দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, খড়্গপুর, ১৩ ডিসেম্বর: এক বছরও হলোনা, তার আগেই টালমাটাল অবস্থায় প্রদীপের নেতৃত্বাধীন খড়্গপুর পৌরসভা! দলের ২৫ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ১৮ থেকে ১৯ জনই নাকি চেয়ারম্যান প্রদীপ সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। ইতিমধ্যে, তাঁরা প্রদীপের বিরুদ্ধে চিঠিও পাঠিয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। সূত্রের খবর তেমনটাই। এমনকি, সোমবার সন্ধ্যায় নিজেদের মধ্যে নাকি গোপন বৈঠকও সেরে নিয়েছেন ‘বিদ্রোহী’ কাউন্সিলররা! সূত্রের খবর অনুযায়ী, সেই বৈঠক থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, কোনোভাবেই আর প্রদীপকে চেয়ারম্যান হিসেবে মেনে নেওয়া হবেনা! আগামীকাল অর্থাৎ বুধবার-ই অনাস্থা ঘোষণার জল্পনাও শোনা যাচ্ছে। অন্যদিকে, ‘বিদ্রোহ’ ঠেকাতে তৎপর তৃণমূল জেলা নেতৃত্ব!

উল্লেখ্য যে, চলতি বছরের (২০২২) মার্চ মাসে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে প্রদীপ সরকারকেই পুনরায় খড়্গপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল। ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়েছিল তৈমুর আলি খানকে। পরবর্তী সময়ে বেছে নেওয়া হয় ৫ জন সিআইসি (চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল)-কেও। অন্যদিকে, নির্বাচনে ২০ জন কাউন্সিলর তৃণমূলের প্রতীকে জয়লাভ করলেও; পরে বিজেপি, সিপিআই, কংগ্রেস থেকে ৪ জন এবং নির্দল হিসেবে জয়ী ফিদা হুসেন সহ ৫ জন তৃণমূলে যোগদান করায় কাউন্সিলর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৫। ভেতরে ভেতরে প্রদীপের বিরুদ্ধে কয়েকজন কাউন্সিলরের ক্ষোভ থাকলেও, মোটামুটিভাবে ২৫ জন দলীয় কাউন্সিলর (প্রদীপ সহ) এবং বেশিরভাগ বিরোধী কাউন্সিলরদের আস্থা অর্জন করেই এগোচ্ছিলেন প্রদীপ। তবে, মাত্র ৯ মাস যেতে না যেতেই ‘ছাই চাপা আগুন’ যেন বিস্ফারিত হয়ে উঠলো প্রদীপের বিরুদ্ধে!

সূত্রের খবর অনুযায়ী, ভাইস চেয়ারম্যান তৈমুর আলি খান, ৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রবীর ঘোষ, ১২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিষ্ণু প্রসাদ থেকে শুরু করে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ কাউন্সিলর কল্যাণী ঘোষ, অপূর্ব ঘোষ সহ ১৮-১৯ জন কাউন্সিলর ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণা করেছেন প্রদীপের বিরুদ্ধে। যদিও, এই বিষয়ে ক্যামেরার সামনে বা টেলিফোনে তাঁরা কিছুই বলতে রাজি নন। তবে, আকারে ইঙ্গিতে যে বোঝানোর চেষ্টা করছেন তা বলাই বাহুল্য! নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল কাউন্সিলর জানিয়েছেন, “আসলে ওয়ার্ডের কাজ থমকে থাকায়, বাইরে বেরোতে পারছি না। যাঁদের ভোটে জিতেছি, তাঁদের সামনে মুখ দেখাতে পারছিনা লজ্জায়!” তাহলে কি ফান্ড আসছেনা? এ নিয়েই দ্বিমত পোষণ করছেন কাউন্সিলররা। প্রদীপ ঘনিষ্ঠ ২-১ জন বলছেন, “কেন্দ্র বিভিন্ন প্রকল্পের ফান্ড বন্ধ করে দেওয়ায়, রাজ্যও টাকা পাঠাচ্ছেনা।‌ ফলে বকেয়া কাজ পড়ে আছে। এতে চেয়ারম্যানের কিছুই করার নেই!” অন্যদিকে, শাসকদলের সংখ্যাগরিষ্ঠ কাউন্সিলরদের মত, “যে সমস্ত ফান্ড ইতিমধ্যে পাঠানো হয়েছে, সেগুলো কোথায় গেল? অন্যান্য পৌরসভাতে তো ভালোই কাজ চলছে, শুধু খড়্গপুর পৌরসভাতেই সমস্যা।” বিষয়টিকে চেয়ারম্যানের ‘ব্যর্থতা’ বলছেন তাঁরা। দুর্নীতির দিকেও আঙুল তুলছেন কেউ কেউ। অন্যদিকে, বিজেপির জেলা মুখপাত্র অরূপ দাস জানিয়েছেন, “কাজ করলে, সঠিক হিসেব দিলে তবেই কেন্দ্র টাকা পাঠাবে। কাজ না করে সব টাকা ভোগ করব, এই পন্থা অবলম্বন করলে এবার থেকে এই দশাই হবে। গৃহযুদ্ধেই শেষ হতে হবে তৃণমূলকে।” অপরদিকে, বাম-কংগ্রেসের আবার কিছুটা ভিন্ন মত। তাঁদের মতে, “তৃণমূল মানেই দুর্নীতি! এ নিয়ে দ্বিমত নেই। তবে, প্রদীপ সরকার সকলকে নিয়ে চলার চেষ্টা করেন এই যা। অন্য কেউ হলে, আরও খারাপ অবস্থা হবে!” এদিকে, এ নিয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা জানিয়েছেন, “ক্ষোভের বিষয়টি শুনেছি। আমরা দলীয়ভাবে এর সমাধানের চেষ্টা করব। দলীয় সিদ্ধান্তই শেষ কথা বলবে।”

thebengalpost.net
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রদীপ সরকার (ফাইল ছবি):