দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, খড়্গপুর, ১৯ জুলাই: “নির্বাচনের আগে যখন আসতেন, ফোন করতেন; এদিন যে সাংসদ (জুন মালিয়া) আসছেন মিছিল করতে, খবরই দেওয়া হয়নি!” মেদিনীপুর লোকসভার নব-নির্বাচিত সাংসদ জুন মালিয়া-র প্রতিই এমনই ‘অনুযোগ’ খড়গপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান কল্যাণী ঘোষের। কল্যাণী খড়গপুর শহর মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রীও। তাঁর ক্ষোভ বা অনুযোগ মূলত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আয়োজিত খড়গপুর শহরের মিছিল-কে কেন্দ্র করেই! প্রসঙ্গত, একুশে জুলাইয়ের সমর্থনে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় খড়গপুর শহরে তৃণমূলের একটি মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। শহর তৃণমূল কংগ্রেসের ব্যানারেই এই মিছিল আয়োজিত হয়। মিছিলে নেতৃত্ব দেন দলের নব-নির্বাচিত সাংসদ জুন মালিয়া। ছিলেন প্রাক্তন বিধায়ক প্রদীপ সরকার, সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী (মুনমুন), বর্ষীয়ান নেতা জহর পাল, রাজ্য যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সন্দীপ সিংহ প্রমুখ। কিন্তু, মিছিলের কোনও খবরই নাকি দেওয়া হয়নি দলের শহর মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী তথা পৌরপ্রধান কল্যাণী ঘোষ, উপ-পৌরপ্রধান তৈমুর আলি খান, হিন্দি সেলের নেতা রবিশঙ্কর পান্ডে সহ শহরের একাধিক কাউন্সিলরকে। যা নিয়ে বৃহস্পতিবার মিছিলের পরই ক্ষোভ উগরে দেন পৌরপ্রধান তথা শহর মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী কল্যাণী ঘোষ। মিছিলের আয়োজকদের কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন দলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা-ও!
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার বিকেলে খড়্গপুর শহরে সাংসদ জুন মালিয়া-র নেতৃত্বে একুশে জুলাইয়ের সমর্থনে একটি মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। সেই মিছিলেই দলের বেশ কিছু কাউন্সিলরকে দেখা গেলেও অনুপস্থিত ছিলেন পৌরসভার চেয়ারম্যান তথা শহর মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী কল্যাণী ঘোষ, ভাইস-চেয়ারম্যান তৈমুর আলি সহ একাধিক কাউন্সিলর। ছিলেন না জেলা কমিটির সদস্য তথা হিন্দি সেলের নেতা রবিশঙ্কর পাণ্ডে কিংবা INTTUC-র জেলা সভাপতি তথা খড়্গপুরের শ্রমিক নেতা গোপাল খাটুয়া সহ অনেকেই। এ নিয়েই লোকসভা নির্বাচনের পর ফের একবার তৃণমূল কংগ্রেসের গোষ্ঠী-কোন্দল প্রকাশ্যে চলে এলো বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। যে খড়গপুর শহরে বিজেপি-র বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করে, ২০১৯ সালের ৪৫ হাজার লিড কমিয়ে ২১ হাজার করেছিলেন শহর ও জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। সেই খড়গপুর শহরেই লোকসভা নির্বাচনের ঠিক পরেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে এলো? এ নিয়ে কল্যাণী ঘোষ বলেন, “গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কিনা, আমি সেসব জানিনা, তবে খড়গপুর যে ঠিকঠাক চলছে; এটা হয়তো অনেকের পছন্দ হচ্ছে না! চাইছেন, আবার আগের মত চলুক।” রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহলের খবর অনুযায়ী, এই মুহূর্তে জেলা শহর মেদিনীপুরের মতোই খড়গপুর শহরেও নাকি জুন-সুজয় দুই গোষ্ঠীর ‘বিবাদ’ চরমে! একদিকে নব-নির্বাচিত সাংসদ জুন মালিয়া-র নেতৃত্বে প্রদীপ সরকার, দেবাশিস চৌধুরী, জহর পাল, অসিত পাল, সোনু সিং-রা; অন্যদিকে জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা-র অনুগামী হিসবে কল্যাণী ঘোষ, রবিশঙ্কর পান্ডে, তৈমুর আলি, দেবাশিস সেনগুপ্ত, ফিদা হোসেন, গোপাল খাটুয়া, আয়ুব আলি, চঞ্চল দত্তরা।
গোষ্ঠী-রাজনীতির প্রসঙ্গ এড়ালেও, বৃহস্পতিবারের মিছিল প্রসঙ্গে জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা জানান, “লোকসভা ভোটের আগে যারা বিক্রি হয়ে গিয়েছিল; তারাই এখন অতি-সক্রিয় হয়ে উঠেছে! এখন আবার ‘তৃণমূল’ সাজতে হচ্ছে। ওদের বিরুদ্ধে সমস্ত নথি আমাদের কাছে আছে। গোপনে কারা গিয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের গদ্দরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, দলের কাছে সব খবরই আছে!” সুজয়ের সংযোজন, “যারা দিনরাত পরিশ্রম করে, খড়্গপুর শহরে ব্যবধান (৪৫ হাজার থেকে কমে ২১ হাজার) কমিয়ে, দলীয় প্রার্থীর জয়ে বড় অবদান রাখলেন; তাদেরকেই এদিনের মিছিলের খবর দেওয়া হয়নি বলে শুনছি। আসলে এই মুহূর্তে খড়গপুরের শহর সভাপতি নেই, ২১ জুলাইয়ের পরই নির্বাচন করা হবে। আশা করছি, তারপর আর এই ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে না।” এই বিষয়ে সাংসদ জুন মালিয়া-র কোনও প্রতিক্রিয়া না পাওয়া গেলেও, রাজ্য যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক তথা লোকসভা নির্বাচনে জুনের ইলেকশন এজেন্ট হিসেবে কাজ করা সন্দীপ সিংহ বলেন, “শহর তৃণমূল কংগ্রেসের ব্যানারে মিছিল হয়েছে। যেহেতু শহর সভাপতি নেই, তাই শহর সহ-সভাপতি এবং জেলা সহ-সভাপতিরাই উদ্যোগ নিয়েছিলেন। আর কাউকেই আলাদা করে মিছিলের কথা জানানো হয়নি, আমাকেও কেউ ফোন করেনি। বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ এবং ফেসবুক গ্রুপে জানানো হয়েছিল, তা দেখেই আমিও পৌঁছেছিলাম। মিছিলে সংখ্যাগরিষ্ঠ কাউন্সিলর এবং বর্ষীয়ান নেতৃত্বরা হেঁটেছেন। এর বেশি কিছু বলতে পারবনা!” এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে জেলা বিজেপি-র মুখপাত্র অরূপ দাস বলেন, “এই দলটার সব কিছুর মূলেই থাকে টাকার বখরা বা কাটমানি! স্বাভাবিকভাবেই তৃণমূলের ‘নতুন’ সাংসদ যিনি হয়েছেন, তিনি এবার খড়গপুর শহরেও নিজের আধিপত্য বিস্তার করে নিজের আখের গোছাতে চাইছেন। আর তাঁকে ঘিরে এতদিন কোনঠাসা নেতারা জেগে উঠেছেন। অন্যদিকে আছে তৃণমূলের জেলা সভাপতির গোষ্ঠী। তাঁরাও জায়গা ছাড়তে নারাজ! কিছু বলার নেই, সাধারণ মানুষের কাছে শুধু এইটুকুই প্রশ্ন করতে চাই, আপনারা কি এইসবের জন্যই অগ্নিমিত্রা দিদিভাইয়ের মতো একজন স্বচ্ছ, প্রতিবাদী ভাবমূর্তির নেত্রীকে ভোট না দিয়ে; তৃণমূল প্রার্থীকে জিতিয়েছিলেন!”