দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৫ ডিসেম্বর: তৃতীয়বারের চেষ্টায় এলো সাফল্য! সম্প্রতি প্রকাশিত ইউপিএসসি (UPSC) পরীক্ষার ফলাফল আনুযায়ী, ইন্ডিয়ান ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসে ১৪ র্যাঙ্ক করেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়গপুরের নিমপুরা আর্য বিদ্যাপীঠের প্রাক্তন ছাত্রী তথা আইআইটি খড়্গপুরের (IIT Kharagpur) প্রাক্তনী অরুনিমা ভাওয়াল। শুধু তাই নয়, ডিআরডিও (Defence Research and Development Organisation/DRDO)-র সায়েন্টিস্ট (Scientist) নিয়োগ পরীক্ষাতেও পাশ করেছে সে। উল্লেখ্য যে, অরুনিমার বাড়ি হুগলির শ্রীরামপুরে হলেও, বাবার কাজের সুবাদে ছোট থেকেই সে মানুষ হয়েছে ‘রেলশহর’ খড়্গপুরে। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছে খড়্গপুর শহরের নিমপুরা আর্য বিদ্যাপীঠ থেকে। বাবাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়েই ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রতি ঝোঁক বাড়ে অরুনিমার। লক্ষ্য ছিল ইউপিএসসি (UPSC)।
সেই লক্ষ্যে নিজে নিজেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করে বছর ২৪-এর অরুনিমা। কখনও অনলাইন, কখনও বই, আবার কখনও নিজের প্রচেষ্টায় অবশেষে সফল এই মেধাবী ছাত্রী। প্রসঙ্গত, বাবা মানস কুমার ভাওয়াল এবং মা সুমিতা ভাওয়ালের একমাত্র মেয়ে অরুনিমা। মানস বাবু দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ের খড়্গপুর ডিভিশনে সিনিয়র সেকশন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাই, বাবার কাজের সুবাদেই অরুনিমা বড় হয়েছে রেলশহর খড়্গপুরে। নিমপুরা আর্য বিদ্যাপীঠ থেকে যথাক্রমে ২০১৪ সালে মাধ্যমিক এবং ২০১৬ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে সে। বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানান, ছোট থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী ছিল অরুনিমা। নিমপুরা আর্য বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক চন্ডীচরণ ত্রিপাঠী জানান, মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকে রাজ্যস্তরেও র্যাঙ্ক করেছিল অরুনিমা। এরপর, শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে ইলেকট্রনিক্স এবং টেলিকমিউনিকেশনে বি.টেক পাস করে অরুনিমা। এম.টেক করেছে আইআইটি খড়্গপুর (IIT Kharagpur) থেকে। তবে, প্রথম থেকেই তার লক্ষ্য ছিল ইউপিএসসি। প্রতিদিন একটু একটু করে প্রস্তুতি নিয়েছে সে। তবে, প্রথম দু’বার পরীক্ষা দিয়েও সাফল্য আসেনি। তৃতীয়বারের চেষ্টায় সফল হয়েছে অরুনিমা।
UPSC-তে প্রথম দু’বার সাফল্য না এলেও হাল ছাড়েনি অরুনিমা। সে বলে, বাবা-মা ঘুমিয়ে গেলে, রাত জেগে চলত ইউপিএসসি-র প্রস্তুতি। এছাড়াও, বিভিন্ন পরীক্ষায় বসেছে সে। সেখানেও মিলেছে সাফল্য। ডিআরডিও (DRDO)-র সায়েন্টিস্ট নিয়োগের পরীক্ষাতেও সফল হয়েছে সে। শুধু পড়াশোনা নয়, লেখালেখি এবং বাচিক শিল্পের সঙ্গেও যুক্ত অরুনিমা। অরুনিমা জানায়, “ছোট থেকেই বাবাকে দেখে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখি। সেইমতো আবৃত্তি, লেখালেখির পাশাপাশি পড়াশোনা করতাম। প্রথম দু’বার সাফল্য না এলেও, হাল ছেড়ে দিইনি। বাবা-মা’র সহযোগিতায় এবং নিজের চেষ্টায় অবশেষে কাঙ্খিত সেই সাফল্য এসেছে।” এদিকে, একসঙ্গে দু’টি বড় সাফল্য আসায় একটু বিপাকেই পড়েছে অরুনিমা। মন স্থির করতে পারছেনা, কোন পথে সে যাবে! মেয়ের সাফল্যে খুশির হাওয়া পরিবারেও। অরুনিমার মা সুনিতা ভাওয়াল বলেন, “ছোট থেকেই মেয়েকে নিজের হাতে মানুষ করেছি। আমরা ঘুমিয়ে গেলেও, ও রাত জেগে প্রস্তুতি নিয়েছে। সেই কষ্টের সাফল্য এসেছে। আমাদের সকলকে গর্বিত করেছে ও।”