দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, খড়্গপুর, ২১ ডিসেম্বর: প্রায় নিভে যাওয়া ‘প্রদীপ’ যেন শেষ মুহূর্তেও জ্বলে উঠতে চাইছিল! অবশেষে, পুরোপুরি নিভে গেল তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক ফোনে। উল্লেখ্য যে, দলের ‘ডেডলাইন’ মেনে বুধবার বিকেল ৪-টা নাগাদ মহকুমাশাসকের কার্যালয়ে পদত্যাগপত্র বা ইস্তফাপত্র জমা দিয়েছিলেন প্রদীপ। তার পরেও চূড়ান্ত নাটক দেখা গেল প্রদীপের ইস্তফা ঘিরে! মহকুমাশাসকের কার্যালয় থেকে বেরিয়ে প্রদীপ জানান, “আমার ইস্তফা গৃহীত হয়নি। কিছু আইনগত সমস্যা আছে বলে মহকুমাশাসক জানিয়েছেন!” এর পর ফের আসরে নামতে হয় জেলা নেতাদের। যোগাযোগ করা হয় জেলাশাসক ও মহকুমাশাসকের সঙ্গে। জেলা কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতি বিকেল ৫-টা নাগাদ জানান, “আমরা মহকুমাশাসকের সঙ্গে কথা বলেছি। ইস্তফা গৃহীত হবে। আগামীকাল থেকে চেয়ারম্যান হিসেবে প্রদীপ সরকার কোনো কাজ করতে পারবেন না!” প্রদীপ সরকারের পদত্যাগপত্র জমা পড়েছে বলে জানানো হয় প্রশাসনের তরফে। তবে, গৃহীত হওয়া বা না হওয়া নিয়ে সন্ধ্যা ৬-টা অবধি কিছু জানানো হয়নি। এর মধ্যেই, বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ প্রদীপকে পুনরায় ডেকে পাঠান মহকুমাশাসক। সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নাগাদ প্রদীপ সরকার মহকুমাশাসকের কার্যালয় থেকে বেরিয়ে জানান, “মহকুমাশাসক জানিয়েছেন আমার ইস্তফা বা পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়েছে। তবে, এই নিয়ে আমাকে তিনবার ডেকে পাঠানো হল!” সূত্রের খবর, এই সমস্ত ‘নাটক’ এর খবর পেয়ে স্বয়ং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ফোন করেন প্রদীপ সরকার-কে। তারপরই, মহকুমাশাসকের কার্যালয় থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে প্রদীপ সরকার জানান, তাঁর ইস্তফা গৃহীত হয়েছে। বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন দলের কয়েকজন প্রদীপ-বিরোধী কাউন্সিলর-ও। সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ নাগাদ জেলাশাসক আয়েশা রানী-ও সাংবাদিকদের জানান, ইস্তফা গৃহীত হয়েছে। এদিকে, এই পুরো বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলকে চরম কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিজেপি, সিপিআইএম, কংগ্রেস নেতৃত্ব! বিজেপি’র জেলা মুখপাত্র অরূপ দাস জানিয়েছেন, “এই প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি নিয়ে কি বলব বলুন তো! সংবিধান মানেনা, গণতন্ত্র মানে না, আইন-কানুন কিছুই মানেনা। শুধু যেভাবে হোক ভোগ করতে হবে, ক্ষমতায় থাকতে হবে, এটাই ওদের একমাত্র উদ্দেশ্য, বিধেয় সবকিছু!”
প্রসঙ্গত, তৎকালীন পুলিশ সুপার (বর্তমানে, বিজেপির রাজ্য সহ সভাপতি) ভারতী ঘোষের হাত ধরেই উত্থান হয়েছিল প্রদীপ সরকারের। দেবাশীষ চৌধুরী (মুনমুন), জহর পাল-দের মতো সিনিয়র নেতাদের টপকে হয়েছিলেন খড়্গপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান। বুধবার পড়ন্ত বিকেলে পদত্যাগপত্র জমা দিতে যাওয়ার আগে, সেই ‘পুলিশ’কেই ভিলেন বানিয়ে গেলেন প্রদীপ! উল্লেখ্য যে, দুই দফায় প্রায় ৬-৭ বছর পদ সামলেছেন। পৌরপ্রশাসক হিসেবেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পছন্দ ছিলেন প্রদীপ-ই। এবারও, একাধিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে পেছনে ফেলে মার্চ (২০২২) মাসে চেয়ারম্যানের মুকুট ছিনিয়ে নিয়েছিলেন সেই প্রদীপ সরকার-ই। তবে, সেটা যে ছিল ‘কাঁটার মুকুট’, তা বোধহয় সেই সময় প্রদীপ বুঝতে পারেননি! দীর্ঘ টালবাহানার পর বুধবার (২১ ডিসেম্বর) যখন নিজের সুবিশাল দলীয় কার্যালয় থেকে কয়েকশো কর্মী সমর্থকদের নিয়ে মহকুমা শাসকের কাছে পদত্যাগ পত্র জমা দিতে যাচ্ছিলেন, প্রদীপ ছলছল চোখে বললেন, “একাংশ পুলিশ আধিকারিক এবং দলীয় নেতাদের চক্রান্তেই পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হল!” কেঁদে ভাসালেন শয়ে শয়ে কর্মী সমর্থক। চোখে জল দেখা গেল স্ত্রী পাপিয়া সরকারের চোখেও! বিকেল ৪টা নাগাদ মহকুমা শাসকের কার্যালয়ে পদত্যাগ পত্র জমা দিলেন প্রদীপ সরকার। তবে, প্রায় হাজারখানেক কর্মী সমর্থকদের নিয়ে বিশাল শোভাযাত্রা সহকারে পদত্যাগ করতে যাওয়ার মাধ্যমে ‘চেয়ারম্যান’ হিসেবে যে শেষ দিনেও প্রদীপ সরকার তাঁর শক্তি প্রদর্শন করলেন, তা বলাই বাহুল্য!