দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৮ এপ্রিল: সোমবার (৮ এপ্রিল) সাতসকালেই শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের ‘প্রাক্তন’ কাউন্সিলরের স্বামীর উপর দুষ্কৃতীদের হামলা-কে কেন্দ্র করে লোকসভা নির্বাচনের আগে ফের একবার উত্তেজনা ছড়াল ‘রেল শহর’ খড়্গপুরে! পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার (৮ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর শহরের জগন্নাথ মন্দির সংলগ্ন এলাকায় হামলার এই ঘটনাটি ঘটে। দুষ্কৃতীদের হামলায় গুরুতর জখম হন ১৫নং ওয়ার্ডের ‘প্রাক্তন’ তৃণমূল কংগ্রেস কাউন্সিলর অঞ্জনা সাঁকরে-র স্বামী রঞ্জিত কুমার সাঁকরে। পেশায় কেনা-বেচার কারবারী রঞ্জিতও তৃণমূল কংগ্রেসের সক্রিয় কর্মী বলে জানা যায়। এদিন সকালে মোটামুটিভাবে জনবহুল এলাকাতেই লোহার রড, হকি স্টিক প্রভৃতি দিয়ে তাঁর উপর হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ। এমনকি আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্য শূন্যে এক রাউন্ড গুলিও চালানো হয় বলে তাঁর অভিযোগ! গুরুতর জখম অবস্থায় উদ্ধার করে তাঁকে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে খড়্গপুর টাউন থানার পুলিশ।
খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালের এমার্জেন্সি ওয়ার্ডের বেডে এক প্রকার যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে রঞ্জিত অভিযোগ করেন, এদিন সকালে মেয়েকে স্কুলে ছেড়ে দিয়ে তিনি যখন ফিরছিলেন, জগন্নাথ মন্দির সংলগ্ন এলাকায় (গিরি ময়দান স্টেশনের অদূরে) এক যুবক এসে তাঁকে বাইক থামাতে বলেন। তিনি বাইক থামানোর সাথে সাথেই ৪-৫ জন দুষ্কৃতী ছুটে এসে লোহার রড, হকি স্টিক প্রভৃতি দিয়ে তাঁর উপর এলোপাথাড়ি আক্রমণ করে বলে অভিযোগ। এরপর তিনি বাইক থেকে পড়ে যান। তারপর শূন্যে এক রাউন্ড গুলি চালিয়ে দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ রঞ্জিতের। দ্রুত স্থানীয়দের সহায়তায় তাঁকে উদ্ধার করে মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে ছুটে আসেন তাঁর স্ত্রী তথা ১৫নং ওয়ার্ডের ‘প্রাক্তন’ কাউন্সিলর অঞ্জনা সাঁকরে। পৌঁছন খড়্গপুর টাউন থানার পুলিশ আধিকারিকরাও। তাঁরা রঞ্জিত-কে জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছেন বলে জানা গেছে। প্রসঙ্গত, ১৫নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর বান্টা মুরলিধর রাও কংগ্রেসের প্রতীকে জিতলেও, পরে তৃণমূলে যোগ দেন। তাঁর সঙ্গে ‘প্রাক্তন’ কাউন্সিলর অঞ্জনা-র ‘দ্বন্দ্ব’ রয়েছে বলে স্থানীয়দের দাবি। বান্টার কাছেই ২০২২ সালের পৌর নির্বাচনে অঞ্জনা পরাজিত হন। একসময় অঞ্জনা-র সঙ্গে রেলশহরের ‘ত্রাস’ বাসব রামবাবু ও তাঁর পরিবারের ঘনিষ্ঠতার কথাও রেল শহরের বাসিন্দাদের কাছে অজানা নয়। অঞ্জনাও ‘ভাইয়া’ সম্বোধন করে বাসব রামবাবু’র প্রতি বরাবর নিজের শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন ক্যামেরার সামনে।
উল্লেখ্য, কয়েক মাস আগেই শ্রীনু নাইডু খুনের মামলায় বাসব রাম বাবু সহ অভিযুক্তদের বেকসুর খালাস করেছে মেদিনীপুর জেলা আদালত। এদিনের হামলার সঙ্গে এই ধরনের কোনও বিষয়ের ‘যোগ’ রয়েছে কিনা, সেই সমস্ত বিষয়ও পুলিশের তরফে খতিয়ে দেখা হচ্ছ বলে জানা গেছে। অন্যদিকে, পেশায় কেনা-বেচার কারবারী রঞ্জিতের ব্যবসা-সম্পর্কিত শত্রুতার বিষয়ও এই হামলার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে বলে বিভিন্ন মহলের অনুমান। যদিও, রঞ্জিত দাবি করেছেন, তাঁর কোনও শত্রু নেই! দুষ্কৃতীদের তিনি চিনতে পারেননি বলেও জানিয়েছেন। এদিকে, লোকসভা নির্বাচনের ঠিক প্রাক্কালে ‘রেলশহর’ খড়্গপুরে এই ধরনের দুষ্কৃতী হামলা ঘিরে ফের একবার চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে শহরজুড়ে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোরও। বিজেপি-র জেলা মুখপাত্র অরূপ দাসের কটাক্ষ, “নির্বাচনের প্রাক্কালে শহরে আতঙ্ক সৃষ্টি করতেই ফের একবার দাঁত-নোখ বের করেছে দুষ্কৃতীরা। খড়্গপুর টাউন থানার অপদার্থ আইসি কি করছে? শাসকদলের তঁবেদারি করা আইসি-কে অবিলম্বে সরানোর জন্য আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানাচ্ছি।” অপরদিকে, জেলা তৃণমূলের সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, “পুলিশ-প্রশাসনের তৎপরতায় রেল শহর এখন অনেক শান্ত! আজ সকালে একটা ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি। মনে হয়না এর সঙ্গে রাজনীতি বা বড় কোনও বিষয় যুক্ত আছে বলে! তবে, ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। আশা করছি, দ্রুত দুষ্কৃতীরা ধরা পড়বে।”