দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, নেতাই ও খড়্গপুর, ৮ জানুয়ারি: দুই ক্যাবিনেট মন্ত্রী সহ চার-চারজন মন্ত্রীকে পাঠিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একগুচ্ছ বিধায়ক সহ ছিলেন ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুরের পুরো জেলা নেতৃত্বই। তাতেও খুশি হলোনা নেতাই! ভরলোনা মাঠ। জমলোনা শহীদ তর্পণ অনুষ্ঠানও। চাকরি পাওয়া শহীদ পরিবার থেকে চাকরি না পাওয়া আহতদের পরিবার- সবাই খুঁজলেন শুভেন্দু’কে। হ্যাঁ, প্রথম থেকে তাঁদের পাশে থাকা শুভেন্দু অধিকারী’কে। তৃণমূলের তরফে অবশ্য চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিলোনা। দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল বন প্রতিমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদাকে। সুদূর কলকাতা থেকে উড়ে এসেছিলেন পরিবহন মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী। ছিলেন ঝাড়গ্রাম জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত ক্যাবিনেট মন্ত্রী ডাঃ মানস রঞ্জন ভুঁইয়া থেকে শুরু করে তাঁর দপ্তরেরই (ক্রেতা সুরক্ষা ও উপভোক্তা দপ্তরের) প্রতিমন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাত। এছাড়াও, ছিলেন ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুরের একাধিক বিধায়ক, জেলা নেতৃবৃন্দ। শীতবস্ত্র তুলে দেওয়া হল পরিবারগুলির হাতে। তবে, আসেননি চাকরি বা কোনোরকম সুযোগ-সুবিধা না পাওয়া আহতদের পরিবারের সদস্যরা। ক্ষোভ উগরে দিয়ে অসীম রায়, বন্দনা মণ্ডল’রা শনিবার দুপুরে ক্যামেরার সামনে বলছিলেন, “যতদিন শুভেন্দু অধিকারী নেতাইয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সবার চাকরি হয়েছে, নেতাইয়ের উন্নতি হয়েছে। তারপর আর কিছু হয়নি। ৯ জন শহীদ হওয়ার সাথে সাথেই ২৮ জন আহত হয়েছিলেন। তারমধ্যে, আমরা ১৯টি পরিবারের সদস্যরা চাকরি থেকে শুরু করে কোনোরকম সুবিধা পাইনি। আমরা চাই, আমাদের কথা মুখ্যমন্ত্রীর কান পর্যন্ত পৌঁছে যাক। তাতে যদি উনি মুখ তুলে তাকান!”
শুধু অসীম, বন্দনা’রা নয়, ‘চাকরি’ পাওয়া শহীদ পরিবারের সদস্য-সদস্যারাও বলছিলেন, “শুভেন্দু বাবু’র প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা কোনোদিন কমবেনা। এখন হয়তো উনি অন্য দলে গেছেন। ওনার যেটা ভালো মনে হয়েছে, করেছেন। কিন্তু, ওনার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা কোনোদিন কমবেনা। প্রথম থেকে উনি আমাদের পাশে ছিলেন। উনি এলে ভালো লাগতো!” শনিবার (৭ জানুয়ারি) নেতাই যাননি শুভেন্দু অধিকারী। সমাজমাধ্যমেই নেতাইয়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন! তাঁর ঘনিষ্ঠ বিজেপি নেতা তথা মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা বিজেপি’র সহ-সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরি শনিবার বিকেলে জানিয়েছিলেন, “শুভেন্দু বাবু আসবেন না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন। শুনলাম তৃণমূলের একগুচ্ছ নেতা-মন্ত্রীরা গিয়েছিলেন। তাতেও নাকি মাঠ ভরেনি। এমনকি শহীদ পরিবার ও আহত পরিবারের সদস্যরাই আসেননি! নেতাইবাসী যে শুভেন্দু অধিকারীর অভাব অনুভব করেছেন, তা সংবাদমাধ্যমে দেখলাম। এটাতো হওয়ারই ছিল!”
এদিকে, আজ, রবিবার দুপুরে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর শহরের ইন্দা এলাকায় হিন্দু যুব সংগঠনের পক্ষ থেকে তাদের চতুর্থ বর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত স্বাস্থ্য মেলায় উপস্থিত হয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন খড়্গপুর সদরের বিধায়ক হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায় (হিরণ)-ও। অনুষ্ঠান শেষে দু’জনে একসঙ্গে ক্যামেরার মুখোমুখিও হলেন। দুর্নীতি প্রসঙ্গে তৃণমূল তথা তাঁদের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে (নাম না করে) ফের একবার কটাক্ষ করলেন শুভেন্দু। বললেন, “আমি আগেও বলেছি ওটা একটা প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি, আপাদমস্তক দুর্নীতিতে ডুবে।” তাঁর সংযোজন, “নোটবন্দীর সময়ে প্রায় হাজার জন পেট্রোল পাম্পের মালিকের ৫০০-১০০০ টাকার নোট বদল করে অবৈধভাবে আয় করেছিলেন ভাইপো। কাদেরকে এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন সেই তালিকাও দিয়ে দেব।” অন্যদিকে, হিরণকে নিয়ে উপস্থিত হয়ে, খড়্গপুর পৌরসভার ‘চেয়ারম্যান’ বিতর্কেও জল ঢেলে দিলেন এদিন। যদিও, তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা শুক্রবারই একটি সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছিলেন, “চেয়ারম্যান হবেন তৃণমূলের জয়ী কাউন্সিলরদের (জয়ী কাউন্সিলর ২০ জন, অন্য দল থেকে এসেছেন আরও ৫ জন) মধ্যেই কোনো একজন। আপানারা নিশ্চিন্ত থাকুন।” তবে, হিরণের তৃণমূলে ফেরা নিয়ে ‘জল্পনা’ ছড়াচ্ছিল কয়েকদিন ধরেই। এমনকি হিরণের সঙ্গে নাকি তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে যোগাযোগও করা হয়েছিল বলে বিভিন্ন সূত্রের খবর। শুক্রবার তাঁকে দলে ‘স্বাগত’ জানিয়ে মেদিনীপুর থেকে বিধায়ক জুন মালিয়া জানিয়েছিলেন, “হিরণের আসবে কিনা আমার জানা নেই! দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এই বিষয়ে ঠিক করবেন। তবে, একদা সহকর্মী হিরণ তৃণমূলে এলে ভালোই লাগবে।” এই বিষয়ে রবিবার হিরণ কিছু না বললেও, বিজেপির জেলা মুখপাত্র অরূপ দাস জানিয়েছেন, “প্রথমত তৃণমূলের লজ্জা লাগা উচিত, তাদের দলের ২০ জন কাউন্সিলরের মধ্যে তাঁরা নিজেরাই কাউকে যোগ্য মনে করছেন না! তাই, হিরণকে হয়তো ওনারা চাইছেন। তবে, আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত যে দল (তৃণমূল) ছেড়ে হিরণ বিজেপিতে এসেছেন; সেই দলে যে উনি আর ফিরবেন না, তা উনি বারবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন।”