দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ৪ ডিসেম্বর: অতিমারি পরিস্থিতিতে বিশ্ব অর্থনীতির বেহাল দশা! তার মধ্যেই চমকে দিল খড়্গপুর আইআইটি (IIT Kharagpur)। ৩ দিনের ক্যাম্পাসিংয়ে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২০ জন পেলেন বছরে কোটি টাকা (কিংবা, তার থেকেও বেশি) বেতনের চাকরি! শুধু তাই নয়, চাকরি পেলেন রেকর্ড সংখ্যক পড়ুয়া। ১ থেকে ৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত খড়্গপুর আইআইটি-র অনলাইন ক্যাম্পাসিংয়ে বিভিন্ন সংস্থায় ১০০০ জনের বেশি (প্রায় ১৩০০) চাকরির সুযোগ পেয়েছেন। খড়্গপুর আইআইটি সূত্রে জানা গেছে, Qualcomm, Microsoft, Google, EXL Service, Goldman Sachs, Uber, JPMC ও American Express- এর মতো প্রথমসারির সংস্থা থেকে চাকরির অফার পেয়েছেন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়ারা। ১১০ টিরও বেশি কোম্পানি থেকে প্রথম তিন দিনে যথাক্রমে ২৩৯, ৩২৫ এবং ৩০০ টি চাকরির অফার এসেছে। এছাড়াও আছে, ৪০০’র বেশি প্রি-প্লেসমেন্ট অফার। সফটওয়্যার, অ্যানালিটিক্স, ফাইন্যান্স, কনসাল্টিং ও কোর ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মতো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে চাকরির অফার দেওয়া হয়েছে। সর্বোচ্চ বেতনেও তৈরি হয়েছে রেকর্ড। ২ জন পড়ুয়া বার্ষিক ২ কোটি টাকা বেতনের চাকরির অফার পেয়েছেন! আরও, ১৮ জন পেয়েছেন বছরে ১ কোটি (কিংবা, তার থেকেও বেশি) টাকা বেতনের চাকরি। এই তালিকায় আছেন মেদিনীপুরের এক ভূমিপুত্রও!

thebengalpost.net
খড়্গপুর আইআইটি (Kharagpur IIT) :

উল্লেখ্য যে, গুরগাঁওয়ের একটি শেয়ার ট্রেডিং সংস্থাই বার্ষিক ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা বেতনে নিয়োগ করেছে সাত জনকে। সেই তালিকায় আছেন অবিভক্ত মেদিনীপুরের ‘গর্ব’ শেখ ইজাজুর রহমান। বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের ভোগপুরের চাকদহ গ্রামে। ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডুয়াল ডিগ্রি কোর্সের অন্তিম বর্ষের এই ছাত্র সফটওয়্যার ডেভেলপার পদে চাকরি পেয়েছেন। কোটি টাকার চাকরি পাওয়া অন্যান্যদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন- অর্ণব মাইতি, যশরাজ গুপ্ত, আনশুল গোয়েল, যশপরাগ বুটালা, দেবর্ষি চন্দ্রকান্ত পটেল ও অর্চিত আগরওয়াল। এরা সকলেই কম্পিউটার সায়েন্সের পড়ুয়া। খড়্গপুর আইআইটির রেজিস্ট্রার তমাল নাথ এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “অতিমারি আবহে গত বছরেও বার্ষিক ১ কোটির উপরে বেতনে চাকরির সুযোগ ছিল না। তা এবার হয়েছে! করোনা পরিস্থিতিতে অনলাইন ক্লাস হলেও আমাদের পঠনপাঠনে কোনও ফাঁক ছিল না। তাতেই এমন সাফল্য।” এ প্রসঙ্গে খড়্গপুর আইআইটির কেরিয়ার ডেভেলপমেন্ট সেলের চেয়ারম্যান এ রাজাকুমারের ব্যাখ্যা, “এত দিন করোনার জন্য সংস্থাগুলি উচ্চ বেতনের চাকরির সুযোগ ধরে রেখেছিল। এখন সেই অবস্থা কাটছে।”

thebengalpost.net
ইজাজুর রহমান (পূর্ব মেদিনীপুর), ছবি- সংগৃহীত :

প্রসঙ্গত এও উল্লেখ্য যে, আইআইটি’র ক্যাম্পাসিংয়ে হাতে গোনা ২০-২২ জন পড়ুয়া বাদে বাকিরা বছরে গড়ে ৩০ লক্ষ টাকা বেতনের চাকরিই পান। সেখানে ১ কোটি-২ কোটি টাকার চাকরি! কিছুটা ‘মেঘ না চাইতেই জল’ পাওয়ার মতো অবস্থা। পূর্ব মেদিনীপুরের ইজাজুর জানিয়েছেন, “মনে রাখতে হবে, আইআইটি-তে পড়া মানেই কোটি টাকার চাকরি নয়! তাই হতাশ হলে চলবে না। আমিও ৩০ লক্ষের চাকরিই আশা করেছিলাম।” মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ইজাজুর অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত গ্রামেরই দেরিয়াচক শ্রী অরবিন্দ বিদ্যাপীঠে পড়েছেন। নবম থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত পড়েছেন তমলুকের হ্যামিল্টন হাইস্কুলে। ২০১৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়ে খড়্গপুর আইআইটিতে (IIT Kharagpur) ভর্তি হন। ইজাজুরের বাবা শেখ ওয়াসেফউর রহমান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। মা আনোয়ারা বেগম গৃহবধূ। ছেলের সাফল্যে শুধু তাঁরাই নয়, উদ্বেলিত সমগ্র মেদিনীপুর!