দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, খড়্গপুর, ২১ ডিসেম্বর: “দিলীপ দা আপনি যে সদস্যতা অভিযান কর্মসূচি করছেন, সেটা পার্টির পক্ষে না বিপক্ষে? কারণ, আপনি ওখানে মন্ডল কমিটিকে না জানিয়ে, পঞ্চায়েত, প্রধান কাউকে না জানিয়ে এই কর্মসূচিটা করছেন। কিছু TMC-র দালাল, যারা ভোটের সময় বিজেপি কর্মীদের হারানো চক্রান্ত করে; তাদের নিয়ে আপনি পার্টিটা করছেন। আমাদের বিপদের সময় আপনাকে ফোন করলেও পাওয়া যায় না!” ‘অন্তরালে’ থেকেই খোদ দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে এমন বিস্ফোরক অভিযোগ আনলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর ১নং ব্লকের গোপালী গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বিমল দাস ওরফে টিঙ্কু। সোমবার গোপালী অঞ্চলের সালুয়াতে দিলীপ ঘোষের সদস্যতা অভিযান কর্মসূচিকেই নিশানা করেছেন পুলিশের ভয়ে ‘আত্মগোপন’ করে থাকা বিজেপি নেতা তথা স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান বিমল দাস ওরফে টিঙ্কু। অভিযোগ, দলের কয়েকজন জেলা ও মণ্ডল নেতৃত্বকেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন টিঙ্কু। সোমবার সকালে কর্মসূচি শুরু হওয়ার আগে টিঙ্কুর হুঁশিয়ারি ছিল, “আমার গোপালী অঞ্চলে বেশি নেতাগিরি বরদাস্ত করব না! আমি ওখানে ফিরে যাই, তারপর দেখাচ্ছি।”
প্রসঙ্গত, মাসখানেক আগেই এই বিমল দাসের হোটেলে মধুচক্র চালানোর অভিযোগে হোটেলের ম্যানেজারকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। সেই থেকেই কার্যত এলাকাছাড়া খড়্গপুর ১নং ব্লকের গোপালী গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তথা এলাকার দাপুটে বিজেপি নেতা বিমল দাস ওরফে টিঙ্কু। এবার সেই টিঙ্কুর সঙ্গেই দিলীপ-অনুগামীদের কোন্দল প্রকাশ্যে এলো! প্রাক্তন সাংসদ দিলীপ ঘোষের সদস্যতা অভিযান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করেই সোমবার কোন্দল প্রকাশ্যে আসে। অভিযোগ, দিলীপের কর্মসূচির আগে একাধিক বিজেপি নেতার কাছে উড়ে আসে টিঙ্কুর হুঁশিয়ারি-বার্তা! টিঙ্কু বলেন, “আমি বিজেপি করার অপরাধে ঘরছাড়া। বুথ সভাপতির ঘরে পুলিশ। এলাকার প্রতিটা বিজেপি নেতার ঘরে পুলিশ। আর তোমরা ওই বিকাশ থাপা আর দীপঙ্কর দাসকে নিয়ে মস্তানি করছ আমার এলাকায়? আমি ফিরে যাই একবার, তারপর দেখাবো।”
রাজনৈতিক মহলের মতে, বিমল দাস ওরফে টিঙ্কু ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকেই মেদিনীপুর লোকসভার বিজেপি প্রার্থী তথা আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। টিঙ্কুর ‘লিজ’ দেওয়া হোটেলে পুলিশি অভিযানের সময়ও জেলা পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন অগ্নিমিত্রা। এবার সেই টিঙ্কুর বিরুদ্ধেই দিলীপ ঘনিষ্ঠ নেতাদের অভিযোগ, সোমবার গোপালী এলাকায় দিলীপ ঘোষের সদস্যতা অভিযান বানচাল করতে চাইছিলেন তিনি (টিঙ্কু)। তাঁর (টিঙ্কুর) অনুপস্থিতিতে এলাকায় সদস্যতা অভিযান কর্মসূচি সফল হোক, টিঙ্কু এমনটা চাইছিলেন না বলে অভিযোগ একাংশ বিজেপি নেতার। আর সেজন্যই রবিবার সন্ধ্যার পর এবং সোমবার সকালে এলাকার একাধিক বিজেপি নেতাকে ফোনে বা অডিও বার্তায় (যাচাই করেনি বেঙ্গল পোস্ট) টিঙ্কু হুমকি দেয় বলে অভিযোগ। এনিয়ে সোমবার সদস্যতা অভিযান কর্মসূচির মাঝেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দিলীপ ঘোষ বলেন, “কে টিঙ্কু? ওকে আমি বাড়ি বাড়ি প্রচার করে জিতিয়েছি। এলাকার অনেক কাজ করেছি। এখানকার মানুষ ওকে জিতিয়েছে। দল ওকে পঞ্চায়েত প্রধান করেছে। ও নিজের কাজটাই করুক। সংগঠনে বেশি মাথা ঘামাতে হবে না!” দিলীপের হুঁশিয়ারি, “যে নিজের এলাকাতেই ঢুকতে পারেনা, তার এত ধমকানি-চমকানি কিসের? আমাদের কর্মসূচিতে মন্ডল সভাপতি সহ স্থানীয় নেতৃত্বরা আছেন। ওরকম নেতা বিজেপিতে অনেক-আসে যায়!” এরপরই পাল্টা দিলীপ ঘোষের উদ্দেশ্যে একটি ভিডিও বার্তায় টিঙ্কু বলেন, “দিলীপ দা আপনি যে সদস্যতা অভিযান কর্মসূচি করছেন, সেটা পার্টির পক্ষে না বিপক্ষে? কারণ, আপনি ওখানে মন্ডল কমিটিকে না জানিয়ে, পঞ্চায়েত, প্রধান কাউকে না জানিয়ে এই কর্মসূচিটা করছেন। কিছু TMC-র দালাল, যারা ভোটের সময় বিজেপি কর্মীদের হারানো চক্রান্ত করে; তাদের নিয়ে আপনি কর্মসূচি করছেন! এখানে তাদের নিয়েই আপনি পার্টিটা করছেন। আমাদের বিপদের সময়ে আপনাকে বারবার ডাকলেও আপনি আসেননি। পুলিশ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা কেস দিয়েছে। পরিবার ছেড়ে আমি বাইরে আছি। তবু আপনি কোন সাহায্য করেননি! ফোনও ধরেননি।” অপরদিকে, বিজেপির এই কোন্দল প্রসঙ্গে মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সহ-সভাপতি তথা জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ বলেন, “বিজেপি মানেই কোন্দল, বিশৃঙ্খলা। গ্রেফতার হওয়ার ভয়ে পালিয়ে বেড়ানো একজন সামান্য নেতা যেভাবে দিলীপ ঘোষকে আক্রমণ করেছেন; তাতেই বোঝা যাচ্ছে বাংলাতে এই দলটার অস্তিত্ব আজ কোন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে!”