দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, খড়্গপুর, ২ জুন: শুধু শতাব্দীর সবথেকে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা কিংবা মা-কে হারানোর এক বছরই পূর্ণ হয়নি। রাজ্য সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিশ্রুতিও পূর্ণ করলো এক বছর! ‘রেল শহর’ খড়্গপুরের নায়েক পরিবার-কে শোকের সাথে সাথে আজ তাই গ্রাস করেছে হতাশার অন্ধকারও। প্রসঙ্গত, চিকিৎসার জন্য মা-কে নিয়ে কটকে গিয়েছিলেন খড়্গপুর শহরের ২২নং ওয়ার্ডের আম্বেদকর কলোনীর বাসিন্দা, বছর ৫৫-র হীরা নায়েক। ১ জুন (২০২৩) রাতে ফেরার কথা ছিল হাওড়া মেলে, কিন্তু মা যশোদা দাস-কে নিয়ে উঠেছিলেন হাওড়া-যশবন্তপুর হামসফর এক্সপ্রেসে। সাধারণ কামরায় জায়গা না পেয়ে গার্ডকে বলে উঠে পড়েছিলেন গার্ডের কামরায়। ২ জুন সন্ধ্যা নাগাদ হঠাৎ একটা ঝাঁকুনি! তারপরই হাহাকার, আর্তনাদ। ভয়াবহ সেই ট্রেন দুর্ঘটনা।
জ্ঞান ফিরে আসার পর মাথার আঘাতে রক্তস্নাত সত্তোরোর্ধ্ব যশোদা দেবী হঠাৎ মেয়ের আওয়াজ শুনতে পান। গার্ডের রুমে থাকা ভারী আলমারীর নীচে হীরা চাপা পড়ে আছেন! বাঁচার জন্য আর্তনাদ করছেন। কিছুক্ষণ পর হীরার আওয়াজ বন্ধ! বালেশ্বরের সরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয় যশোদা দেবীকে। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে এসেছেন। কিন্তু, ফেরেনি মেয়ে! এখনও আফসোস, মেয়েটাকে কেউ যদি বের করে আনত! কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের তরফে মৃত ও আহতদের জন্য বরাদ্দ ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছেন। দেখতে দেখে পেরিয়ে গেছে একটা বছরও। তবে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চাকরির-প্রতিশ্রুতি’ পূর্ণ হয়নি! হীরা নায়েকের ছোট মেয়ে ভবানী নায়েকের ওই চাকরি পাওয়ার কথা ছিল। গত ১ বছর ধরে খড়গপুরের মহকুমাশাসকের কার্যালয় থেকে খোদ নবান্নে দৌড়োদৌড়ি করেও ব্যর্থ-মনোরথ হয়ে ফিরে এসেছে বছর ২০-র ভবানী!
প্রথম থেকে ওই পরিবারের পাশে ছিলেন আমরা বামপন্থী, খড়্গপুরের অনিল দাস সহ সংগঠনের সদস্যরা। রবিবার (২ জুন)-ও ভবানী সহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন তাঁরা। অনিল দাসের আক্ষেপ, “অসহায় দরিদ্র পরিবার। হীরা নায়েকের দুই মেয়ের মধ্যে ছোট মেয়ে ভবানীর চাকরিটা পাওয়ার কথা ছিল। মহকুমাশাসকের অফিস থেকে ডকুমেন্টসও নিয়ে গেছে গত বছর জুন মাসে। তবে, ১ বছর ধরে মেয়েটি হোমগার্ডের চাকরির জন্য ছোটাছুটি করলেও, এখনো পর্যন্ত সরকার তার মানবিক মুখ দেখাতে পারলোনা!” ভোট প্রক্রিয়া মিটে গেলেই এজন্য তাঁরা আন্দোলন করবেন বলেও জানান। আর, ভবানী জানান, “১ জুন রাতে দিদাকে নিয়ে মা হামসফর এক্সপ্রেসে উঠছিলেন। তারপর অনেকবারই কথা হয়েছে। ২ জুন সন্ধ্যায় আমরা কিছুই জানতে পারিনি। অনেক রাতে আমাদের যে মাসি বালেশ্বরে থাকেন, তিনিই খবরটা দিয়েছিলেন। এরপরই বাবা রওনা হয়ে যান। ৩ জুন বিকেলের দিকে একটি হাসপাতালে মা-র মৃতদেহ সনাক্ত করেন বাবা!” ভবানী জানায়, “ক্ষতিপূরণ তুলে দেওয়া হয়েছিল রেলের তরফে। রাজ্যের তরফেও ক্ষতিপূরণ পেয়েছি। কিন্তু, এক বছর ধরে খড়্গপুর-কলকাতা দৌড়াদৌড়ি করেও আমার চাকরিটা হলোনা! ভোটের আগে (১৯ মে) মুখ্যমন্ত্রী আমাদের বাড়ির পাশ দিয়েই মিছিল করলেন। চেষ্টা করেছিলাম দেখা করার জন্য। পুলিশ কাছে যেতে দেয়নি।” ওড়িশা সরকার কথা রেখেছে। স্থানীয়দের দাবি মেনে, ‘অস্থায়ী মর্গ’ হয়ে ওঠা বাহানাগা বাজারের সেই স্কুল ভবন ভেঙে মডেল স্কুলের রূপ দেওয়া হয়েছে। এই ভোটে মডেল বুথও হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গ সরকার কি কথা রাখতে পারলোনা? তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, “আমি এটা জানতাম না। ৪ জুনের পর আমরা ওই পরিবারের সঙ্গে কথা বলব। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।”