দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩১ ডিসেম্বর: নেপথ্যে একটি ভাইরাল হওয়া তালিকা। খড়্গপুর পৌরসভার প্যাডে লিপিবদ্ধ ওই তালিকা নাকি পৌরসভা নির্ধারিত জঞ্জাল-সাফাই কর বা ক্লিনিং ট্যাক্সের! আর, তা ঘিরেই গত কয়েক দিন ধরে উত্তাল হয় খড়্গপুর শহর থেকে শুরু করে নেট দুনিয়াও। শুধু তাই নয়, ওই ‘তালিকা’-কে সামনে রেখেই ফের একবার প্রকাশ্যে চলে আসে পৌরসভার বর্তমান চেয়ারম্যান কল্যাণী ঘোষ এবং প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রদীপ সরকারের দ্বৈরথ বা মতানৈক্যও। শুক্রবার এই বিষয়ে পৌরপ্রধান কল্যাণী ঘোষের বক্তব্য ছিল, সরকারি নির্দেশ মেনেই জঞ্জাল কর ধার্য করতে চলেছে পৌরসভা। আর, এই সিদ্ধান্তের চরম বিরোধিতা করেন প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা বর্তমানে একটি ওয়ার্ডের (২০নং) কাউন্সিলর প্রদীপ সরকার (খোকন)। তাঁর মতে, “আমাদের মা মাটি মানুষের মুখ্যমন্ত্রী অনেক মানবিক। সরা দেশে জল কর নেওয়া হলেও, এখানে নেওয়া হয়না। আমরা পৌরসভার পক্ষ থেকে একটা ট্যাক্স তো নিই। নতুন করে ট্যাক্স নেওয়ার মানে হয়না। একটা চা দোকানি, পান দোকানি কোথা থেকে এই টাকা পাবেন! বড় হোটেল, রেস্টুরেন্ট হলে আলাদা বিষয়। আর আমি ব্যক্তিগতভাবে এটার বিরোধী। আর এটা এখনও পাসও হয়নি। আমরা কাউন্সিলররা এটা কখনোই মেনে নেবনা!”

thebengalpost.net
খড়্গপুর পৌরসভা:

প্রসঙ্গত, ২০ টাকা থেকে একবারে ১০০০ টাকা; নতুন বছরেই নাকি খড়্গপুরবাসীর জন্য এই জঞ্জাল-সাফাই কর ধার্য করতে চায় পৌরসভা। ভাইরাল তালিকা অনুযায়ী, বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়ীদের জন্য এই ট্যাক্স-কে ২৮ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। রাস্তার পাশের পান দোকান বা যে কোনো ছোটো দোকানের জন্য মাসিক ২০ টাকা দিতে হবে। আবার, হোটেল, রেস্টুরেন্টের জন্য মাসিক ২০০ টাকা জঞ্জাল-সাফাই কর ধার্য করা হয়েছে। ডমিনজের মতো কনফেকশনারির জন্য মাসিক কর হবে ৩০০ টাকা। যেকোনো লজ বা ভবন অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া দেওয়া হলে, সর্বোচ্চ ১০০০ টাকা অবধি জঞ্জাল-সাফাই কর নেওয়া হতে পারে। অন্যদিকে, বাড়িতে বাড়িতে প্রতিদিন ২ টাকা হিসেবে, মাসিক ৬০ টাকা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে! ঠিক এমনটাই জানা গেছে খড়্গপুর পৌরসভা সূত্রে। ইতিমধ্যে, বোর্ড মিটিংয়ে প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে শাসকদল বা ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর তরফে। তবে, ঠিক কবে থেকে চালু করা হবে, তা অবশ্য পরবর্তী বোর্ড মিটিংয়ে ঠিক করা হবে বলে জানিয়েছেন চেয়ারম্যান কল্যাণী ঘোষ। আর, এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পরই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খড়গপুর শহরের বাসিন্দারা। চা, পান দোকনিদের রীতিমত মাথায় হাত! খরিদা এলাকার এক গৃহবধূ তো বিস্ময় প্রকাশ করেছেন, “তাহলে কি পৌরসভা দেউলিয়া হয়ে গেল? আমরা তো বছরে ট্যাক্স দিই। আবার নোংরা ফেলার জন্য ট্যাক্স! এর পর তো বলবে রাস্তায় হাঁটার জন্যও ট্যাক্স দিতে হবে। আমরা দিতে পারবনা। রূখে দাঁড়াব!” বিরোধী দলের কাউন্সিলররাও এর বিরোধিতা করেছেন। তাঁদের মতে, “বড় হোটেল, রেস্টুরেন্ট, নার্সিংহোম-গুলির জন্য ঠিক আছে। কিন্তু, ছোটো দোকানদার ও বাড়িতে বাড়িতে এই কর বসানো উচিত হবেনা। আমরা পরবর্তী মিটিংয়ে এর প্রতিবাদ করব।” বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ বলেন, “এমনিতেই কোনো পরিষেবা দিতে পারেনা পৌরসভা। তার উপর ট্যাক্স বসাচ্ছে! চালাতে না পারলে, ছেড়ে দিন।”

আর এই বিতর্কের পরই নড়ে চড়ে বসে জেলা তৃণমূল কংগ্রেসও। জানা যায়, শুক্রবারই এই বিষয়ে জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা কথা বলেন পৌরসভার চেয়ারম্যান কল্যাণী ঘোষের সাথে। আপাতত, পৌরসভাও এই জঞ্জাল-সাফাই কর বা ক্লিনিং ট্যাক্স চালু করা নিয়ে পিছু হঠেছে বলেই জানা গেছে। শনিবার চেয়ারম্যান কল্যাণী ঘোষ বলেন, “রাজ্য থেকে একটা নির্দেশ এসেছিল। আমরা এটা নিয়ে বোর্ড মিটিংয়ে আলোচনা করেছি। তবে, কবে থেকে নেওয়া হবে তা আমরা ঠিক করিনি। ১ জানুয়ারি থেকে চালু হবে বলে যে গুজব রটেছে, তা একেবারেই ঠিক নয়। আমরা বোর্ড মিটিংয়ে সম্মিলিত ভাবে সিদ্ধান্ত নিই। কোনো কিছু একক সিদ্ধান্তে করা যায়না! কাজেই পরবরর্তী বোর্ড মিটিংয়ে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।” জানা যায়, ২ জানুয়ারি পরবর্তী বোর্ড মিটিং অনুষ্ঠিত হতে পারে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, “বর্তমানে রাজ্য সরকারের একটি প্রকল্পে বাড়ি বা দোকান থেকে আবর্জনা সংগ্রহ করা হয়। সেই বিষয়ে একটি নির্দেশিকা আছে বলে শুনেছি। তবে, জানুয়ারি থেকেই চালু হয়ে যাবে বলে একটা গুজব রটে গিয়েছিল। এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের নির্দেশ এবং পৌরসভার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত ছাড়া চালু করার প্রশ্নই ওঠেনা। একটি নির্বাচিত বোর্ড এমন কিছুই করবেনা, যা সাধারণ মানুষের উপর বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।” তবে, এ নিয়ে তৃণমূল পরিচালিত পৌর বোর্ডকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি জেলা বিজেপির মুখপাত্র অরূপ দাস। রবিবার তিনি বলেন, “ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই সরকার বা এদের পৌর বোর্ডগুলি দু’টি মাত্র কাজ করেছে। একটি হল তোলাবাজি আর অপরটি হল কেন্দ্রের পাঠানো বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা লুট! এও তো প্রকারন্তরে তোলাবাজি। এদের এখন আর কোনও উনায়ও নেই। গোটা সরকারটাই তো দেউলিয়া হয়ে গেছে! স্বাভাবিকভাবেই লুট করতে করতে খড়্গপুর পৌরসভার অবস্থাও তাই হয়েছে।”

thebengalpost.net
চেয়ারম্যান কল্যাণী ঘোষ: