দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, খড়্গপুর, ২৬ এপ্রিল: “মমতা ব্যানার্জি ৫৪ দিন ধরে লুকিয়ে রেখেছিল শাহজাহানকে। সন্দেশখালি থেকে যে সমস্ত বিদেশি অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার হয়েছে, তা বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনেরা ব্যবহার করে! তাই, অবিলম্বে তৃণমূল কংগ্রেসকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার দাবি জানাচ্ছি। মমতা ব্যানার্জিকে গ্রেফতার করে, তৃণমূল কংগ্রেসকে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করার দাবি জানাচ্ছে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা!” শুক্রবার সন্ধ্যায় খড়্গপুর শহরে দলীয় প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পালের সমর্থনে একটি জনসভা করার পর, সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ঠিক এভাবেই সন্দেশখালি থেকে অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
উল্লেখ্য, বিজেপি-র রাজ্য সাধারণ সম্পাদিকা তথা মেদিনীপুর লোকসভার প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পালের সমর্থনে শুক্রবার বিকেল ৫টা নাগাদ খড়্গপুর শহরের ২৬ নং ওয়ার্ডের সংকটমোচন হনুমান মন্দিরের উল্টোদিকে রেলের একটি মাঠে জনসভা করেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সভা শুরু হতে হতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলেও, এদিন শুভেন্দু’র সভাস্থল ছিল কানায় কানায় পূর্ণ! আর, সেই সভাতেই নাম না করে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘বেনজির’ আক্রমণ করেন শুভেন্দু। গতকাল (২৫ এপ্রিলের) মহিষাদলের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন্দীগ্রাম আন্দোলনে শুভেন্দু-শিশিরের অবদান অস্বীকার করে বলেছিলেন, “নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় পিতা-পুত্র (শুভেন্দু অধিকারী ও শিশির অধিকারী?) রাস্তায় ছিলোনা!” এদিন, খড়্গপুরের মঞ্চ থেকে সেই বিষয়েই কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন শুভেন্দু! নন্দীগ্রাম থেকে নেতাই- মনে করিয়ে দিয়ে মন্তব্য করেছেন, “নেতাইয়ে গিয়ে কে লাশ কুড়িয়েছিল?” একসময় আক্রমণ করতে গিয়ে ‘পিসি-ভাইপো’ থেকে ‘মা-ব্যাটা’- শুভেন্দু সব গুলিয়ে ফেলেন বলেও একাংশ বিজেপি কর্মীর দাবি! একইসঙ্গে, ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে খড়্গপুর সদর বিধানসভা উপনির্বাচনে প্রদীপ সরকার-কে জেতানোর ‘ইতিহাস’-ও এদিন স্মরণ করিয়ে দেন শুভেন্দু। শুভেন্দু বলেন, “প্রদীপ সরকারকে জেতাতে পিসি বা ভাইপো এসেছিল? আমি জিতিয়েছিলাম প্রদীপ সরকারকে। খড়্গপুরের মানুষ প্রদীপ সরকারকে নয়, আমাকে ভোট দিয়েছিলেন। কারণ, মেদিনীপুরের মানুষ আমাকে বিশ্বাস করেন, ভরসা করেন!”
এরপরই, প্রদীপ সরকারকে জেতানোর জন্য বিজেপি-র নেতা-কর্মীদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন শুভেন্দু। বলেন, “প্রদীপ সরকারকে আমি জিতিয়েছিলাম। এজন্য, বিজেপির কাছে হাতজোড় করে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি!” সভার শেষ লগ্নে শুভেন্দু’র এই বক্তব্যের পরই তাঁর হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দেন, খড়্গপুর পৌরসভার ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর মুকেশ হুমনে, পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলের শর্মিষ্ঠা সিং, তৃণমূলের প্রাক্তন কাউন্সিলর ও কংগ্রেস নেতা জগদম্বা প্রসাদ গুপ্তা, পুলিশের এক প্রাক্তন ASI সহ বিভিন্ন দলের শতাধিক নেতাকর্মীরা। এ প্রসঙ্গে এও উল্লেখ্য যে, বিজেপি-র প্রতীকে পৌর নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর মুকেশ কার্যত প্রদীপ সরকারের হাত ধরেই তৃণমূলে গিয়েছিলেন। আর এদিন সেই প্রদীপ-কে জেতানোর জন্য ক্ষমা চয়ে নেওয়া শুভেন্দু’র হাত ধরে ফের তিনি বিজেপি-তে ফিরলেন। এই যোগদানকে অবশ্য তৃণমূলের তরফে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি!