দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৯ জুলাই: বন্দুকে এখনও বারুদের গন্ধ! স্কুটিতে লেগে প্রসাদের শরীর থেকে ছিটকে আসা রক্ত! জাল গোটাচ্ছে খড়্গপুর টাউন থানা তথা জেলা পুলিশ। বড়সড় সাফল্য মিলতে চলছে খড়্গপুরের তৃণমূল কর্মী তথা পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার ঘনিষ্ঠ ভেঙ্কট রাও ওরফে প্রসাদ খুনের তদন্তে। বৃহস্পতিবার ওই ঘাতক বন্দুক আর দুষ্কৃতীদের বাহন স্কুটি-টিকে আটক করেছে খড়্গপুর টাউন থানা। পুলিশ হেফাজতে থাকা ঈশ্বর রাও এবং জে. কৃষ্ণা রাও- নামে দুই রেলকর্মী-কে জিজ্ঞাসাবাদ করে, যথাক্রমে- সেভেন এম.এম (7 mm) পিস্তল আর ২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার হয়েছে ঈশ্বরের বাড়ি থেকে আর স্কুটি উদ্ধার হয়েছে কৃষ্ণার বাড়ি থেকে। দু’দিন আগেও যে ঈশ্বর আর কৃষ্ণা-কে ‘নিরপরাধী’ বলে ভাবছিলেন প্রসাদের পরিবার থেকে শুরু করে আপামর খড়্গপুরবাসী, সেই ঈশ্বর আর কৃষ্ণার হাতেই লেগে প্রসাদ খুনের রক্ত! রহস্য উদ্ধার করে, শুক্রবার তাদের জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। তবে, ‘খুন’ এই দুই রেল কর্মী করলেও, ‘মাস্টার মাইন্ড’ যে তারা দু’জন নয়, তাও একপ্রকার নিশ্চিত খড়্গপুর টাউন থানা! তাহলে কে এই ‘মাস্টার মাইন্ড’ তথা প্রসাদ খুনের মূল ষড়যন্ত্রী? আপাতত পুলিশের ধারণা, গ্রেফতার হওয়া তৃতীয় ব্যক্তি শুভম সোনার ওরফে বিক্রম-ই হতে পারে সেই ‘মাস্টার মাইন্ড’! অথবা, আরও বড় কোনো ‘মাথা’। তাই, জেল হেফাজত থেকে শুক্রবার তাকে ৭ দিনের পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে খড়্গপুর টাউন থানা। সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা, এই ৭-দিন টাউন থানা তথা জেলা পুলিশের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, প্রসাদ খুনের রহস্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে।
উল্লেখ্য যে, ধৃত শুভম সোনার ওরফে বিক্রম ২০২১-এর ১ জানুয়ারি খড়্গপুরের মথুরাকাটি এলাকায় ৯ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা অর্জুন সোনকার (ওরফে ভোলু) নামে বছর ৩০-এর যুবক খুনের ঘটনায় গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘদিন জেলে ছিল। ২০২২-এর জানুয়ারি মাস নাগাদ জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর, তৃণমূলে যোগদান করে বলে পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারের হাত ধরে। একসময়, বিজেপি করলেও, সম্প্রতি রেল শহরের (২০ নং ওয়ার্ডের) একজন সক্রিয় তৃণমূল সমর্থক বা কর্মী বলে পরিচিত হয়েছিল শুভম ওরফে বিক্রম। যুব তৃণমূলের একটি দায়িত্ব বা পদেও ছিল বলে জানা গেছে। অন্যদিকে, ভেঙ্কট রাও ওরফে প্রসাদ আগে থেকেই পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারের ঘনিষ্ঠ ছিল। প্রসাদ-ও ২০ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। ওল্ড সেটেলমেন্টে প্রদীপ সরকারের দলীয় কার্যালয় থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে প্রসাদের বাড়ি। ২৭ জুন রাত্রি ১০ টা নাগাদ, নিজের বাড়ির কাছেই মাতা মন্দিরের সামনে তাঁকে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়। স্কুটিতে চেপে তিন দুষ্কৃতী এসে একেবারে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে বা সামনে থেকে তাঁকে গুলি করে পালিয়ে যায়। ৭২ ঘন্টার মধ্যে যে তিনজন গ্রেফতার হয়, তাদের মধ্যে ঈশ্বর রাও এবং জে কৃষ্ণা রাও পেশায় রেলকর্মী। মনে করা হচ্ছে, যাতে পুলিশের সন্দেহ না হয়, তাই পেশায় এই দুই রেলকর্মীকে ‘মোটা টাকার লোভ’ দেখিয়ে ব্যবহার করেছে কোনো ‘মাস্টার মাইন্ড’। আর, শুভম ওরফে বিক্রম-ই সেই মাস্টার মাইন্ড হতে পারে বলে প্রাথমিক ধারণা সংশ্লিষ্ট সকলের। কারণ? কারণ সেই একটাই। টাকা-পয়সা-ক্ষমতা-প্রতিপত্তি। আর, ঘুর পথে এসব করতে গেলে, শাসক-ঘনিষ্ঠ হতে হবে! এই ধারণা থেকেই হয়তো, প্রসাদকে সরিয়ে শুভম হয়ে উঠতে চেয়েছিল খড়্গপুরের শাসক-ঘনিষ্ঠ! ইদানীং, ভেঙ্কট রাও ওরফে প্রসাদ নিজের একাধিক ব্যবসায় বেশ পসার করেছিল! বিদেশ সফর তথা ব্যাংককের মত অভিজাত জায়গা থেকেও ঘুরে এসেছিল। আর, এটাই হয়তো কাল হলো! প্রসাদকে সরিয়ে, শাসকের পরোক্ষ মদতে খড়্গপুরের ‘বেতাজ বাদশা’ হতে চেয়েছিল হয়তো শুভম ওরফে বিক্রম। ইতিমধ্যে, আরও এক উঠতি ‘প্রোমোটার’ বছর ৩০-এর অর্জুন সোনকার খুনের আসামী শুভম তাই ফের একবার বছর ৪২-এর প্রসাদকে সরিয়ে শাসকদল ঘনিষ্ঠ ‘মাফিয়া’ হয়ে উঠতে চেয়েছিল বলেই ধারণা। যেভাবে, শ্রীনু-হীন সাম্রাজ্যের দখল আসতে আসতে প্রসাদের হাতে চলে যাচ্ছিল, ঠিক সেভাবেই প্রসাদ-হীন প্রতিপত্তি কায়েম করতে চাইছিল শুভম! অথবা, শুভম-কে কাজে লাগিয়েছেন আরও বড় কোনো ‘মাথা’, এই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছেনা! সূত্রের খবর অনুযায়ী, এই পথেই তদন্তের জাল গোটাচ্ছে পুলিশ। আর তাই, জেল হেফাজত থেকে শুভম-কে ৭ দিনের পুলিশ হেফাজতে (রিমান্ডে) নিয়েছে পুলিশ।