলরের মধ্যে ২০ জনই প্রদীপ সরকারের বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহ’ঘোষণা করেছিলেন। চিঠি পাঠিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সহ শীর্ষ নেতৃত্বের কাছেও। প্রদীপ সরকারের সঙ্গে ছিলেন মাত্র ৪ জন কাউন্সিলর (পূজা নাইডু, তপন প্রধান, জয়শ্রী পাল, রাজু পান্ডে)। তাঁরাও অবশ্য প্রকাশ্যে কিছু জানাননি। অন্যদিকে, অভিজ্ঞ কাউন্সিলর কল্যাণী ঘোষ, অপূর্ব ঘোষ, চন্দন সিংহ সহ ভাইস চেয়ারম্যান তৈমুর আলি খান, প্রবীর ঘোষ, রীতা পান্ডে (রবিশঙ্কর পান্ডের স্ত্রী), নমিতা চৌধুরী (দেবাশীষ চৌধুরীর স্ত্রী) প্রমুখ ২০ জন সরাসরি প্রদীপের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এনে ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণা করেছিলেন। এই গোষ্ঠীর নেতৃত্বে থাকা প্রবীর ঘোষের বিরুদ্ধে তারপরই পৌরসভার এক চুক্তিভিত্তিক মহিলা কর্মী কু-প্রস্তাবের অভিযোগ করেছিলেন খড়্গপুর টাউন থানায়! প্রদীপ ঘনিষ্ঠ এক মহিলাকর্মী তাঁর বাড়ির সামনে বোমাবাজির অভিযোগ এনেছিলেন। তবে, তাতেও শেষরক্ষা হয়নি! বিদ্রোহ জারি রেখে প্রদীপের বিরুদ্ধে পাল্টা হুমকির অভিযোগ করেছিলেন বিদ্রোহী কাউন্সিলররা। এর মধ্যেই, দফায় দফায় নিজেদের মধ্যে এবং জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক চলতে থাকে দু’পক্ষের। শেষ পর্যন্ত, ২০ জন কাউন্সিলরের অনড় মনোভাবের কাছে মাথা নত করতে হয় দলের জেলা ও রাজ্য নেতৃত্বকে! তাঁদের একটাই দাবি ছিল, প্রদীপ সরকার চেয়ারম্যান থাকলে, তাঁদের পক্ষে পৌরসভার কাজ করা সম্ভব নয়।‌ এমনকি, গত সপ্তাহে ওই কাউন্সিলরদের মধ্যে অনেকেই পৌরসভায় যাননি! বিশ্বস্ত সূত্রে খবর, প্রদীপের বিরুদ্ধে বে-হিসেবি খরচ, অন্য কাউন্সিলরদের সঙ্গে আলোচনা না করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া, ভাইস চেয়ারম্যান ও সিআইসি’দের কাজও নিজের অধীনে রাখা, দুর্নীতি- প্রভৃতি একাধিক অভিযোগ এনেছিলেন তাঁরা। যদিও, এই সমস্ত কিছু অস্বীকার করে, চক্রান্তের অভিযোগ এনেছিলেন প্রদীপ সরকার। এদিকে, প্রদীপ-হীন পৌরসভায় ২-৩ দিনের মধ্যেই নতুন চেয়ারম্যানের নাম ঠিক করা হতে পারে বলে জানা গেছে। দৌড়ে আছেন অভিজ্ঞ কাউন্সিলর কল্যাণী ঘোষ, চন্দন সিংহ, অপূর্ব ঘোষ প্রমুখ। এবারই‌ প্রথম কাউন্সিলর (৯ নং ওয়ার্ডের) হওয়া, একদা ‘ঘনিষ্ঠ’ প্রবীর ঘোষকে কাউন্সিলর-দের মধ্যে অনেকেই চেয়ারম্যান হিসেবে চাইলেও, শীর্ষ নেতৃত্ব তাতে সিলমোহর নাও দিতে পারে বলে সূত্রের খবর! অভিজ্ঞতা না থাকায় রীতা পান্ডে, নমিতা চৌধুরী’দেরও চেয়ারম্যান করা হবেনা বলেই সূত্রের খবর। সেক্ষেত্রে কল্যাণী ঘোষ কিংবা চন্দন সিংহ বা অপূর্ব ঘোষের মধ্যে একজনের কপালেই শেষ পর্যন্ত শিকে ছিঁড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

thebengalpost.net
কল্যাণী ঘোষ: