দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৮ মার্চ: জুনের প্রচার-গাড়িতে তাঁর পাশেই ‘সদ্য’ তৃণমূলে যোগ দেওয়া অর্পিতা (রায় নায়েক)। বুধবার ভরদুপুরে তাই নিয়েই শহর মেদিনীপুরে ‘গণ্ডগোল’! দলের একদল যুব কর্মী ব্যানার গুটিয়ে বেরিয়ে যান ‘র্যালি’ থেকে। বুধবার (২৮ মার্চ) দুপুরে মেদিনীপুর লোকসভার তৃণমূল প্রার্থী তথা বিধায়ক জুন মালিয়ার রোড শো বা শোভাযাত্রা চলাকালীন ঘটনাটি ঘটে শহরের ১৪নং ওয়ার্ডের সাহেবপুকুর চক এলাকায়। বিক্ষুব্ধ ওই যুবকর্মীরা মেদিনীপুর পৌরসভার ১৪নং ওয়ার্ডের তৃণমূল সভাপতি বরুণ বোস এবং পৌর নির্বাচনে ‘নির্দল’ অর্পিতা-র কাছে ‘পরাজিত’ তৃণমূল প্রার্থী সঙ্ঘমিত্রা পালের ‘অনুগামী’ হিসেবেই পরিচিত। ‘নির্দল’ থেকে তৃণমূলে ফেরা স্থানীয় কাউন্সিলর অর্পিতা রায় নায়েকের বিরুদ্ধে তাঁদের নানা অভিযোগ! মেদিনীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন খানের নির্দেশে সেই অর্পিতা-ই যখন ‘হুড খোলা’ গাড়িতে উঠে প্রার্থীর (জুনের) পাশে দাঁড়ান; ঠিক তখনই ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল যুব সভাপতি সহ ৮-১০ জন যুবকর্মী র্যালির সামনে থেকে ব্যানার গুটিয়ে নিয়ে চলে যান। পৌরপ্রধান সৌমেন খান সহ অনেকেই তাঁদের আটকানোর চেষ্টা করেন, তবে কাজ হয়নি! হুড খোলা গাড়ির উপর থেকে সবটাই লক্ষ্য করেন বিধায়ক তথা তৃণমূল প্রার্থী জুন মালিয়া। কিছুক্ষণ পরে অবশ্য গাড়ি থেকে নেমে যান ১৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অর্পিতা রায় নায়েক।
এই বিষয়ে বিক্ষুব্ধ ওই যুবকর্মীরা বলেন, “আমরা প্রথম থেকেই দলের একনিষ্ঠ কর্মী। আর ওই নির্দল প্রার্থী (অর্পিতা রায় নায়েক) এবং ওনার স্বামী (বিশ্বেশ্বর নায়েক) বারবার তৃণমূলে আসেন, তারপর বেরিয়ে যান। পৌর নির্বাচনে নির্দল হিসেবে দাঁড়ানোয় অভিষেক ব্যানার্জির নির্দেশে ওদের বহিষ্কার করা হয়েছিল। তারপরও জানিনা, ওরা কিভাবে দলে যোগদান করল! সে যাই হোক, উনি আমাদের তৃণমূল দলকে এবং আমাদের প্রার্থীকে (সঙ্ঘমিত্রা পাল) গালাগালি করে ভোটে জিতেছিলেন। অথচ, আমাদের প্রার্থীকে (সঙ্ঘমিত্রা পালকে) কোনও কর্মসূচিতেই ডাকা হয়না। আর ওনাকে (অর্পিতা রায় নায়েককে) গাড়িতে তুলে নেওয়া হল। এটা আমাদের কাছে অপমান। আমাদের প্রার্থী (সঙ্ঘমিত্রা পাল), ওয়ার্ড সভাপতির (বরুণ বোস) অপমান! এই অপমান সহ্য করার চেয়ে মিছিল থেকে বেরিয়ে যাওয়াই ভালো মনে করে, আমরা বেরিয়ে গেছি।” অপরদিকে, পুরো ঘটনার কথা অস্বীকার করে, বুধবার বিকেলে অর্পিতাকে পাশে বসিয়ে মেদিনীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন খান জানিয়েছেন, “অর্পিতাকে নিয়ে কোনও সমস্যা হয়নি। অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবেই শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে।” যদিও, বিরোধীরা বিষয়টিকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি! জেলা বিজেপি-র মুখপাত্র অরূপ দাস বলেছেন, “পুরো ঘটনাই ঘটেছে ১০০ টা ক্যামেরার সামনে! তারপরও এই কোন্দল-কে অস্বীকার করার চেষ্টা করছেন তৃণমূলের পৌরপ্রধান। আসলে ওনার হাত ধরেই নির্দল প্রার্থী তৃণমূলে এসেছিলেন তো! আর আমরা যতটুকু জানি, তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ ওই যুবকর্মীরা শহর সভাপতি বিশ্বনাথ পাণ্ডবের অনুগামী। ফলে এই কোন্দল তো ওদের অনেক পুরানো! পুরো দলটাই তো কোন্দলে-কোন্দলে আর খাওয়াখায়ী করে ধ্বংস হওয়ার পথে। ওরা আবার সাধারণ মানুষের ভোট চাইতে বেরোয় কোন লজ্জায় কে জানে!” এদিকে, জুনের ওই শোভাযাত্রাতেই আদর্শ আচরণবিধি (Model Code of Conduct) লঙ্ঘন করে ‘শিশুদের’ ব্যবহার করা হয় বলে বিজেপি-র অভিযোগ। কন্যাশ্রী, সবুজ সাথী, লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের প্রচারে শিশুদের ব্যবহার করা নিয়ে বিজেপি নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থও হয়। যদিও, মিছিলের নেতৃত্বে থাকা মেদিনীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন খান বুধবার সন্ধ্যায় জানান, “মিছিলে শিশুরা ছিলোনা! কমিশনের শো-কজের জবাব দেওয়া হয়েছে।”
অন্যদিকে, দিলীপ-গড়ে প্রচারে ঝড় তুলেছেন আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক তথা মেদিনীপুর লোকসভা আসনের বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পালও। বুধবার রাতে ‘রেলশহর’ খড়্গপুরের কেদারনাথ মন্দিরে পুজো দেওয়ার পর অগ্নিমিত্রা মেদিনীপুরবাসীর উদ্দেশ্যে তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন, “আসানসোলের ভাই-বোনেরা আমাকে দিদাভাই বলে ডাকেন। কারণ, বাংলার এক ‘দিদি’র উপর সবাই বিরক্ত! তাই, আর নতুন করে দিদি আনতে চাইছেন না কেউ। আমি আপনাদের দিদিভাই হয়ে থাকতে চাই। আর এই ‘দিদিভাই’ আপনাদের একটা আশ্বাস, ভরসা দিতে চায়। খড়্গপুর শহরে যে সমস্ত এলাকায় রেল বস্তি আছে, সেখানে রেলকে আর কোনো উচ্ছেদ করতে দেওয়া হবেনা। এই দিদিভাই যতক্ষণ আছে, রেল সেখানে হাতও লাগাতে পারবেনা; এই ভরসা আমি আপনাদের দিতে চাই।” প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সম্প্রতি রেলশহরের ২৬ নং ওয়ার্ডে রেলের জায়গা থেকে ৮-৯টি পরিবারকে উচ্ছেদ করার চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ। তৃণমূলের খড়্গপুর শহর নেতৃত্বের আন্দোলনে তা আপাতত ভোটের আগে স্থগিত হয়ে গেলেও, আতঙ্কে আছেন রেলশহরের শহরের প্রায় ৮টি ওয়ার্ডের (৩৫-টির মধ্যে) বস্তিবাসীরা! সম্প্রতি, মার্চ মাসের শুরুতেই (৪ ও ৫ মার্চ) মেদিনীপুর সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হুঁশিয়ারি দিয়ে গেছেন রেলকে। তাঁরা যে কোনোভাবেই এই উচ্ছেদ মেনে নেবেন না; তাও জানিয়েছিলেন। এবার, ‘দিদি’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথেই ‘দিদিভাই’ অগ্নিমিত্রা পালও ভোটের আগে ‘আশ্বস্ত’ করার চেষ্টা করলেন ‘রেলশহর’ খড়্গপুরের রেল বস্তিতে বসবাসকারী ভোটারদের! যদিও, বিষয়টিকে ভোটের আগে ‘নাটক’ হিসেবে কটাক্ষ করেছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা। তাঁর বক্তব্য, “আসানসোল থেকে এসে এই সমস্ত নাটক করে কোনও লাভ হবেনা। সারা দেশে শুধু নয়, সারা বিশ্বেই ‘দিদি’ একটা ব্র্যান্ড! তাঁকে দূর থেকে ঈর্ষা করা যায়, কিন্তু তাঁর পর্যায়ে ওঠা যায়না। আর এখানে বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ থাকাকালীনই উচ্ছেদ সহ রেলের অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। কাজেই, তাঁরা এই সমস্ত মনভোলানো কথায় যে আর বিশ্বাস রাখবেনা, এটা নিশ্চিত!”